পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সাম্প্রতিক সময়ে সুশিক্ষা, মানব সম্পদ এবং শিক্ষার আধুনিকায়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো জাতীয় স্বার্থে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। শুধু পরিমাণগত বিস্তার নয়, গুণগতমানের শিক্ষা সুনিশ্চিতকরণ এখন সময়ের দাবি। বিশেষত কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির আগমন ও বিশ্বায়নের কারণে শিক্ষা এখন দেশ ও জাতির গন্ডি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীদেরও একই ধারায় ঐ অঙ্গনে প্রবেশাধিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে সৃজনশীলতা বিকাশের বিষয়টিও।
শিক্ষার গুণগত মান অনেক লক্ষ্যেই প্রবর্তীত। গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল প্রকাশের বিষয়টি, এসএসসি ও এইচএসসিতে কার্যকরী হওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও এটি সমন্বিতভাবে প্রয়োগের আয়োজন প্রায় সম্পন্ন। এসএসসি ও এইচএসসিতে গ্রেডিং পদ্ধতি কার্যকরী হওয়ায় একটি সুস্থ ধারার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীগণ স্ব স্ব মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি জাতির প্রত্যাশা পূরণ ও আশান্বিত হবার বিষয়। গ্রেডিং পদ্ধতির পাশাপাশি নকল প্রতিরোধে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান, মাধ্যমিক সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষাসমূহের সময়সীমা নির্ধারণ ও নির্দিষ্টকরণ, উপস্থিতির বিষয়ে সতর্কতা ইত্যাদি কার্যক্রম ইতিবাচক এবং ফলপ্রসূ হিসাবে বিবেচিত হয় এবং কিছুটা হলেও প্রাণসঞ্চার ঘটে। বোর্ড কর্তৃপক্ষের কিছু নির্দেশনাও সহায়ক হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আয়োজন করা হয় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। উদ্দেশ্য একটিই আগামী নাগরিকদের উৎসাহ যোগান, আত্মবিশ্বাসী করা। এসএসসি-এইচএসসিতে অর্জিত ফলাফলের ভিত্তিতে সরকারীভাবে বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডে মেধাবৃত্তি প্রদান করে আসছে যা সবসময় উদ্দীপক ও সহায়ক ভূমিকা রাখছে। উপরন্তু এটি শিক্ষার্থী-অভিভাবক সকলের কাছেই সম্মানজনক বৃত্তি হিসেবে বিবেচিত এবং এটি উচ্চ শিক্ষা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা এতই ব্যয়বহুল, অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষাকে পণ্য হিসাবে বলা হয়ে থাকে। এ কথা আমাদের সবার জানা যে, শিক্ষার ধারা বিশেষভাবে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী অবদান রাখছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। এসব পরিবার সন্তানকে সুশিক্ষিত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়াস চালায়। বাস্তবতা হলো, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকে মাঝপথে পড়াশোনার পাঠ চুকাতে হয় যা জাতির জন্য বিরাট ক্ষতি ও দুভার্গ্যরে বিষয়। একথা সবাই স্বীকার করেন যে, দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের উপযুক্তভাবে শিক্ষিত করে তুলতে পারলে এরা হয় পরিবারের সত্যিকারের সম্পদ। পরবর্তীতে এরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে পরিবারের দায়িত্ব নেয়, শিক্ষার প্রসার ঘটায়।
আশার কথা, এসব মেধাবীদের সমস্যা অনুধাবন করে, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখেই মেধাবীদের উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করতে বিভিন্ন বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, এনজিও, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘শিক্ষা ঋণ প্রকল্প’ চালু করেছে। শিক্ষাজীবন শেষে কর্মজীবনে প্রবেশের পর এ ঋণ নির্ধারিত নিয়মে পরিশোধযোগ্য। এ ধরণের সুযোগ ও উদ্যোগ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে। আমাদের দেশে এ উদ্যোগ আরো প্রসার লাভ করুক, শিক্ষার্থীরা নির্ভাবনায় পড়াশোনার সুযোগ লাভ করুক, এটাই কাম্য। শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি শিক্ষার মান উন্নয়নেও এটি পরোক্ষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। যেসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ঋণ দিবে তারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অগ্রসরতার বিষয়টি প্রাধান্য দিতে পারে। যেমন প্রতি বছর টাকা তোলার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত ফলাফল বিবরণী জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা। অবশ্যই এসব ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী যেন কোনভাবেই হয়রানীর শিকার না হয় কর্তৃপক্ষকে সে বিষয়টি দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ বা মঞ্জুরীকৃত ঋণের টাকা যেন সময়মতো শিক্ষার্থী বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে যায়, যাতে ঋণের টাকার জন্য পড়ার সময় নষ্ট করতে না হয়। শিক্ষা গ্রহণ শেষ করে ঋণ গ্রহিতাগণ ঋণ পরিশোধের ধারাটি শুধু শিক্ষা সহায়ক হিসেবে নয়, শিক্ষার অধিকার প্রাপ্তির সাথে দায়িত্ব পালনের বিষয়টিকে সুদৃঢ় করবে। একজন সুশিক্ষিত মানুষ তার বিবেকের স্বপক্ষে, নীতি ও মূল্যবোধ রক্ষায় দৃঢ়তার পরিচয় দিবে, এটা সমাজ আশা করে।
বাংলাদেশে ক্রমাগত উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলছে সম্পদের বৈষম্য। বেসরকারী হিসাব মতে, এখনও শতকরা ৪০ জন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এদের নিয়ে আমাদের আলাদা করে ভাবতে হবে, নিতে হবে প্রতিকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। অন্যথায়, আমাদের শিক্ষার হার, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সব হুমকির মুখে পড়তে বাধ্য। দরিদ্র শ্রেণী সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে চায়। তবে ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও দারিদ্রতার কারণে পাঠাতে পারে না। এদের সন্তানদের (প্রাথমিক) শিক্ষার আওতায় আনা প্রয়োজন। সাধারণত দেখা যায়, যেখানে বস্তি গড়ে উঠে সেখানে শিক্ষার সুযোগ থাকে না। বস্তিবাসীদের অধিকাংশই নিরক্ষর। সন্তানকে লেখাপড়ায় সাহায্য করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে সাধারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এদের নাম ধরে রাখা সম্ভব হয় না। এছাড়া পরিবেশ অস্বাস্থ্যকরসহ আরো অনেক সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান অর্থাৎ বর্তমানে যারা বস্তিতে রয়েছে, তাদের সন্তানদের শিক্ষার আওতায় আনা এবং গ্রামের ভিটেমাটি ছেড়ে বস্তিবাসী হবার স্রোত বন্ধ করতে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। দারিদ্র্য নিরসনে দরিদ্রদের শক্তি ও সামর্থ্যকে কাজে লাগাতে হবে। অর্থায়ন-প্রশিক্ষণ, নিবিড় পর্যবেক্ষণ, সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। আমাদের বিভিন্ন শিল্প-কারখানা উপশহর এলাকায় স্থানান্তর করে শহরগুলোর দূষণের হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকারীভাবে চিন্তা ভাবনা চলছে। কারখানা মালিকদের বাধ্যতামূলকভাবে শ্রমজীবী মানুষের সন্তানদের জন্য দিবাযত্ম কেন্দ্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। শিক্ষার সুযোগ অবারিত করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।