Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না

প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.কে.এম ফজলুর রহমান মুন্সী : সত্য-মিথ্যা পার্থক্যকারী মাস মুহাররম
মহান রাব্বুল আলামীন চাঁদকেই সময়ের পরিমাপরূপে সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইসলামী বর্ষপঞ্জি এই নির্ধারণকেই অবলম্বন করে এগিয়ে চলেছে। এতসব মাস এবং বছরের সূচনা প্রাচীন যুগের ন্যায় অবশ্যই হিলাল বা নতুন চাঁদ দেখে নির্ধারণ করতে হবে। গোটা মুসলিম জাহানে এই পদ্ধতি আজ পর্যন্ত চলে আসছে।
আল কুরআনে এরশাদ হয়েছে, তিনি সূর্যকে তেজস্কর এবং চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং উহার মঞ্জিল বা তিথি নির্দিষ্ট করেছেন যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ ইহা নিরর্থক সৃষ্টি করেননি, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এই সমস্ত নিদর্শন বিশদভাবে বিস্তৃত করেছেন। সূরা (ইউনূস) আয়াত : ৫, পারা ১১ (রুকু-১)। তাই বোধগম্য কারণেই ইসলামের প্রাথমিক যুগ হতে একটি বিশেষ পৌনঃপুনিক গণনা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এই পদ্ধতি অনুসারে চান্দ্রমাস একের পর এক ৩০ দিনে অথবা ২৯ দিনে হয়। এই হিসাবে বছরের ১ম, ৩য়, ৫ম, ৭ম, ৯ম ও ১১শ মাসকে ৩০ দিনে এবং ২য়, ৪র্থ, ৬ষ্ঠ, ৮ম, ১০ম, ও ১২শ মাসকে ২৯ দিনে গণনা করা হয়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে আকাশে চন্দ্রের উদয়াস্তেÍর হিসাব মতে, জ্যোতিষিক চান্দ্রবর্ষ আরো ৮ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড দীর্ঘ হওয়ায় ওই পার্থক্য দূর করার জন্য প্রতি ৩০ চান্দ্রবর্ষে অতিরিক্ত ১১ দিন যোগ করা হয়। সমগ্র মুসলিম জাহানে এই ১১ দিবস যোগ করার জন্য সর্বাধিক যে পদ্ধতি অনুসৃত হয়ে আসছে তা হচ্ছে এই যে, এই ৩০ বর্ষের চক্রে ২য়, ৫ম, ৭ম, ১০ম, ১৩শ, ১৬শ, ১৮শ, ২১শ, ২৪শ, ২৬শ এবং ২৯ বর্ষে ১ দিন করে যোগ করা হয়। সর্বদা যুলহিজ্জা মাসেই এই সংযোজন ঘটানো হয়। (আল বিরুনীর ‘আছার’ আর আল বাত্তানীর’ কিতাব আলবিজ আল সাবী’ দ্রষ্টব্য)। পবিত্র ‘মুর্হারাম’ মাসের ৩০টি দিনের বিশ্ব ইতিহাসে এমন সব ঘটনার অবতারণা ঘটেছে, যার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে অবাক বিস্ময়ে হতবাক না হয়ে পারা যায় না। কেননা, এই মাসের ১ম তারিখটি বছরের প্রারম্ভ বলে স্বীকৃত। ৯ ও ১০ তারিখে রোজা রাখার কথা হাদীস শরীফে ঘোষিত হয়েছে। ১০ তারিখে আশুরা পালিত হয়। এই তারিখে ইমাম হযরত হুসাইন ইবনে আলী (রা.) খলিফা ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কারবালা প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেন। ১৬ তারিখে আল-বাইতুল মুকাদ্দাসকে কিবলা মনোনয়ন করা হয়েছিল। এই মাসের ১৭ তারিখে আবরাহার হস্তিবাহিনী মক্কার উপকণ্ঠে ছাউনী গেড়েছিল। বিশেষ করে আশুরার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এদিনে হযরত আদম (আ.) দুনিয়ার বুকে পদার্পণ করেছিলেন। হযরত নূহ (আ.) এর সময়কার মহাপ্লাবনের শুরু এবং শেষও ছিল আশুরার দিনে। হযরত মূসা (আ.) তাওরাত কিতাব লাভ করেছিলেন এই দিনে এবং অভিশপ্ত ফেরাউনের ধ্বংসও সাধিত হয়েছিল এই দিনে। হযরত ইব্রাহীম (আ.) পাপীষ্ঠ নমরুদের অনলকু- হতে নিষ্কৃতি লাভ করেছিলেন এই দিনে। হযরত ইউসুফ (আ.) অন্ধকার কূপ হতে এই দিনে উদ্ধার লাভ করেছিলেন। হযরত ঈসা (আ.)কে আল্লাহ পাক চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নিয়েছিলেন এই দিনে। হযরত আইয়ুব (আ.) এর আরোগ্যলাভের দিনটি ছিল আশুরা। এই দিনে হযরত ইউনূস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এই দিনেই হযরত ইদ্রিস (আ.) সশরীরে জান্নাতে প্রবেশ করেছিলেন। আবার এই দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। এতসব ঘটনার চিত্র যে মাস স্বীয় বুকে ধারণ করে আছে তার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য যে অপরিসীম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বস্তুতঃ ‘মুহাররাম’ হচ্ছে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী মাস। এ প্রসঙ্গে ‘মুহির নেছারা’র বক্তব্য খুবই প্রণিধানযোগ্য। আবহমানকাল ধরে চলছে মিথ্যার সাথে সত্যের লড়াই। সৃষ্টির ইতিহাসে এ দুইয়ের বৈরিতা চিরন্তন। তা যেমন শক্ত তেমনি শক্তিশালী। এ দ্বন্দ্ব কখনো মুছে যাওয়ার নয়, কিংবা নয় থেমে থাকারও। সত্যের সাথে শত্রুতা ঘোষণা করেই হয় মিথ্যার জন্ম। আর মিথ্যাকে প্রতিহত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে এগিয়ে আসে সত্য। এভাবেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিজয়মাল্য লাভে ধন্য হয়। মাহে ‘মুর্হারাম’ এই শিক্ষাই দিয়ে যায় বার বার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ