Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যার মুখে ৮ জেলা

প্রধান নদ-নদীর পানি একযোগে বৃদ্ধি : তিস্তা বিপদসীমার ঊর্ধ্বে ভারতের ঢল ও অভ্যন্তরীণ ভারী বর্ষণ : তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি একযোগে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি বর্ষণে উজান থেকে ভারতের ঢলে এবং অভ্যন্তরীণ ভারী বৃষ্টিপাতের কারণেই নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল শুক্রবার জানায়, প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৭৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩০টি পয়েন্টে পানি হ্রাস ও ৫টি স্থানে অপরিবর্তিত রয়েছে। তিস্তা নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সকালে পদ্মার নদীর ভাটিতে পানি বিপদসীমার ঊর্ধ্বে উঠে। তবে বিকাল নাগাদ পানি নীচে নেমেছে। নদ-নদীসমূহের অনেক পয়েন্টে পানি বৃদ্ধির দিকে রয়েছে। এতে করে আগামী ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৮টি জেলার নিম্নাঞ্চল বন্যা কবলিত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানায় পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। জেলাগুলো হচ্ছে উত্তর জনপদে কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট ও নীলফামারী, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ এবং মধ্যাঞ্চল ও ভাটি অঞ্চলে শরীয়তপুর ও চাঁদপুর। এরমধ্যে কোন কোন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আভাস রয়েছে।

আবহাওয়া বিভাগ ও পাউবো সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর উজানের অববাহিকায় বা উৎসস্থলে উত্তর-পূর্ব ভারত, বিহার ও মধ্য-ভারতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নেপাল, তিব্বতসহ চীনে হচ্ছে ভারী বর্ষণ। উজানের অববাহিকা হয়ে ভাটির দিকে নামছে ঢল। এসব অঞ্চলে বর্ষার মৌসুমী বায়ু সক্রিয়। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরে নদ-নদী এলাকাগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এতে করে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল থেকে পদ্মা-মেঘনার ভাটি হয়ে মোহনা পর্যন্ত প্রধান নদ-নদীসমূহ এবং এর সঙ্গে যুক্ত অনেক শাখানদী, উপনদীও ফুলে-ফুঁসে উঠেছে। এসব অঞ্চলে আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে প্রধান নদ-নদীসমূহে দ্রুত পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন হচ্ছে তীব্র থেকে তীব্রতর। উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল হয়ে পদ্মা-মেঘনার ভাটি-মোহনায় চাঁদপুর, নোয়াখালী অঞ্চল অবধি নদীভাঙন ব্যাপক। নদ-নদী সংলগ্ন এলাকাবাসীর পৈত্রিক বসতভিটা, জমিজমা বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। তাছাড়া রাস্তাঘাট, হাটবাজার, স্কুল-মাদরাসা, মসজিদসহ অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাস করছে উত্তাল নদী। ভাঙন আতঙ্কে দিন গুজরান করছে নদীপাড়ের মানুষ।

নদ-নদী পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস
দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে পাউবো গতকাল জানায়, দেশের প্রধান সব নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

পাউবো জানায়, প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৭৪টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৩০টিতে হ্রাস পায়, ৫টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত থাকে। তিস্তা নদী বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার নদ-নদীর ৫৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৪৯টিতে হ্রাস এবং দু’টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত ছিল।
গতকাল বিকাল পর্যন্ত পাউবোর সর্বশেষ নদ-নদী প্রবাহের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা নদী ভাটিতে সুরেশ^র পয়েন্টে সকালে বিপদসীমার ১০ সে.মি. ঊর্ধ্বে থাকলেও বিকালে ৩৪ সে.মি. নিচে নেমেছে। গঙ্গা-পদ্মায় ধীরে ধীরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পদ্মা নদী রাজশাহীতে ১২৪, হার্ডিঞ্জ ব্রিজে ৯২, গোয়ালন্দে ৩২ সে.মি নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। আপার মেঘনা অববাহিকায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাড়ছে অধিকাংশ স্থানে নদ-নদীর পানি। সুরমা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বিকাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জে বিপদসীমার মাত্র ১১ সে.মি. নিচে এসেছে।
গতকাল ২৪ ঘণ্টায় উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতে উল্লেখযোগ্য ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে পাসিঘাটে ১৭৩, চেরাপুঞ্জিতে ১৩৯, দার্জিলিংয়ে ৪৮ মিলিমিটার। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে পাবনা ও সুনামগঞ্জে ১৩৫, ছাতকে ১১৬, মহেশখোলায় ৯৪, লালাখালে ৯০, পাটেশ^রীতে ৮৫, শেওলা ও লরেরগড়ে ৭৫, ঠাকুরগাঁওয়ে ৬০, কানাইঘাটে ৫৪ মি.মি. ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পাউবো।

হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি নিরাপদ স্থানে ছুটছে মানুষ
রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে আবারো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে তিস্তা নদী। গত শুক্রবার ভোর রাত থেকে হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি। ইতিমধ্যে ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। বন্যার আশঙ্কায় নদীতীর ও চরাঞ্চলের মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে সহস্রাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার মধ্য রাত থেকেই তিস্তার পানি হু হু করে বাড়তে শুরু করে এবং সকাল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমার লেভেল ৫২ দশমিক ৬০ মিটার। বেলা ২টা পর্যন্ত একই লেভেলে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। এতে করে নীলফামারী জেলার জলঢাকা, ডিমলা, লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, কালিগঞ্জ, হাতিবান্ধা, আদিতমারী উপজেলা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার নদী তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি থেকে মালামাল সরিয়ে নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোর রাত থেকে তিস্তার পানি বেড়ে চলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখে তিস্তা অববাহিকা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।



 

Show all comments
  • Sarwar Uddin ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৬ এএম says : 0
    আমাদের দেশে বন্যার মেইন কারণ হচ্ছে ভারতের পানি। তা নাহলে আমাদের দেশে তেমন কোন বৃষ্টি হচ্ছে না যে এই রকম বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের পানি যদি এখন বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে আমাদের দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Boshirul Islam ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৭ এএম says : 0
    বিচারহীনতা, দায়িত্বহীনতা, অবিরাম জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খাল বিল নদী নালা সব দখল, পানি রাস্তায় আর ঘরে ঢুকবে নাতো কি চান্দে যাবে ??
    Total Reply(0) Reply
  • Md Sazzad Hossain ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৭ এএম says : 0
    জাতি সীমালংঘন করলে আল্লাহ তালা এইধরনের আযাব বর্ষিত করেন। নিশ্চই আমরা সীমালংঘন কারী সম্প্রদায়
    Total Reply(0) Reply
  • Aleya Khatun ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৭ এএম says : 0
    ভারতের ১২০টির উপরে বাঁধ খুলে দেয় যাতে বাংলাদেশে বন্যার পানি আসে
    Total Reply(0) Reply
  • খন্দকার অলিউল ইসলাম আরজু ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৭ এএম says : 0
    সরকার জনগনপর জন্য চাল দিচ্ছে, তা দিয়ে জন প্রতিনিধিরা নিজেদের গোডাউন ভোরছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Adv Khalilur Rahman ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৮ এএম says : 0
    অামরা বাংগালী দুর্য্যোগ মোকাবিলায় সাহসী ইন্শাঅাল্লাহ বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনা, বন্যা মোকাবিলা করতে পারবো।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Alam Gir ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৮ এএম says : 0
    নদীগুলোর গভীরতা বৃদ্ধি করলে বন্যার ঝুকি কিছুটা কমানো যেতো।
    Total Reply(0) Reply
  • অনন্যা অ্যানি ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৮ এএম says : 0
    হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে?? ষোল কোটি জনগনের থেকে অন্তত পাঁচ কোটি জনগণ পাঁচ টাকা করে দিলেও বন্যার ক্ষতি রোধে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া যায়। সবাই খালি হায় হায়,ই করতে জানে
    Total Reply(0) Reply
  • Suparna Ghosh ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:৩৯ এএম says : 0
    বন্যার কারণে জীবন শেষ বাজার করাও অসম্ভব হয়ে গেছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ