চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আমাদের জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। জীবনজুড়ে এ দুয়ের আগমন অনস্বীকার্য। জীবনের কোলাহল যেখানে সুখ-দুঃখের উপস্থিতিও সেখানে। কখনো আমাদের জীবনবৃক্ষ সুখের সুনির্মল বাতাসে আন্দোলিত হয়। ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে যায়। আবার কখনো দুঃখের ঝড়ো হাওয়ায় সে বৃক্ষটি নুইয়ে পড়ে। দুমড়ে মুচড়ে যায়। কখনো অনিশ্চয়তা আর নিরাপত্তাহীনতার দোলাচলে দুলতে থাকে আমাদের জীবনতরী। হতাশায় ছেয়ে যায় আমাদের হৃদয়াকাশ। অধরা সুখপাখিটা যেন কোন সুদূরে হারিয়ে যায়। জীবনপাতার এ কঠিন অধ্যায়ে আমাদের অনেকে ‘ভিন্নপথে’ পা বাড়ায়। সুখের বদলে মরিচিকার পিছনে ছুটে বেড়ায়। অধরা সুখ আর ধরা দেয় না।
পবিত্র ও নিরাপদ জীবন লাভে কুরআন সুন্নাহর গুরুত্বপূর্ণ ও অতি ফলপ্রসূ একটি নির্দেশনা হচ্ছে ‘ইস্তেগফার’। ইস্তেগফার মানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহর কাছে নিজের অসহায়ত্ব,নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করা।
বাস্তবিকপক্ষে প্রতিটি মানুষই দূর্বল।অসহায়ত্বের চাদরে মোড়ানো মানবজীবন। চিরসত্য এ কথাটিই ইরশাদ হয়েছে পবিত্র কুরআনুল করীমে: আর মানুষকে দূর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। (সূরা নিসা:২৮)। তাই দেখা যায় দুর্বল মানুষ প্রায়শ:ই প্রবৃত্তির তাড়নায় নানা গোনাহে জড়িয়ে নিজের জীবনকে অশান্তির দাবানলে ফেলে দেয়।নিজেকে ভয়াবহ শাস্তির উপযুক্ত করে নেয়। দয়াময় আল্লাহ তায়ালা তার দূর্বল অসহায় বান্দাদেরকে একটি অনন্য উপায় বাতলে দিয়েছেন। অশান্তির দাবানল থেকে বেঁচে সুখের নির্মল উদ্যানে বিচরনের একটি অব্যর্থ পাথেয় প্রদান করেছেন। আর সেটি হচ্ছে ইস্তেগফার। ইরশাদ হয়েছে, আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তাঁর দিকেই ফিরে যাও। তিনি তোমাদেরকে এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত উত্তম জীবন উপভোগ করতে দিবেন। এবং যে কেউ বেশি আমল করবে তাকে নিজের পক্ষ থেকে বেশী প্রতিদান দিবেন। (সূরা হুদ :৩)। উল্লেখিত আয়াতে ইস্তেগফারের বিনিময়ে দুনিয়াতে উত্তম জীবন তথা নিরাপদ সুখময় জীবনলাভের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
ইস্তেগফারকারীকে আল্লাহ তায়ালা আযাব থেকে রক্ষা করবেন। ইরশাদ হয়েছে, এবং (হে নবী!) আল্লাহ এমন নন যে, তুমি তাদের মধ্যে বর্তমান থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এমনও নন যে, তারা ইস্তেগফারে রত থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দিবেন। (সূরা আনফাল : ৩৩)।
ইস্তেগফারের মাধ্যমে ধনসম্পদে সমৃদ্ধি আসে। সন্তান সন্ততিতে বরকত হয়। সুখময় নিরাপদ জীবনলাভের তাওফিক হয়। ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর আমি তাদেরকে বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ইস্তেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চিতভাবে যেন তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের উপর প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে উন্নতি দান করবেন। এবং তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করবেন উদ্যান আর তোমাদের জন্যে নদ-নদীর ব্যবস্থা করে দিবেন। (সূরা নূহ: ১০-১২)
মানবেতিহাসের সবচেয়ে সফল ও পবিত্র মানুষ হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র অভ্যাস ছিলো বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। হৃদয় খুলে প্রভুর দরবারে নিজের দীনতা হীনতা প্রকাশে সদা তৎপর থাকতেন তিনি। হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহর কসম!! আমি দৈনিক সত্তুর বারেরও অধিক আল্লাহ তায়ালার কাছে ইস্তেগফার করি ও তাঁর অভিমুখি হই। (সহীহ বুখারী :১১/৬৩০৭, জামে তিরমিযী: ৫/৩২৫৭, মুসনাদে আহমাদ :২/২৮২,৩৪১)।
ইস্তেগফারের মাধ্যমে বিপদাপদ দূর হয়। সংকট নিরসন হয়। আয় উপার্জনে প্রভূত বরকত নসীব হয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি বেশী বেশী ইস্তেগফার করে আল্লাহ তায়ালা তার সকল সংকীর্ণতা দূর করে দেন। দুশ্চিন্তা-বিপদাপদ দূরীভূত করে দেন। আল্লাহ এমন জায়গা থেকে তার রিযকের ব্যবস্থা করে দেন যে, যে কল্পনাও করতে পারে না। (সুনানে আবু দাউদ)। আজ পৃথিবীর সর্বত্রই সংকট আর সংকট। ব্যক্তিগত সংকট। পারিবারিক টানাপড়েন। বৈশ্বিক বিপর্যয়। এক কথায় সংকট আর বিপদাপদের ঝড়ো হাওয়ায় প্রতিটি জনপদ আজ বিধ্বস্ত। এক কভিড ১৯ করোনা ভাইরাস পুরো পৃথিবীটাকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলছে। তাই আসুন আমরা সকলেই ইস্তেগফার করি। আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রতিনিয়ত নিজেদের দীনতা হীনতা পেশ করি।আল্লাহ তায়ালার অভিমুখি হই। নিরাপদ সুখময় জীবন লাভ করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।