পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা মহামারীতে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত, প্রতিদিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে, তখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের খবর বাড়তি উদ্বেগ তৈরি করেছে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। কিন্তু সজাগ না হলে যে কোনো সময় সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে জনস্বাস্থ্যবিদেরা আশঙ্কা করছেন। কেননা, ইতোমধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে।
এ বছরের শুরু থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে মোট ১ হাজার ৫৭৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ১৪৯ জন। চলতি বছরে যত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন, তার ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশই জুন মাসে। এই সংখ্যা আরও বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গু ও করোনার উপসর্গ প্রায় অভিন্ন। জ্বর, শ্বাসকষ্ট দুই রোগেরই উপসর্গ। তবে করোনা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যেভাবে অকেজো করে দেয়, ডেঙ্গু তা করে না। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা। সাধারণত ভবন বা সড়কের পাশে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা জন্ম নিয়ে থাকে। তাই এডিস মশা যাতে জন্মাতে না পারে সে জন্য কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। যেহেতু বর্ষা শুরু হয়েছে এবং এটা ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম, সেহেতু এই জ্বরে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হতে পারে, এমন আশঙ্কা বাস্তবসম্মত। তাই ডেঙ্গু জ্বর এড়ানোর জন্য সতর্কতা এবং এই জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। ডেঙ্গু জ্বর বেশ যন্ত্রণাদায়ক, তা স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বা মৃত্যু ঘটাতে পারে।
ডেঙ্গু ও করোনার উপসর্গ প্রায় অভিন্ন। জ্বর, শ্বাসকষ্ট দুই রোগেরই উপসর্গ। তবে করোনা শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে যেভাবে অকেজো করে দেয়, ডেঙ্গু তা করে না। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা। সাধারণত ভবন বা সড়কের পাশে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা জন্ম নিয়ে থাকে। তাই এডিস মশা যাতে জন্মাতে না পারে, সে জন্য কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়েছে।
মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাস কয়েক আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওয়েবিনার আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল, যাতে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ওই আলোচনায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম মশার উপদ্রব বাড়ার বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সবার সমন্বিত ও কঠোর উদ্যোগের ফলে ২০২০ সালে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ছিল। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল।
ঢাকার খাল ও পয়ঃপ্রণালি পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব সম্প্রতি ওয়াসার কাছ থেকে নিয়ে সিটি করপোরেশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এরপর তারা খাল উদ্ধার অভিযানে থমকে থাকলেও পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এখনো ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। অঙ্কুরেই এর বাহন এডিস মশা বিনাশ করতে হবে। বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে ডোবা-নালা কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
ঢাকা দক্ষিণের সিটি মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেছেন, কোনো ভবনের নিচে পানি ও ময়লা-আবর্জনা জমে থাকলে সেই ভবনের মালিকই দায়ী থাকবেন। অনেক সময় মালিকেরা ভবনে থাকেন না বলে কর্মচারীদের ওপর দায় চাপানো হয়। কিন্তু মূল দায় মালিকেরই। কেবল ব্যক্তিমালিকানাধীন বা বেসরকারি ভবন নয়, সরকারি ভবনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অফিসের প্রধান নির্বাহীকেও দায় নিতে হবে। করোনাকালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়লে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তাই ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে সংক্রমণ বাড়ার আগেই।
দেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমেই এ জ্বরের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। তবে সারা বছরই যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। বর্ষা মৌসুম এখনও শেষ হয়নি। কাজেই ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার যে বংশবিস্তার ঘটবে সেটি অনুমেয়। করোনা সংক্রমণের কারণে এমনিতেই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে। বাস্তবতা হচ্ছে করোনা রোগীদের ভিড়ের কারণে অন্য রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। এরপর যদি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়, তাহলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার পক্ষে সেই চাপ সামলানো কঠিন হয়ে যাবে।
ডেঙ্গুজ্বর রোধ করার একমাত্র উপায় এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা। তাই সিটি করপোরেশনকে নিয়মিত মশা নিধন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। লোক দেখানো নিধন বা অভিযান চালালেই শুধু হবে না। তবে এডিস মশার বংশবিস্তারের যে ধরন তাতে সিটি করপোরেশনের চেয়ে নগরের বাসিন্দাদের দায়িত্ব বেশি। বৃষ্টিপাতের কারণে ঘরের ভেতরে ও বাইরে দুই জায়গায়ই এ মশা জন্মাতে পারে। ঘরের ভেতরে খালি পাত্রে জমে থাকা পানি এবং ঘরের বাইরে ডাবের খোসা, নির্মাণাধীন ভবনে জমা পানিতে এ মশা বংশ বিস্তার করে। এজন্য নগরবাসীর দায়িত্ব অনেক। তাদের সতর্কতা ও সচেতনতা জরুরি।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।