পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ এ জন্য যে, তিনি সত্যকে দ্বিধাহীন চিত্তে, অকুণ্ঠ ভাষায় প্রকাশ করেছেন। আফগানিস্তানে তালেবান কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর এ দেশের কিছু লোকের প্রতিক্রিয়া আমাদের বিস্মিত করে। তারা বাংলাদেশে তালেবান আছে, জঙ্গী আছে বলে প্রচার করতে থাকে। কেউ কেউ এমন কথাও বলে, বাংলাদেশ থেকে কিছু লোক আফগানিস্তানে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় গত শনিবার জানান, বাংলাদেশে কোনো তালেবান নেই, জঙ্গীও নেই। তার ভাষায়, এখানে কিছু অরাজকতা সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসী আছে, যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের সেই অরাজকতা সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই। বাংলাদেশের কিছু লোকের আফগানিস্তানে যাওয়া কিংবা আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসা প্রসঙ্গে ক’দিন আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা অমূলক। প্রশ্ন করেন: বিমান চলাচল বন্ধ, তারা কি তবে হেঁটে আফগানিস্তান গেছে? তিনি বলেন, সেখান থেকে আসার ব্যাপারটিও অসম্ভবপর। বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তানের দূরত্ব ১ হাজার মাইল। এর মধ্যে অন্য দু’টি দেশও রয়েছে। আমাদের দেশে এক শ্রেণীর ইসলাম বিমুখ, তথাকথিত বাম ও ধর্ম নিরপেক্ষ লোক আছে, যারা ইসলামপন্থী লোকদের পছন্দ করে না। তারা সুযোগ পেলেই তাদের ইসলামী জঙ্গী বলে অভিহিত করে। অথচ, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ইসলামের অনুসারী, সেই হিসেবে তারা সবাই ইসলামপন্থী। তারা কোনো কালেই চরমপন্থা, উগ্রবাদ পছন্দ করেনি, এখনো করে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের ইসলামী মনোভাবসম্পন্ন লোকেরা কখনোই জঙ্গীবাদ ও উগ্রবাদের সমর্থন করেনি। আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়নি, পছন্দ করেনি। বলা বাহুল্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সত্যতার প্রমাণ আমরা অতীতের বিভিন্ন ঘটনায় প্রত্যক্ষ করেছি। এক যোগে সারাদেশে বোমা হামলার ঘটনায় কিংবা হোলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় দেখা গেছে, দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখসহ ইসলামী দল, সংগঠন ও ইসলামী জনতাই সর্বাগ্রে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই যে-কোনো চরমপন্থা বা উগ্রপন্থার বিরোধী। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, এক সময় এদেশে সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছিল। শ্রেণীশত্রু খতমের রাজনীতি চালু করার তৎপরতা চলেছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা ও তৎপরতা সফল হয়নি। হয়তো স্মরণ আছে অনেকের, আফগানিস্তানে তথাকথিত সোভিয়েত ইউনিয়নের প্ররোচণা ও সহায়তায় সোভিয়েতপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এদেশের কিছু লোক আফগান স্টাইলে বিপ্লব করার স্বপ্ন দেখেছিল। সে স্বপ্নও সফল হয়নি। কারণ একটাই, জনসমর্থনের অভাব। জনগণের সমর্থন না থাকলে কোনো দেশেই কোনো বিপ্লব, পরিবর্তন বা শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। দীর্ঘ ২০ বছরের লাগাতার যুদ্ধে বিদেশি আগ্রাসী শক্তির পরাজয় নিশ্চিত করার মধ্যদিয়ে তালেবান পুনরায় আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। তাদের প্রতি জনগণের সক্রিয় সমর্থন না থাকলে এতদিন যুদ্ধ চালানো এবং এই নজিরবিহীন বিজয় অর্জন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু কোনো ধরনের উগ্রবাদ-জঙ্গীবাদ সমর্থন করে না, সুতরাং এ ধরনের কোনো কিছুই এদেশে প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নেই। এই সঙ্গে একথাও মনে রাখতে হবে, কোনো মতবাদ, বিপ্লব বা শাসন হুবহু আমদানি বা রফতানি করা যায় না। এটা আমদানি-রফতানির বিষয় নয়। ধর্ম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ইত্যাদি যে কোনো দেশের জনজীবন, শাসন প্রভৃতি নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের দেশ কীভাবে চলবে, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা আমাদের দেশের মানুষের। কাজেই, আমাদের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আফগানিস্তানে তালেবান নিয়ন্ত্রণ কায়েমের পর বাংলাদেশ যথাযথ অবস্থানেই রয়েছে। তার মতামত ও প্রতিক্রিয়ায় সেটা প্রতিফলিত।
আফগানিস্তান বাংলাদেশের ভ্রাত্বপ্রতীম দেশ। বাংলাদেশের যেমন ৯২ শতাংশের মত মানুষ মুসলমান তেমনি আফগানিস্তানে ৯৯ শতাংশের বেশি মানুষ মুসলমান। দু’ দেশ ইসলামের ভাতৃবন্ধনে আবদ্ধ। তাছাড়া ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতির দিক থেকেও দু’ দেশ দূরবর্তী নয়। তারপরও সেখানে যা হচ্ছে তা একান্তই তার নিজস্ব ব্যাপার। আর আমাদের এখানে যা কিছু ঘটছে বা ঘটুক তা আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। বাংলাদেশের কাছে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাব দিয়েছিল, তার আফগানিস্তানের কিছু বন্ধুকে আশ্রয় দিতে। বাংলাদেশ যথাযথ কূটনৈতিক সৌজন্য প্রদর্শন করে ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। বাস্তবকারণেই বাংলাদেশের পক্ষে আফগানদের আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়। বিপুল জনসংখ্যার এই ক্ষুদ্র দেশে আগে থেকেই রয়েছে ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের দেশে এমন পরিস্থিতি নেই যে, কাউকে আশ্রয় দিতে পারবো; এমন কি স্বল্প সময়ের জন্যও। অনুরোধে ঢেঁকি গেলার কাজটি বাংলাদেশ করেনি। এমন দ্ব্যর্থহীন নীতি-অবস্থানই কাম্য। একদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, এদেশে তালেবান নেই, জঙ্গী নেই, অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কাউকে নতুন করে আর আশ্রয় দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের উভয়ের বক্তব্যে সরকারের নীতির প্রতিফলন রয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হচ্ছে, আইনশৃংখলা বাহিনীর তরফে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে কথিত জঙ্গী ধরা হয়। তারা আসলে কতটা জঙ্গী, তা নিয়ে সংশয় থেকে যায় জনমনে। অথচ, জোর প্রচার চালানো হয় জঙ্গী বলে। এটা দেশের ভাবমর্যাদা বহির্বিশ্বে ক্ষুণ্ণ করে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কাজেই, এ ব্যাপারে আইনশৃংখলা বাহিনীকে আরো সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। কৃতিত্ব জাহির করার জন্য দেশের ভাবমর্যাদা খর্ব করা কোনো বিচারেই কাম্য হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।