পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা সীমান্তে একজন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী-বিএসএফ। গত শনিবার এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। ক’দিন আগে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী সীমান্তে বিএসএফ দুই বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে হত্যা করে। গত ১৪ জুলাই একই জেলার লোহাকুচি সীমান্তে আরেক বাংলাদেশি বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হয়। অকারণে ও উপেক্ষাযোগ্য কারণে গুলি করে বাংলাদেশি হত্যা বিএসএফ’র রীতিমত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে সবচেয়ে বিপজজনক সীমান্ত হিসেবে মনে করা হয়। এর কারণ, বিএসএফ’র বেপরোয়া আচরণ ও ভূমিকা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন মন্তব্যও করা হয়েছে যে, বিএসএফ’র সদস্যরা তাদের টার্গেট প্রাকটিসের নিশানা হিসাবে বাংলাদেশিদের ব্যবহার করছে। বিএসএফ’র হানাদারী তৎপরতায় সীমান্তবর্তী বাংলাদেশি নাগরিকদের জান-মাল, ইজ্জত-সম্মানের এতটুকু নিরাপত্তা নেই। তারা বিএসএফ’র সন্ত্রাসের ভয়ে সব সময় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করা এবং হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনী পর্যায় ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতের তরফে বারবারই এই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না এবং হত্যাকান্ড শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতি প্রতিপালনে ভারত কোনো সদিচ্ছার পরিচয় দেয়নি। তথ্য-পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত দু’ দশকে বিএসএফ’র হাতে ১ হাজার ২৩৭ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে ২০২০ সালে বিএসএফ ৪৮ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। একই সময়ে ৪৮ জনকে তুলে নিয়ে গেছে, যাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে বিএসএফ’র হাতে নিহত হয়েছে ৪৩ জন। বাংলাদেশিদের জীবন কি এতই সস্তা যে, বিএসএফ যখন তখন ইচ্ছেমত তা নিয়ে নেবে?
ভারতের দেয়া প্রতিশ্রুতি যে কার্যত প্রতারণায় পর্যবসিত হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অস্বাভাবিক নয়। দু’ দেশের সরকারের তরফে একই দাবি করা হয়, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিশ্বে রোল মডেল। শুধু তাই নয়, এ দাবিও করা হয়, দু’ দেশের সম্পর্ক এযাবৎ কালের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত, সবচেয়ে হৃদ্য। তারপরও সীমান্তে এই নাজুক পরিস্থিতি, এই আগ্রাসন, এই লাগাতার হত্যাকান্ড কেন? একাংশ পর্যবেক্ষকের মতে, সরকারের অনুসৃত নীতি-ব্যবস্থার মধ্যেই এর কারণ নিহিত রয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের মতে, সরকারের ভারততোষণমূলক নতজানু নীতির কারণেই সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। স্মরণ করা যেতে পারে, বর্তমান সরকারের আমলে ভারত তার সমস্ত চাওয়া পূরণ করে নিয়েছে। যা চেয়েছে, আমাদের সরকার তা বিনা শর্তে, বিনা বিনিময়ে দিয়ে দিয়েছে। প্রতিবেশীর চাহিদা এভাবে পূরণ করার নজির বিশ্বে বিরল। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত শুধু বাংলাদেশের আছে, এমন নয়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়াও কয়েকটি দেশের সীমান্ত রয়েছে। অথচ, ওইসব দেশের সীমান্ত শান্ত ও স্থিতিশীল। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ওই সীমান্তগুলোতে গুলি চালায় না, মানুষ হত্যা করে না, অনুপ্রবেশ করে না এবং লুটপাট করে না। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন, তার একটা কারণ এই হতে পারে যে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নাগরিকদের প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা ভারতের তথা বিএসএফ’র নেই। পাকিস্তান সীমান্তে কিংবা চীন সীমান্তে মাঝে মধ্যে উত্তেজনা, গোলাগুলি, এমন কি হতাহতের ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। অবশ্য এটা কখনোই একতরফা হয় না। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী পাকিস্তান কিংবা চীনের সীমান্তরক্ষীবাহিনীকে সমীহ করে, ভয় পায়। সে কারণে সব সময় সংযত থাকে, সংঘাত এড়িয়ে চলে। পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিএসএফ’র চন্ডনীতির পেছনে বাংলাদেশকে মূল্য না দেয়া বা দুর্বল ভাবার ভারতীয় নীতি-মনোভাবই দায়ী। কথায় বলে, বিড়াল নরম মাটিতেই পা আঁচড়ায়।
সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলার নামান্তর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ভারতের এতটুকু সম্মান ও শ্রদ্ধা থাকলে বিএসএফ’র বাংলাদেশিদের ওপর গুলি চালানোর এরূপ স্পর্ধা কখনোই হতো না। সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ এবং সীমান্ত নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। দেশে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী আছে। স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ তো আছেই। তাদের সবার কর্তব্য হলো, যে-কোনো মূল্যে সার্বভৌমত্ব ও নাগরিক নিরাপত্তা সুরক্ষাচাদরে ঢেকে রাখা। সীমান্ত প্রহরী হিসেবে বিজিবি দায়িত্বে থাকলেও তার প্রশিক্ষণ ও অফিসার সেনাবাহিনীরই। সীমান্ত প্রতিরক্ষার প্রকৃত দায়িত্ব সেনাবাহিনীর ওপরই ন্যস্ত। যে মুহূর্তে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশি হত্যার বিষয়ে আমরা এ নিবন্ধ লিখছি, তখন আমাদের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ ৩ দিনের সফরে ভারতে রয়েছেন। তিনি সফরকালে বিভিন্ন পর্যায়ে সাক্ষাৎকার ও আলাপ-আলোচনা করবেন। আমরা আশা করি, আলোচনায় সীমান্ত পরিস্থিতির বিষয়টিও তিনি তুলবেন। অন্যদিকে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিষয়টির প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সীমান্তকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ করতে হবে, এটাই শেষ কথা। এ ব্যাপারে আর কোনো ছাড় দেয়া যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।