Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বস্তির জয়ে ছয়ে বাংলাদেশ

অবশেষে মিরপুরে রানের দেখা বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৪১/৬ নিউজিল্যান্ড : ২০ ওভারে ১৩৭/৫ ফল : বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী

ইমরান মাহমুদ, মিরপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ম্যাচটা টি-টোয়েন্টি। কিন্তু যে উইকেটে খেলা হচ্ছে সেটি টি-টোয়েন্টির জন্য মোটেই আদর্শ নয়। এর মানে আবার এটাও নয় যে রান করা একদমই অসম্ভব। গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ দল দেখিয়েছে মন্থর উইকেটে কীভাবে রান করতে হয়! টসে জিতে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১৪১ রান করে মাহমুদউল্লাহর দল। জবাব দিতে নেমে নিউজিল্যান্ডও পেয়েছে রানের দেখা। তবে দেখা পায়নি জয়ের। অধিনায়ক টম লাথামের ফিফটিতে জয়ের খুব কাছে গিয়েও ১৩৭ রানে থামে ৫ উইকেট হারানো সফরকারীরা। ৪ রানের এই জয়ে ৫ ম্যাচ সিরিজে ২-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

স্পিন মঞ্চে প্রথম ম্যাচে স্রফে ৬০ রানেই গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ জিতে যায় ৭ উইকেট ও ৩০ বল হাতে রেখে। ঐ জয়ে টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ের সপ্তম স্থানে উঠেছিল বাংলাদেশ। গতকালের রোমাঞ্চকর জয়ে টাইগাররা কিউইদের বিপক্ষে ব্যবধান বাড়ানোর পাশাপাশি র‌্যাংকিংয়ে টেবিলে উঠে এলো ছয় নম্বরে।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটা একদমই ভালো হচ্ছিল না। মিরপুরের উইকেট এমনিতেই টি-টোয়েন্টির জন্য আদর্শ নয়। আবহাওয়ার জন্য উইকেট হয়ে গেছে আরও কঠিন। তবে গতকাল পাওয়া গেল সেই কাক্সিক্ষত পাওয়ার প্লের রান। লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম মিলে ওপেনিং জুটিতে যোগ করেছে ৫৯ রান। যার সিংহভাগটা এসেছে লিটনের ব্যাট থেকে। ২৯ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৩ রান করেন লিটন। ভালো শুরু পাওয়ার কারণেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মন্থর উইকেটেও ভালো একটা স্কোর গড়তে পারে বাংলাদেশ।

লিটন অবশ্য প্রতিটা রানের জন্য কিউই অলরাউন্ডার কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে ধন্যবাদ দিতে পারেন। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই কোল ম্যাকনকির বলে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন লিটন। কিন্তু স্কয়ার লেগে থাকা ডি গ্র্যান্ডহোম সহজ ক্যাচটি ধরতে পারেননি। পরের ওভারেই বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেলের ওপর চড়াও হন লিটন, পর পর দুই বলে দুটি চার মারেন তিনি। আরেক প্রান্তে বরাবরের মতোই সতর্ক ছিলেন নাঈম। দুজনের ‘ওয়ানডে’ ধাঁচের ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৬ রান রেটে ৩৬ রান তোলে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টির মারমুখী ক্রিকেট থেকে ভিন্ন হলেও মিরপুরের উইকেটের জন্য এমন একটা শুরুই আদর্শ ছিল। যার সুবিধাটা নিতে পেরেছে বাংলাদেশ দলের বাকি ব্যাটসম্যানরা। দশম ওভারে প্যাটেলকে ছক্কা মারার পরের বলে লিটন আউট হন, পরের বলে মুশফিকুর রহিমও স্টাম্পিংয়ের শিকার হলেও রানের গতি কমেনি। ক্রিজে এসেই সাকিব আল হাসান খেলতে পেরেছেন হাত খুলে। ৭ বল খেলে ২ চারে ১২ রান করে আউট হন সাকিব।

অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও ব্যাটের মাঝখানটা খুঁজে নেন দ্রুতই। ওপেনার নাঈমের সঙ্গে ২৯ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৩৪ রান যোগ করেন তিনি। পুরো ইনিংস জুড়ে মন্থর ব্যাটিং করে যাওয়া নাঈম আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করে ফিরেছেন আউট হয়ে। ১৬তম ওভারে রচিন রবীন্দ্রর বলে ছক্কা মারার চেষ্টায় বাউন্ডারিতে ক্যাচ দেন তিনি। পরের ওভারেই এজাজের বাঁহাতি স্পিনে মারার চেষ্টায় আউট হন ছন্দে থাকা আফিফ হোসেন। বাংলাদেশ দলের রান তখন ৫ উইকেটে ১০৯। সেখান থেকে বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে ১৪১ রানে নিয়ে যান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও নুরুল হাসান। দুজনে মিলে ২১ বলে ৩২ রান যোগ করেন। মাহমুদউল্লাহ ৩২ বল খেলে ৫টি চার মেরে অপরাজিত ছিলেন ৩৭ রানে। নুরুলের ব্যাট থেকে আসে ৮ বলে অপরাজিত ১৩ রান।
নিউজিল্যান্ড পেসারদের কিছু কৌশলগত ভুলও বাংলাদেশের রান বাড়তে সাহায্য করেছে। হামিশ বেনেট, ডগ ব্রেসওয়েল ও বেন সিয়ার্সরা বল করেছে গতি দিয়ে, যা ব্যবহার করে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা বেশ কিছু বাউন্ডারি আদায় করে নিয়েছে।

বড় লক্ষ্য তাড়ায় নিউজিল্যান্ডের শুরুটা হয় বিভিষিকাময়। বল হাতে শুরুটা করে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান, পরে মেহেদি হাসান আর নাসুম আহমেদের ঘূর্ণিতে শুরু থেকেই টালমাটাল ছিল কিউই ব্যাটিং লাইনআপ। এই তিনজনে একে একে ফেরালেন ৫ কিউই ব্যাটসম্যানকে। নিজের প্রথম ওভারে হাত ঘুরিয়েই সাফল্য পান সাকিব। আগের বলে ছক্কার শোধ তোলেন উইকেট নিয়ে। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের শর্ট বলে হাঁটু গেড়ে মারতে গিয়ে এবার আর পারেন নি রাচিন রবীন্দ্র, সোজা আঘাত হনে স্টাম্পে। ৯ বলে ১০ রানে ফেরে এই কিউই ওপেনার।

পরপর দুই ওভারে দুই ওপেনারকে হারায় নিউজিল্যান্ড। অহেতুক ঝুঁকি নিয়ে স্টাম্পড হলেন টম ব্লান্ডেল। ৮ বলে ১ চারে ৬ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। অফ স্পিনার মেহেদির বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন ব্লান্ডল। স্পিন আশা করে ব্যাট চালিয়েছিলেন কিন্তু বল যায় সোজা। কিপার নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে বল জমে যেতে দেখে আর ফেরার চেষ্টাই করেননি। সাকিবের দ্বিতীয় শিকার উইল ইয়ং (২২), ডি গ্র্যান্ডহোমকে (৮) নাসুম আর হেনরি নিকোলসকে (৬) নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন মেহেদী। একপাশ আগলে রেখে দায়িত্বশীল ফিফটিতে দলকে সম্মানজনক অবস্থানে নিতে পারলেও জয়ের সুবাস এনে দিতে পারেননি লাথাম। কিউই অধিনায়ক অপরাজিত ছিলেন ৬৭ রানে। ১৫ রানে ম্যাককোঞ্চি। শেষ দিকে রানের চাকা দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টি-টোয়েন্টি

১৪ নভেম্বর, ২০২২
৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ