Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনাকালীন ত্রাণ তহবিল গঠনের প্রস্তুতি উয়েফার

বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

মহামারির প্রভাবে এখনো লোকসান গুণে যাচ্ছে ইউরোপীয় ক্লাবগুলো। করোনাকালীন অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে ভুক্তভোগী ক্লাবগুলোকে সাহায্য করতে ৭০০ কোটি ডলারের (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার) ত্রাণ তহবিল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (উয়েফা)।

উয়েফার কর্মকর্তাদের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, মহাদেশীয় টুর্নামেন্টগুলোয় অংশগ্রহণকারী ক্লাবদেরকেই শুধু এই সহায়তা দেয়ার চিন্তা করছে তারা। উয়েফা কর্তৃক পরিচালিত ভবিষ্যৎ টুর্নামেন্টগুলোয় অংশগ্রহণের সময় ক্লাবগুলোর প্রাপ্ত অর্থ থেকে তহবিলের টাকা কেটে রাখবে সংস্থাটি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ পর্যায়ে যাওয়া কোন দল শুধু এই টুর্নামেন্ট থেকেই ১০ কোটি ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারে।
এই তহবিল তৈরির জন্য উয়েফা গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন ব্যাংক এবং প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্মের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছে। ইউরোপিয়ান ফুটবলের তিনটি বড় আসর-চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপা লিগ এবং নব্য ঘোষিত ইউরোপা কনফারেন্স লিগে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে প্রথমে সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছে উয়েফার কর্মকর্তারা।
অনেক ইউরোপীয় ক্লাবের জন্য এই আর্থিক সহায়তা খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। ২০২০ সালে করোনার প্রথম ধাক্কার পর থেকেই হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে ক্লাবগুলো। সম্প্রচার স্বত্ব ও স্পন্সরশিপেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছাড় দিতে বাধ্য হয়েছে অনেক ক্লাব। হাতেগোণা কয়েকটি ক্লাব বাদে সবাই বড়সড় লোকসানের মুখ দেখেছে।
উদাহরণস্বরূপ, অর্থনৈতিক সংকটের জন্যই বার্সেলোনা এবার লিওনেল মেসিকে ধরে রাখতে পারেনি। ১৫০ কোটি ডলারের ঋণের উপর বসে থাকা ক্লাবটি এবছরও প্রায় ৫৭ কোটি ডলারের লোকসান দেখতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্লাব প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তা। ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে প্রতাপশালী ও ধনী ঘরোয়া প্রতিযোগিতা, প্রিমিয়ার লিগও জানিয়েছে, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এবছরই প্রথমবারের মতো তাদের রাজস্ব নিম্নগামী হয়েছে।
উয়েফা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেনি। তবে ইউরোপীয় ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের (ইসিএ) সাথে প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করেছে তারা। ইউরোপজুড়ে ২০০টিরও বেশি ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করা ইসিএকে উয়েফা তার সদস্য ক্লাবগুলোর আর্থিক চাহিদা বুঝতে জরিপ করতে বলেছে।
খেলোয়াড় দলবদলের বাজার নিয়েই সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন উয়েফা। মাঝারি ও ছোট মানের ক্লাবগুলোর মূল আয় আসে সাধারণত খেলোয়াড় বিক্রি করেই। অর্থনৈতিক সংকটের জন্য বড় ক্লাবগুলো যেমন আগের মতো খেলোয়াড় কিনতে পারছে না, তেমনি ছোট ক্লাবগুলোও বিক্রি করতে পারছে না। সব মিলিয়ে একটি তরঙ্গ প্রভাব তৈরি হয়েছে যা দলবদলের বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মহামারির আগে খেলোয়াড় দলবদল বাজারের মোট মূল্যমান ছিল প্রায় ৭০০ কোটি ডলার, যা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কমে এসেছে। অনেক ক্লাবই তাদের দামী খেলোয়াড়দের ক্লাবে রাখার মতো সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এবং বাজারের অবস্থার জন্য সেসব খেলোয়াড়দের বিক্রি করাও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। সিংহভাগ মাঝারি ও ছোট আকৃতির ক্লাবই তাই বিনামূল্যে এসব ফুটবলারদের ছেড়ে দিচ্ছে, বা কোথাও লোনে পাঠাচ্ছে। উয়েফা এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপা লিগ এবং কনফারেন্স লিগ থেকে ক্লাবগুলোর সম্ভাব্য আয়ের ভিত্তিতে একটি রেটিং প্রোফাইল তৈরি করার কথা ভাবছে। সে অনুযায়ী ক্লাবগুলোকে অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব রাখবে তারা। এই ব্যবস্থা ঋণদাতাদের জন্য ঝুঁকি কমাবে এবং ক্লাবগুলোও স্বাভাবিক সুদের হারের চেয়ে কমে অর্থ সহায়তা পাবে।
ইউরোপীয় ফুটবলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে ১২টি শীর্ষস্থানীয় ক্লাব উয়েফাকে ভেঙে দিয়ে নতুন সুপার লিগ তৈরির ব্যর্থ চেষ্টা করার কয়েক মাস পর এই উদ্যোগ নিচ্ছে উয়েফা।
উয়েফাই কিন্তু প্রথম ফুটবলীয় সংস্থা না যারা মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাবকে প্রশমিত করতে তহবিল গড়ার চিন্তা করছে। স্প্যানিশ লা লিগা এই মাসের শুরুতে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা লিগের আগামী ৫০ বছরের সম্প্রচার এবং বাণিজ্যিক স্বত্বের ১১ শতাংশ একটি ইক্যুইটি ফান্ডের কাছে বিক্রি করে ৩০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ গ্রহণ করছে। ইতালিয়ান সিরি ‘আ’ও একটি অনুরূপ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উয়েফা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ