Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইলিশ সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইলিশ নিয়ে গর্বের আমাদের শেষ নেই। গত বছরগুলোতে ইলিশ সাধারণ মানুষের কাছে অনেকটা দুর্লভ হয়ে উঠেছিল। এবছর এ চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এবছর প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার সচিত্র প্রতিবেদন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। অন্য যে কোন বছরের তুলনায় এবার ব্যাপকহারে ইলিশ ধরা পড়ছে। দামও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে। এই অধিক উৎপাদনে এখন আবার সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধড়া পড়ার প্রেক্ষিতে যথেষ্ট সংখ্যক ক্রেতা না পাওয়া এবং সংরক্ষণের উপকরণ লবণ ও বরফের মূল্যবৃদ্ধির কারণে নষ্ট হচ্ছে এই রূপালী সম্পদ। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, সিতাকু-ের কুমিরা ঘাটে সমুদ্র এবং সংলগ্ন ক্যানেলে শত শত মরা ইলিশ দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্থানীয় কিছ ুঅসাধু ব্যবসায়ীর মওকা বুঝে বরফ ও লবণের মূল্য বৃদ্ধি করার ফলেই পরিস্থিতি এত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। যেখানে ৮০ কেজির একটি বরফ খ-ের দাম সাধারণভাবে ৮০ টাকা হবার কথা সেখানে গত বোরবার কিছু ব্যবসায়ী এক খ- বরফের দাম হেঁকেছে ১২শ’ টাকা। অন্যদিকে লবণের দাম প্রতি কেজিতে ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জেলেরা মনে করেন এ এলাকায় একটি কোল্ডস্টোরেজ থাকলে এবছর মৎস্যজীবীরা প্রত্যেকেই অন্তত ২ লাখ টাকা করে আয় করতে পারত।
বিশ্ব জুড়ে ইলিশের যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে তার ৭০ ভাগই সরবরাহ করে বাংলাদেশ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশের জিডিপি’র ২ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে। দেশের ২৭ লাখ জেলে এই রূপালী মাছের অর্থনীতির সাথে জড়িত। প্রতিবছরই অর্থনীতির এই খাতটি বড় হচ্ছে। গত এক যুগে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে এক সময়ে ইলিশের সংকট দেখা দেয়ার প্রেক্ষিতে বিএনপি সরকারের আমলে ডিমের মওসুমে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জাটকা ধরা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ রয়েছে। সরকারের নীতি বাস্তবায়নে ধারাবাহিকতার সুফল দেখা যাচ্ছে। ইলিশ সংরক্ষণে কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, জাটকা নিধন এবং মোবাইল কোর্টের অভিযানের ফলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু বেশি পরিমাণ ইলিশ পাওয়া গিয়েছে সেটাই একমাত্র সুখবর নয় বরং বর্তমানে দেশে ইলিশের আকার ও আকৃতিও বড় হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ইলিশের জন্য অভয়াশ্রম ঘোষণা, জাটকা নিধন বন্ধের উদ্যোগÑ এগুলোতো আছেই তার পাশাপাশি এবছর প্রাকৃতিকভাবেই ইলিশের প্রাচুর্য দেখা দিয়েছে। এ কারণে এবছরটিকে ইলিশের বছর হিসেবে দেখছেন গবেষকরা। স্বাভাবিকভাবেই গত কিছুদিন ধরে বিশেষকরে কোরবানীর ঈদের পর থেকে বাজারে ইলিশের দাম অনেক কমেছে। রাজধানীতে ক্রেতাও বেড়েছে। একথাও ঠিক অনেকদিন ধরে দেশের সাধারণ মানুষের মনে ইলিশের প্রতি যে গভীর আগ্রহের জন্ম হয়েছিল অর্থাৎ দামবেশি থাকাতে কেবল চোখের ক্ষুধাই মেটাতো এবছর অন্তত সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। হাটে-বাজারে পথে-ঘাটে সর্বত্রই ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এটা দেশের মৎস্য চাহিদার বিবেচনাতেও অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র সংরক্ষণের উপকরণের কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধির কারণে ইলিশ সংরক্ষণ করতে না পারা দুঃখজনক। কেন এবং কি কারণে এটা ঘটতে পারল সেটা অবশ্যই খুঁজে দেখা দরকার। যে স্বার্থান্বেষী মহল এই কারসাজির সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
এবার ইলিশ উৎপাদন যে বাড়বে তা বেশ আগে থেকেই সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বাস্তবেও তা দেখা গেছে। জেলেদের দেয়া পরিসংখ্যানই বলছে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের মাছ সংরক্ষণের ব্যাপারে পূর্ব থেকেই সতর্ক ও যতœবান হওয়া প্রয়োজন ছিল। এ না নেয়ার ফলে অত্যন্ত মূল্যবান এ সম্পদ বিনষ্ট হতে চলেছে। এ ধরনের উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকার একদিকে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কঠোর পদক্ষেপ নেবে, অন্যদিকে উৎপাদিত ইলিশ সংরক্ষণ করা হবে না, তা বরদাশত করা যায় না। অসাধু চক্র জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে প্রধান মৎস্য সম্পদ ইলিশ সংরক্ষণে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হিমাগার স্থাপন করতে হবে। ডিমওয়ালা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণে গৃহীত সরকারী উদ্যোগগুলো আরো কার্যকর ভাবে এগিয়ে নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইলিশ সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
আরও পড়ুন