Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সমস্যার নাম ওপেনিং জুটি

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৪ এএম

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ওপেনারদের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন মাহেদী হাসান। মাহেদীর আগে ‘সর্বশেষ’ হিসেবে থাকা নাইম শেখের অভিষেক হয়েছিল ২০১৯ সালের নভেম্বরে। এরপর মাহেদীর ওই এক ম্যাচের ওপেনিং বাদ দিলে বাংলাদেশ খেলিয়েছে মোট চারজন ওপেনার।
২০১৬ এশিয়া কাপ থেকে আজ অবধি সময়ে বাংলাদেশের চেয়ে কম ওপেনার খেলিয়েছে শুধুই আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। গেল পাচঁবছরে যেসব ম্যাচে ওপেনিং জুটি ৩০ রানের আগেই ভেঙ্গে গেছে, সেসবের প্রায় ৭১ শতাংশ (৭০.৯৬) ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। এমনিতেই গুরুত্বপুর্ণ ওপেনিং পার্টনারশিপ বাংলাদেশের জন্য তাই হয়ে উঠে আরও গুরুত্বপূর্ণ। এবার খতিয়ে দেখা যাক, বাংলাদেশের চার ওপেনারের পারফরমেন্স।
তামিম এবং স্ট্রাইক রেট
বারবার একই কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত তামিম শেষমেশ যেন অনুরোধই করলেন, স্ট্রাইক রেট নিয়ে আর প্রশ্ন না করতে। কারণটা অবশ্যই এ প্রশ্নের উত্তর দিতে চান না তা নয়, উত্তর দিতে দিতে তিনি আদতে রীতিমতো ক্লান্ত। তারপরেও কি প্রশ্নটা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়?
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ ম্যাচ খেলা শেষে তামিমের ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট কত ছিল জানেন? ৯৯.১৯। ২১তম ম্যাচে এসেই শেষমেশ তামিমের স্ট্রাইক রেট প্রথমবারের মতো তিন অঙ্কের ঘর ছুয়েছিল। এরপর ৪৮তম ম্যাচ খেলার আগেও কখনো তার ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ১১০ এর উপরে যায়নি। ৪৮তম সেই ম্যাচে তা হবার পর থেকে তার স্ট্রাইক রেট বেড়ে চলেছে ঠিকই, তবে তা ১২০ এর উপরে যেতে পারেনি আজও।
বর্তমানে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে তামিমের স্ট্রাইক রেট ১১৭.৪৭। সময়টা গত পাচঁ বছর ধরে নিলে তা হয় ১২৪.০৩। ২৪.৬৫ গড়টা সামান্য বেড়ে হয় ২৪.৮৬। এই পাচঁ বছরে যেসব ওপেনারদের স্ট্রাইক রেট ১২৫ এর কম এবং গড় ২৫ এর নিচে, তাদের মধ্যে তামিমের চাইতে বেশি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন কেবলই একজন। সেই গুনাতিলিকার তামিমের থেকে বেশি খেলা ম্যাচের সংখ্যাটা মাত্রই ‘দুই’। সেসময়ে বাংলাদেশের খেলা ৪৫ টি-টোয়েন্টির ২২টিতেই ছিলেন তামিম ইকবাল। যা মিস করেছেন তা ইনজুরি কিংবা ব্যাক্তিগত কারণেই, বাদ পড়তে হয়নি কখনোই।
সৌম্য, প্রতিভা এবং ধারাবাহিকতা
ক্যারিয়ারের ৪৫.৯০ শতাংশ ইনিংসেই ১০ রানেরও বেশি করার আগেই নিজের উইকেট হারিয়েছেন সৌম্য সরকার। যার মানে, ০ থেকে ১০ রানে প্রতি ২.১৮ ম্যাচেই একবার আউট হয়েছেন তিনি। এমনকি ১০ বলের উপরে খেলার আগেই ফিরতি পথে সৌম্য সরকার, ৬১ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ২৮টিতেই হয়েছে এমনটা।
তারপরেও তাকে কেন এত সুযোগ দেওয়া হয়? প্রশ্নটার উত্তরে ‘প্রতিভা’ শব্দের উপস্থিতি অনিবার্যই। মাঝে মধ্যে সেই প্রতিভার ঝলক পারফরমেন্সে রুপায়িত হতে দেখা যায়। তবে সেটির পরিমাণ এতই কম যে, তা অধারাবাহিকতার বিশাল ভারে চাপা পড়ে যায়।
গেল পাঁচবছরে ৪২ ম্যাচে স্ট্রাইক রেট যথেষ্ট ভালো থাকলেও সৌম্যর ব্যাটে অভাব যেটির, সেটির নাম ধারাবাহিকতা। সৌম্যের ইনিংসের প্রথম দশ বলের স্ট্রাইক রেট ১০৪.৩৬। ধীরলয়ে শুরু পুষিয়ে নেন পরে ভালোমতোই, পরের দশ বলে তার স্ট্রাইক রেট ১৪৮.৬৪। কিন্ত ৪৭.০৬% ম্যাচেই যে দশ বল পাড়ি দেওয়ার আগেই তার ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে গেছে।
লিটনের ‘অজানা’ সমস্যা
লিটন কুমার দাস। নামটার সঙ্গে যেন অদৃশ্যভাবে জুড়েই আছে আরেকটি শব্দ, প্রতিভা। তিনি ‘স্পেশাল’, মাঝে মাঝে প্রতিভার ঝলক দেখা গেলেও তাই তার থেকে আশার মাত্রাটা একটু বেশিই। লিটন দাসের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ১৩৪.০২। বাংলাদেশের হয়ে যারা কমপক্ষে ২০০ রান করেছেন, তাদের মধ্যে লিটনের এই স্ট্রাইক রেট দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। মাশরাফির সর্বোচ্চ ১৩৬.১০ থেকে যা মাত্রই ২.০৮ কম।
গত পাঁচ বছরে লিটন দাস যে ৩০ ম্যাচে খেলেছেন, সেখানে লিটন বাদে বাংলাদেশের অবশিষ্ট ব্যাটসম্যানেরা সম্মিলিতভাবে রান যা করেছেন, তা ১২৪.৩৮ স্ট্রাইক রেটে। লিটন তার থেকে ১২.২৩ বেশি স্ট্রাইক রেটেই রান তুলেছেন স্কোরবোর্ডে। সেইসব পিচে বাকি সকলে যেখানে রান করেছেন ১৩০.৬৯৮ স্ট্রাইক রেটে, লিটন সেখানে রান যোগ করেছেন ১৩৬.৬১ স্ট্রাইক রেটে।
নাইম আপাতত ‘সম্ভাবনাময়’
নাইম শেখ নিজের প্রথম সিরিজেই ভারতের বিপক্ষে ৮১ রানের দারুণ ইনিংস খেলে জানান দিয়েছিলেন তার আগমনের। অন্যদের অনুপস্থিতি এরপর তাকে সুযোগ করে দিয়েছে আরও ম্যাচ খেলার। তবে ১৭ ম্যাচ খেলা সম্ভাবনাময় এই ক্রিকেটার এখনই ‘ফার্স্ট টু চয়েস’ হওয়ার জায়গায় পৌছাতে পারেননি নিশ্চয়ই।
তামিম, সৌম্য, লিটন, নাইম- বাংলাদেশের এই চার ওপেনারের মধ্যে প্রথম দশ বলে একমাত্র নাইমের স্ট্রাইক রেটই একশের নিচে। ধীরলয়ে শুরুর পরে দ্রæততার সাথে রান তুলতেও যদিও দেখা যায় না তাকে। প্রথম দশ বলে ডট খেলার হারটাও তারই বেশি। পরের দশ বলে ১২২.৮০ স্ট্রাইক রেটে রান করলেও সেভাবে তা পুষিয়ে দিতে সক্ষম হন না তিনি।
লাইনে থাকা ওপেনারদের মধ্যে নাইমের স্ট্রাইক রেটই সর্বনিম্ন। কিন্ত তার ২৯.০৬ গড়টাও সবার থেকেই বেশি।
এই চারজনের কাকে তাই এগিয়ে রাখবেন? সে সিদ্ধান্ত এখন আপনার। আর ওপেনিংয়ের এ সমস্যা থেকে বাংলাদেশ দল পরিত্রাণই বা পাচ্ছে কবে? এ প্রশ্নটা তোলাই থাক।



 

Show all comments
  • md asad ২২ আগস্ট, ২০২১, ২:০৮ পিএম says : 0
    tamim /Mehedy/Naim shekh
    Total Reply(0) Reply
  • Mostafa Bhuiyen ২২ আগস্ট, ২০২১, ৭:১৮ পিএম says : 0
    নাইমশেখ এবং তামিম ওপিনিং করুণ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টি-টোয়েন্টি

১৪ নভেম্বর, ২০২২
৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ