পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিস্তারিত তুলে ধরতে গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। এই জবাবী বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য। শুরুতে প্রধানমন্ত্রী কানাডা সফর, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগদান, পুরস্কার গ্রহণ, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া, বিভিন্ন সেমিনারে বক্তব্য প্রদানসহ ১৭ দিনের সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এ সফরকে তিনি অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মন্তব্য করেন। প্রসঙ্গত প্রধানমন্ত্রী জানান, এবার সফরের সময় তিনি একটু বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়েছেন। ৩৫ বছরের মধ্যে পাঁচ দিন ছুটি কাটিয়েছেন। শেষ দিকে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটালেও ওই সময় ৫১টি ফাইল নিষ্পত্তি করেছেন। প্রতিদিন দুই ঘণ্টা ধরে ফাইল দেখেছেন। স্মরণ করা যেতে পারে, সফরকালে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করলেও প্রায়ই দেশের খোঁজখবর রেখেছেন, যোগাযোগ করেছেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বশীলতার অনুপম নজির এবং অন্যান্যের জন্য অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক। দুঃখজনক হলেও এরকম দায়িত্বশীলতা তার সহকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কমই দেখা যায়। তাদের ঘন ঘন বিদেশ সফরের কারণে প্রশাসনের বিভিন্ন কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়। প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফল থেকে ফিরে এসে এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। তার কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে ফের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরে চিঠি দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই বিদেশ সফর শেষে ফিরে এসেছেন তখনই ওই সফর বিষয়ে জনগণকে অবহিত করার জন্য সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এটা এখন একটি প্রতিষ্ঠিত রীতিতে পরিণত হয়েছে। এবারের সংবাদ সম্মেলন এই ধারাবাহিকতার অংশ হলেও পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে যে সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য দিয়েছেন তা একে অন্যান্য সংবাদ সম্মেলন থেকে অনেকটাই আলাদা ও ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য দান করছে। তিনি দক্ষ, যোগ্য, বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন রাষ্ট্রনায়ক, সেটা তার বক্তব্যে আবারো প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি চলমান পাক-ভারত উত্তেজনা, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, সার্ক ও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে অনেকেরই দ্বিধা কেটে গেছে এবং তাতে বাংলাদেশের নীতি-অবস্থানই প্রতিফলিত হয়েছে। পাক-ভারত উত্তেজনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এ পরিস্থিতি এ অঞ্চলের জন্য উদ্বেগজনক। কোনো সংঘাত কাম্য নয়। সৃষ্ট পরিস্থিতি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিষয়। আমরা এ ধরনের পরিস্থিতি বা যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই, দুই দেশ নিজেরাই তাদের সমস্যার সমাধান করুক। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক বিষয়ে তিনি বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের বিরূপ মন্তব্যের পরও দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকবে। তার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও চলবে, ঝগড়াঝাটিও চলবে। সার্ক ও তার ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য : সার্ক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। তাতে সময়ও লেগেছে। এ পর্যায়ে সার্ক থাকবে কি থাকবে না, আমি তা এককভাবে বলতে পারি না, বলা ঠিকও নয়। সার্কভুক্ত দেশগুলো এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, এ সিদ্ধান্ত আমার একার নয়। তবে আমি মনে করি, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সার্কের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। এ ধরনের যৌথ একটি কিছু থাকা উচিত। এ অঞ্চলের দেশগুলোর সমস্যাগুলো মোটামুটি একই ধরনের। তাই এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় আমরা একসঙ্গে কিভাবে কাজ করতে পারি, তা ভেবে দেখা দরকার।
এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই নয়, অন্য বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখনই বলেন, তখন অনেক ভেবে-চিন্তে বলেন। সোজাসুজি বলেন। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন। তার বক্তব্যের মধ্যে রাষ্ট্রের স্বার্থ, জনগণের কল্যাণ ও সেবার দিকটি প্রাধান্য পায়। জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি যে কথা বলেছেন, এ প্রসঙ্গে তা উল্লেখ করা যায়। তিনি পরিষ্কার বলেছেন, যত ধরনের নতুন প্রযুক্তি রয়েছে তা গ্রহণ করা হবে। তবে তার ফায়ারওয়াল থাকতে হবে। তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা মোটেই এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয় যে, তথ্য বেহাত হতে পারে। তাতে ব্যক্তির বা রাষ্ট্রের ক্ষতি হতে পারে। ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই জাতীয় পরিচয়পত্র। তাতে ব্যক্তির যে তথ্য আছে তা অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে। প্রযুক্তিকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। তাকে গ্রহণ করেই প্রত্যাশিত সুফল চয়ন করতে হবে। ফায়ারওয়াল না থাকলে বা তা কার্যকর না হলে কি হতে পারে সেটা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ বিদেশে চলে গেছে। সে কারণেই তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পরিচয়পত্রে রক্ষিত তথ্যাদির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অণুবিভাগকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বলা বাহুল্য, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তার অবস্থান, ভূমিকা, মর্যাদা, সম্মান এবং উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি রাষ্ট্রের সঙ্গে সার্বভৌম সমতাভিত্তিক সম্পর্ক বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বাংলাদেশ শান্তিবাদী দেশ। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন তার অভীষ্ট লক্ষ। এই লক্ষ অর্জনে কোনো বিশেষ দেশের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক নয়, সব দেশের সঙ্গে সমস্বার্থ ও সমতাভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন। তার সুফলও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চীনের বিনিয়োগ সম্ভাবনা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক ফলপ্রসূ আলোচনা ইত্যাদির মধ্যেও এর প্রতিফলন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অপার। তারা মনে করে, তিনি তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারও তাই। দেশ-জাতির কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী তার প্রয়াস-প্রচেষ্টা আগামীতে আরো জোরদার করবেন, এটাই তাদের একান্ত কামনা। প্রধানমন্ত্রীর সকল উদ্যোগ-পদক্ষেপ জাতীয় স্বার্থেই এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।