পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত বুধবার রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্র্মীরা হামলা চালায়। এতে পুলিশ-আনসারের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে ৬০ জন গুলিবিদ্ধ ও ৫০ জন পুলিশের পিটুনিতে আহত হয়েছে বলে দাবী করেছে আওয়ামী লীগ। বাসভবনে হামলার ঘটনায় ইউএনও বাদী হয়ে একটি এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে পুলিশ আরেকটি মামলা করেছে। দুই মামলায় সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, র্যাবের টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন এবং ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের ফুটেজ দেখে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ইউএনও’র বাসায় হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বরিশাল সিটি মেয়রকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। অন্যদিকে, মেয়রের বাসভবনে আওয়ামী লীগ ইউএনও’র বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে। এতে পারস্পরিক দোষারোপের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আওয়ামী লীগ প্রায় এক যুগ ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সাথে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার ধারাবাহিকতা হিসেবে সর্বশেষ বরিশাল সদরে ইউএনও’র বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেখা যাচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সাথে প্রায়ই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কখনো কখনো অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মাধ্যমে একে অপরের মুখোমুখি হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সাথে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই মুখোমুখি হওয়া নিয়ে বিশ্লেষকরা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, দল ও প্রশাসন যখন একাকার হয়ে যায়, তখন এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার উদ্ভব হয়। প্রশাসনের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারি যেমন নিজেদের দলীয় লোক মনে করা শুরু করে, তেমনি দলের লোকজনের মধ্যেও প্রশাসনকে নিজের মতো করে ব্যবহার করার প্রবণতা দেখা দেয়। অথচ প্রশাসনের কাজ হচ্ছে, ক্ষমতাসীন সরকারের আদেশ-নির্দেশ ও জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। প্রশাসন রাষ্ট্রের ইন্সট্রুমেন্ট। একে সরকার তার নীতি অনুযায়ী, যেভাবে পরিচালনা করবে সেভাবে তা পরিচালিত হবে। দেখা যাচ্ছে, এর ব্যত্যয় ঘটছে। প্রশাসনের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারি প্রশাসনিক বিধি-বিধান উপেক্ষা করে অনেক সময় দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করে। নিজেদের দলীয় লোক বিবেচনা করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। যার ফলে, কখনো কখনো সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তখন সে দল তার মতো করে প্রশাসন সাজায়। এই সাজাতে গিয়ে প্রশাসনকে এমনভাবে দলীয়করণ করা হয় যে, জনগণের সেবার প্রশাসন তার স্বাতন্ত্রও হারিয়ে ফেলে। আমলারাও দলীয় আনুগত্য প্রকাশে উঠেপড়ে লাগে। যেকোনো দেশের আমলাতন্ত্র সে দেশের চালিকাশক্তি। আমলাতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমলাতন্ত্র ও আমলা ছাড়া সরকার পরিচালনা সম্ভব নয়। আমলাদের দায়িত্ব জনকল্যাণে নেয়া সরকারের এজেন্ডা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। এক্ষেত্রে, সৎ, দক্ষ ও কার্যকর আমলাতন্ত্রের বিকল্প নেই। আমলারা সরকার তথা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। জনসেবা করাই তাদের মূল দায়িত্ব। রাষ্ট্রের বিধিবিধানের মধ্যে থেকে পেশাদারিত্বের মাধ্যমে সরকারের পরিকল্পনা তাদের বাস্তবায়ন করতে হয়। এর বাইরে আলাদাভাবে দলীয় আনুগত্য প্রকাশ এবং নত আচরণ করা কাম্য নয়। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদেরও এমন আচরণ করা উচিৎ নয়, তারা যা বলবে এবং যেভাবে বলবে তা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেনে নিতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে, দল ও রাষ্ট্রযন্ত্র দুটো আলাদা বিষয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় নেতা-কর্মী মনে করলে চলবে না। তারা রাষ্ট্রের সম্পদ এবং জনসেবক। তাদের নির্বিঘ্ন কাজের মধ্য দিয়েই জনগণের কল্যাণে দলের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা-কর্মী এমন আচরণ করছে যেন তাদের কথামতো প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলতে হবে। তাদের এ মনোভাব ও উদ্ধত আচরণ নানা অনভিপ্রেত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে, যা আদৌ কাম্য হতে পারে না।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীর সংঘর্ষের ঘটনায় পারস্পরিক দোষারোপ, নিন্দাজ্ঞাপন থেকে শুরু করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তির কথাও বলা হয়। তবে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তদন্ত রিপোর্ট যেমন প্রকাশিত হতে দেখা যায় না, তেমনি দোষীদেরও শাস্তি হয় না। এই শাস্তি না হওয়ার কারণে ধারাবাহিকভাবে ঘটনা ঘটে চলেছে। বরিশালে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দল মুখোমুখি হওয়া সেই ধারাবাহিকতারই ফল। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার ইতি টানতে হবে। ক্ষমতাসীন দল ও সরকারকে আলাদা রাখতে হবে। দুটোকে এক করে ফেললে হবে না। দলকে দলীয়ভাবে, সরকারকে সরকারের মতো পরিচালনা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।