পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গজলডোবা-ফারাক্কাসহ সব বাঁধ খুলে দিয়েছে ভারত : হু হু করে নামছে উজানের ঢল
উত্তর-মধ্যাঞ্চল থেকে ভাটি মোহনা হয়ে দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত তীব্র নদীভাঙন
দেশে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ভারত গঙ্গার উজানে ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তার উজানে গজলডোবাসহ সবকটি বাঁধ-ব্যারেজ খুলে দিয়েছে। এতে হু হু করে নামছে উজানের ঢল। ফলে পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, গড়াইসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পাড়ের এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব নদী এলাকাগুলোর চরাঞ্চল, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। এছাড়া চরাঞ্চল ও নিচু এলাকার অনেক ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
গতকাল পদ্মা, তিস্তা ও গড়াই নদী চারটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে নদ-নদী বিপদসীমার কাছাকাছি রয়েছে। যমুনা নদের একাধিক পয়েন্টে পানি বিপজ্জনকভাবে বেড়েই চলেছে। যমুনা নদ মথুরা ও আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমার যথাক্রমে মাত্র ১৩ এবং ১৯ সেন্টিমিটার নিচে পৌঁছে গেছে। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, তিস্তাসহ প্রধান অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শাখা-প্রশাখা ও উপনদীগুলোতে বাড়ছে পানি।
দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল থেকে পদ্মা মেঘনার ভাটি ও মোহনা হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদী, খাল-খাঁড়িসমূহ এবং দক্ষিণাঞ্চলের উপক‚লভাগে বেড়েছে ঢলের পানির চাপ। সেই সাথে অব্যাহত রয়েছে ভয়াবহ নদীভাঙন। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা বিলীন হচ্ছে প্রমত্তা নদীগর্ভে। ভিটেমাটি, ফল-ফসলের জমিজমা সর্বস্ব হারাচ্ছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি ও নদীভাঙা নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট নিচে তুলে ধরা হলো।
চট্টগ্রাম থেকে শফিউল আলম জানান, উজানের অববাহিকায় ভারতে অতিবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। উজান থেকে আসা ঢলের চাপে ভাটিতে দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজেদের বন্যার চাপমুক্ত রাখতে ভারত গঙ্গার উজানে ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তার উজানে গজলডোবাসহ সবকটি বাঁধ-ব্যারেজ খুলে দিয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা, হিমালয় পাদদেশীয় ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী, কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বর্ষণ আরো চার দিন অব্যাহত থাকবে। উড়িষ্যা উপক‚লে অবস্থানরত লঘুচাপ এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবে মধ্য-ভারত, বিহারসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বর্ষণ হচ্ছে।
গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে জলপাইগুড়িতে ৯৬, পাসিঘাটে ৮১, চেরাপুঞ্জিতে ৭৫, দার্জিলিংয়ে ৫৯, দিব্রæগড়ে ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে লরেরগড়ে ৭০, সুনামগঞ্জে ৬০, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পাউবো।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৬৭ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৮টিতে হ্রাস ও তিনটি স্থানে অপরিবর্তিত রয়েছে। এরমধ্যে পদ্মা, তিস্তা ও গড়াই নদী চারটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার নদ-নদীর ৬৯টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৩৭টিতে হ্রাস পায়। ৩টি স্থানে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল। মঙ্গলবার ৬৬টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৮টিতে হ্রাস পায়। তিনটি স্থানে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ছিল। সোমবার ৬৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৭টিতে হ্রাস ও ৩টি স্থানে অপরিবর্তিত ছিল।
প্রধান নদ-নদীসমূহের প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে গতকাল পাউবো জানায়, সুরমা ব্যতীত দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি আরো বৃদ্ধি এবং তিস্তা অববাহিকায় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলসমূহে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদ মথুরা ও আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ইতোমধ্যে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ছাড়াও শরীয়তপুরে সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে।
মাদারীপুর থেকে আবুল হাসান সোহেল জানান, আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলায় নদীভাঙন তীব্র রূপ নিচ্ছে। কালকিনি উপজেলার সিডি খাঁন ইউনিয়নের নতুন চরদৌলত খাঁ গ্রামের অর্ধ শতাধিক বসতবাড়ি, মসজিদসহ কয়েক একর ফসলি জমি আড়িয়াল খাঁ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন তান্ডবে ভিটামাটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ। এছাড়া নতুন করে নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি। এতেকরে ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী পাড়ের সাধারণ জনগণ। তবে অনেকে বাড়িঘর ভেঙে অন্য স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে নদীভাঙন রোধে দ্রুত বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন-বিক্ষোভ সভা-সমাবেশ করছে ভুক্তভোগী পরিবাররা। অপরদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন কালকিনি উপজেলা প্রশাসন।
নীলফামারী থেকে মুশফিকুর রহমান সৈকত জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল ভোর থেকে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বাড়তে থাকে এবং বিকেল ৩ টার পর থেকে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তার পানি বাড়ার সাথে সাথে অনেক এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের ১৫টি চর প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওইসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা। ওই সব এলাকায় অনেক স্থানে ভাঙন শুরু হওয়ায় অনেক পরিবার অন্যত্র সরে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গতকাল ভোর থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। দুপুর ১২টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকেল ৩টায় ২ সেন্টিমিটার বেড়ে পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার)। রাতে তিস্তার পানি আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এদিকে পানির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে মো. মোজাম্মেল হক জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এ বছরের কয়েক দফা পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ও ফেরিসহ কয়েক হাজার পরিবার। গতকাল ভোর থেকে লঞ্চঘাট এলাকায় আবারো ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভোর থেকে ভাঙনে লঞ্চঘাট এলাকার প্রায় ৩০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে বেশ কিছু বাড়িঘর। হুমকির মধ্যে রয়েছে দৌলতদিয়া প্রান্তের লঞ্চঘাটটি।
স্থানীয়রা জানান, মাঝরাত থেকে আবারো পদ্মা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে লঞ্চ ঘাট এলাকায়। বেশ কিছুদিন পূর্বে অপিরিকল্পিতভাবে জিও টিউব ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙন রক্ষায় সেগুলো কাজে আসেনি। লঞ্চঘাট এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার অংশ ভেঙে ধসে গিয়েছে। বেশকিছু বাড়িঘর লঞ্চঘাট এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। যেকোনো সময় লঞ্চঘাট বন্ধ করে দিতে পারে কর্তৃপক্ষ।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে দায়িত্বরত (বিআইডব্লিউটিএ)’র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, লঞ্চঘাটটি মূলত হুমকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় লঞ্চঘাট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান লঞ্চঘাট এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন। লঞ্চঘাট স্থাপন করার মতো কোনো জায়গা না থাকার কারণে ঝুঁকির মধ্যে লঞ্চঘাট দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে।
নাটোরের লালপুর থেকে আশিকুর রহমান টুটুল জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত কয়েকদিন থেকে হু হু করে পানি বাড়ছে নাটোরের লালপুর উপজেলার পদ্মা নদীর। দ্রæত গতিতে পানি বাড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে চরাঞ্চল ও পদ্মা পাড়ের মানুুষেরা। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে পদ্মার চরাঞ্চলের ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার। চরাঞ্চালেরর পানিবন্দি পরিবারের অধিকাংশ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। প্রতিনিয়তই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানি বৃৃদ্ধি পাওয়ায় এখন পর্যন্ত কি পরিমাণে জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নিরুপণে কাজ শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। দ্রুত পানি নেমে গেলে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার গৌরীপুর সিসি ব্লক এলাকার বেশকিছু স্থানে সিসি ব্লক ছাপিয়ে তীরবর্তী এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে আতঙ্কিত নদী তীরবর্তী মানুষ। লালপুরের বিলমাড়ীয়া, লালপুর এবং ঈশ্বরদী এই ৩টি ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চল নওশারা সুলতানপুর, চাকলা বিনোদপুর, দিয়াড় শংকরপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর ও মোহরকয়ার অংশের কিছু জমির ফসল পানিবদ্ধতায় পড়েছে ও চরাঞ্চলের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে জীবনযাপন করছে ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।