Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তাওবার মাধ্যমেই হিজরি নববর্ষ উদযাপন করতে হবে

খুৎবা পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

তাওবার মাধ্যমেই হিজরি নববর্ষ উদযাপন করতে হবে। ইসলামের বিজয় আনন্দ উৎসবের মধ্যে দিয়ে আসেনি বরং কষ্টের মধ্য দিয়ে এসেছে। আর হিজরতই ছিল একমাত্র জীবনের ঝুঁকি, সীমাহীন কষ্ট ও অনিশ্চিত জীবন চলার পথ। বিভিন্ন মসজিদে গতকাল জুমার বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। নগরীর মসজিদগুলোতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় রাস্তার ওপর মুসল্লিদের জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।

মসজিদগুলোতে করোনা মহামারি থেকে মুক্তি, ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা, দেশ ও জাতির উন্নতি-সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। ঢাকার লালমাটিয়াস্থ মসজিদে বায়তুল হারাম এর খতিব মাওলানা কাজী আবু হোরায়রা গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে হিজরি সনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, রাসুল (সা.) এর মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরতের ১৬ বছর পর ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রা.) সাহাবায়ে কেরামের পরামর্শ নিয়ে ইসলামি হিজরি সন চালু করেন। হিজরি সন চালু প্রসঙ্গে হযরত ওমর (রা.) হযরত আলী (রা.) এর মতামত জানতে চাইলে আলী (রা.) ঐ সব প্রস্তাবে রাজি না হয়ে মহানবী (সা.) এর হিজরতকে উপলক্ষ করে নতুন ইসলামী সন চালু করার প্রস্তাব করেন। খলিফা (রা.) হযরত আলীর (রা.) প্রস্তাবে একমত পোষণ করেন। এর কারণগুলো হলো হিজরত হলো ইসলামের বিজয় সূচনার বাহন, হিজরত সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী একটি সোপান।

কোরআন নাজিল, নবুয়াতের সূচনা, মিরাজ ইত্যাদি সুখবর ও আনন্দদায়ক বিষয়। কিন্ত ইসলামের বিজয় আনন্দ উৎসবের মধ্যে দিয়ে আসেনি বরং কষ্টের মধ্য দিয়ে এসেছে। আর হিজরতই ছিল একমাত্র জীবনের ঝুঁকি, সীমাহীন কষ্ট ও অনিশ্চিত জীবন চলার পথ। খতিব বলেন, হিজরতের গুরুত্ব ও শিক্ষা এবং ত্যাগের মাস মুহাররম উপস্থিত। আজকের মুসলমানরা জানে না কারবালার ময়দানে ১০ মুহাররম সত্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সপরিবারে কেন শাহাদাত বরণ করেছিলেন নবী দৌহিত্র হযরত হুসাইন (রা.)। আসুন সময় থাকতে আমরা ইসলামের সুমহান বিষয়গুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের জীবনকে আলোকিত করি। আল্লাহ তৌফিক দিন।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকী গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, গতকাল ছিল ১৪৪৩ হিজরির প্রথম জুমা। জীবনে আরো একটি নতুন হিজরি বর্ষ পেয়েছি, এই পাওয়া আমাদের জীবন থেকে আরো একটি বছর হারিয়ে গেছে এটাই স্মরণ করিয়ে দেয়। হারানো বছরের গুনাহের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে তাওবার মাধ্যমে মাফ চাইলে আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন। এতে করে নতুন শুরু হওয়া বছরটা কবরের পাথেয় অর্জনের বছর হতে পারে। রাসুলে পাক (সা.) বলেন, আমি দিনে সত্তর বারের ঊর্ধ্বে ভিন্ন বর্ণনামতে একশত বারের ঊর্ধ্বে তাওবা করি। এই ভেবে রাসুলে পাক (সা.) সত্তর বার তাওবা করতেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়েছে বা নিজের ওপর জুলুম করেছে অতঃপর আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া ক্ষমা কারার কে আছে?’

পেশ ইমাম বলেন, অতএব হিজরি নববর্ষ উদযাপন হবে তাওবার মাধ্যমে। হিজরি নববর্ষের শুরুর মাস তথা মুহাররম মাসটি ও খুব গুরুত্বপূর্ণ মার্যাদা পূর্ণ মাস। এ মাসটিকে বলা হয় শাহরুল্লাহিল মুহাররম, তথা সম্মানিত আল্লাহর মাস। সব মাসইতো আল্লাহ তায়ালার মাস। মুহররম মাসটিকে বিশেষ মর্যাদা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে আল্লাহ তায়ালার মাস। রাসুলে পাক (সা.) বলেন, আশুরা তথা মুহাররমের দশ তারিখের রোজার বিনিময়ে আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে আশাকরি আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে পূর্বের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। এই রোজা রাখার নিয়ম হলো দশ-ই-মুহাররমের সাথে পূর্বে অথবা পরে একদিন যোগ করে দুটি রোজা রাখা। তাওবা ও ইবাদাতের মাধ্যমে হিজরির এই বর্ষকে আখিরাতের পুঁজি হিসেবে গঠন করার আল্লাহ তায়ালা যেন তৌফিক দান করেন। আমিন।

ঢাকার মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, মুহাররম মাস হিজরি সনের প্রথম মাস। এ মাসের সম্মান ও মর্যাদা অধিক হওয়ার কারণে রাসুল (সা.) এ মাসকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাস বলে অভিহিত করেছেন। রমজানের পরেই এ মাসের রোজা অন্যান্য নফল রোজা থেকে অধিক গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পন্ন বলে ইসলামি শরীয়তে প্রমাণিত। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত নবী করীম (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। (সহীহ মুসলিম ২/৩৬৮)। খতিব এ মাসের শিক্ষা হিসাবে মুসলিমদেরকে অধিক পরিমাণে নেক আমল করার সাথে সাথে আশুরার দিনে নকল কবর বানানো, কৃত্রিম বিলাপ ও মর্সিয়া, ক্রন্দন, মাতম এবং ছুরি মেরে নিজের বুক ও পিঠ রক্তাক্ত করা বিদআত ও অনৈসলামি কার্যকলাপ। আল্লাহ সকলকে কবুল করেন।

নগরীর দক্ষিণ মুগদা ব্যাংক কলোনি রসুলবাগ জামে মসজিদের খতিব আল্লামা আব্দুল গণি আজ জুমার বয়ানে মুহাররমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, ঈমানী তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে হিজরি নববর্ষ উদযাপন করতে হবে। মহান আল্লাহপাকের নৈকট্য হাসিলে প্রত্যেক মুসলমানকেই তাকওয়াভিত্তিক জিন্দেগি অর্জন করতে হবে। খতিব বলেন, নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেন, এই মাসে এমন একটি দিন আছে (আশুরার দিন) যাতে আল্লাহ তায়ালা অতীতে একটি স¤প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর স¤প্রদায়কে ক্ষমা করবেন (তিরমিযী : নং ৭৪১)।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, সৃষ্টির শুরু থেকে মুহাররমের ১০ তারিখ তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ফলে আশুরার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন, আসমান ও জমিনসহ সমগ্র সৃষ্টিকুলের প্রাথমিক বিভাজন প্রক্রিয়ার সূচনা হয় আশুরায়। হযরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টি ও পৃথিবীতে অবতরণ, মহাপ্লাবনের সময় হযরত নুহ (আ.) এর নৌযানের যাত্রা শুরু এবং প্লাবনের পরিসমাপ্তি এই আশুরাতেই ঘটেছিল। হযরত মুসা (আ.) ও বনী ইসরাঈলের সমুদ্রপথে রওনা এবং অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি লাভের দিনটি ছিল আশুরা। এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সা.) আশুরার দিনে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার কথা বলেছেন। কারবালার শিক্ষা গ্রহণ করে দ্বীনের জন্য যে কোনো ত্যাগ ও কোরবানির জন্য প্রস্তুত থাকা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফকি দান করেন। আমীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুৎবা পূর্ব বয়ান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ