পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদের পর দেশব্যাপী টানা ১৯ দিন ধরে কঠোর লকডাউনের পর আজ চালু হচ্ছে গণপরিবহন। যার ফলে দীর্ঘদিন বসে থাকা সব গণপরিবহনের শ্রমিক ও চালকরা গতকাল মঙ্গলবার থেকে যানবাহনের চলাচলের প্রস্তুতি শুরু করছে। আজ রাস্তায় একসঙ্গে নামছে হাজার হাজার যানবাহন। এতে করে নতুন করে ভোগান্তির দেখা পাবে রাজধানীবাসীর। এছাড়াও ভারি বর্ষণের কারণে অনেক এলাকায় পানি জমে রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো কোনো রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। পিচ-খোয়া উঠে স্থানে স্থানে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। সৃষ্টি হওয়া ছোট-বড় গর্ত এড়িয়ে যানবাহন চলছে এঁকেবেঁকে। ধীরগতিতে যান চলায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের চলাচলরতদের দুর্ভোগ পিছু ছাড়েনি। ভারি বৃষ্টির কারণে এই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে কম বেশ খানাখন্দক সৃষ্টি হয়েছে এবং হচ্ছে। রাজধানীর প্রবেশপথে ঢাকা-গাজীপুর, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেরও বেহাল অবস্থা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে গত ঈদের ভাঙাচোরা সড়কের জন্য যানজটের সৃৃষ্টি হয়েছিল। মহাসড়কে দুর্ভোগের আরেক কারণ, নারায়ণগঞ্জের শিল্পঘন এলাকায় রাস্তার পাশে কলকারখানার গাড়ি পার্কিং। একই অবস্থা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা অংশে। মহাসড়কে অবৈধ পার্কিং ঠেকাতে হাইওয়ে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেইনি। এখন সেই আবস্থান নতুন করে গণপরিবহন রাস্তায় নামছে। তবে হাইওয়ে পুলিশের পূর্বাঞ্চলের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ বলেন, সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী সড়ক মহাসড়কে অর্ধেক বাস চলাচল করার অনুমতি রয়েছে। আমরাও সড়ক মহাসড়কে কঠোর অবস্থায় থাকব, আশা করছি- সড়ক-মহাসড়কে কোনো যানজট সৃষ্টি হবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে, কঠোর লকডাউনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক মেরামত সম্পন্নের নির্দেশনা ছিল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। সে হিসাবে লকডাউনে কাজসম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো চিত্রই দৃশ্যমান। ক্ষতিগ্রস্ত বেশিরভাগ সড়কেই দায়সারাভাবে সংস্কার কাজ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে আজ থেকে সব গণপরিবহনগুলো রাস্তায় নামার কারণে সড়কে চাপ যেমনি পড়বে তেমনি দুর্ভোগই মাত্রাও বাড়বে। যার ফলে ভাঙাচোরা সড়কের জন্য দীর্ঘযানজটের আশঙ্কা করছে যাত্রী সাধারণরা। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ বুধবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা মহানগরসহ সব দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচল করবে। আমরা যেসব নির্দেশনা দিয়েছি, সে অনুযায়ী গাড়ি চালানোর জন্য ঢাকা মহানগরে চলাচলকারী সবরুট মালিক সমিতি/পরিবহন কোম্পানির প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সরকারি হিসাবে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাতটি, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের চারটি, ঢাকা-ময়মনসিংহের তিনটি স্থান যানজটপ্রবণ। ভাঙাচোরা সড়ক, নির্মাণকাজ ও অব্যবস্থাপনায় এসব স্থানে যানজট হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে কঠোর লকডাউনের সময় রাস্তা ফাঁকা থাকবে সে সময় রাস্তা সংস্কারের মন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনার পর সড়ক পরিবহন বিভাগ বিস্তারিত পরিকল্পনা করে। লকডাউন শেষ হওয়ার আগে আগে এসব কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি এখনও। তাই দুর্ভোগের শঙ্কা রয়ে গেছে।
বিভিন্ন মহাসড়ক সরেজমিনে ঘুরে গেছে, রাস্তার অনেক জায়গা ভাঙাচোরা। কঠোর বিধিনিষেদের পর দুর্ভোগের কারণ হবে মহাসড়ক। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর কিছু কিছু সড়ক-মহাসড়কে ভাঙাচোরা মেরামতে ইট-বালু ফেলছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। কিন্তু তাও ১০/১২ দিনপর্যন্ত টিকবে কি-না, সংশয় রয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেছেন, আমাদের দেশে প্রতিবছরই ঈদের আগে সড়কের ভাঙাচোরা মেরামত করা হয়। দুই মাস আগেও করা হয়েছে। সঠিকভাবে করা হলে আবার মেরামত করার প্রয়োজন পড়ত না। তবে কঠোর লকডাউনে সড়ক মেরামত করতে পারত। কিন্তু তা করেনি। ঈদের আগে মেরামতের পুরো প্রক্রিয়াই ত্রæটিপূর্ণ। ইট-বালু ফেলে খানাখন্দ ভরাট করা হয়। এক বৃষ্টিতেই তা ধুয়ে যায়। নিয়মিত সংস্কার না করায় সড়ক-মহাসড়কের এ হাল হয়েছে উল্লেখ করে ট্রাকচালক আমির হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দেশব্যাপী লকডাউনে বন্ধ ছিল দূরপাল্লাসহ সব গণপরিবহন। এ সময়ে দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের খানাখন্দ সংস্কার করলে টেকসইভাবে করা যেত। আমির হোসেন অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, সামনের দিনগুলোতে আরো কঠিন সময় পার করতে হবে, এসব সড়কে যাতায়াতকারীদের।
টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কাভার্ড ভ্যানচালক মহসিন মিয়া বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঘাটাইল অংশে অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে আগামীকাল থেকে দেশব্যাপী চালু হচ্ছে সকল গণপরিবহন সড়কে চাপ বাড়বে দ্বিগুণ। সড়কে খানাখন্দকের মাত্রাও বাড়বে। তাই অবলম্বে সড়কের মেরামতের জোড় দাবি জানান তিনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোথাও দেবে গেছে, কোথাও বা ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি মহাসড়কের পাশে মানসম্পন্ন ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির সময় রাস্তায় পানি জমছে। এ অবস্থায় দ্রæতগতির যানবাহন চালকদের গাড়ি চালাতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে সারাদেশে তিন হাজার পাঁচ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক ভাঙাচোরা। যা দেশের সড়ক-মহাসড়কের সোয়া ১৬ ভাগ। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়কের ৪৮৭ কিলোমিটার ভাঙাচোরা, যা জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘের প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে ১৩২ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের অবস্থা খুবই খারাপ যান চলাচলের অনুপযুক্ত হলেও দীর্ঘদিন ধরে এসব সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে না। এসব রাস্তা মেরামতে আগামী পাঁচ বছরে ২০ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) মহাসড়ক উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ (এইচডিএম) বিভাগের প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।
চলছে ধোয়ামোছা, টার্মিনালে সাজ সাজ রব
আজ থেকে চালু হচ্ছে গণপরিবহন। বিধিনিষেধ শিথিলের ঘোষণার পরপরই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পরিবহন মালিকরা। এজন্য বাস, ট্রেন ও লঞ্চের টার্মিনালগুলো প্রস্তুত রয়েছে। ধোয়ামোছার কাজ করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। দীর্ঘদিন পর কাজে নামতে পেরে তারাও আছেন খোশমেজাজে।
গতকাল দুপুরে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রী পরিবহনের জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে রেল। জীবাণুনাশক ছিটিয়ে টার্মিনাল পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। বগিগুলোও ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত করছেন কর্মীরা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখা গেছে তদারকি করতে। যাত্রীদেরও দেখা গেছে কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে। কমলাপুর রেল স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, সব প্রস্তুতি নিয়েছি। কাল ভোর থেকে ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর ও ২০ জোড়া কমিউটার ট্রেন চলবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এখন থেকে যত আসন তত টিকিটি দেওয়া হচ্ছে।
গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি কাউন্টার ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। টার্মিনালও পরিচ্ছন্ন করে যাত্রীদের চলাচলের উপযোগি করা হয়েছে। বাস মালিকরা জানান, দীর্ঘদিন বসে থাকায় অনেক চাকা ফেটে গেছে, অনেক ব্যাটারি ডাউন হয়েছে। সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। একই চিত্র লঞ্চেরও। লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, বুধবার থেকে সব স্বাস্থ্যবিধি মেন লঞ্চ চলাচল করবে। প্রতিদিন যাত্রা শুরু ও শেষে লঞ্চ পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মালিকদের।
দীর্ঘদিন লকডাউন থাকার পর হঠাৎ করে হাজার হাজার যানবাহন রাস্তায় নামায় আজ থেকে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন অনেকইে। সে কারণে ট্রাফিক পুলিশ বা হাইওয়ে পুলিশের আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকা উচিত। তা না হলে চলতে পথে আটকে যাবে যানবাহন। যানজটে আটকে থাকবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ট্রাফিক পুলিশের প্রস্তুতি সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, নিয়মিত ট্রাফিক বিভাগে যারা কাজ করছে; তারা আছে। ট্রাফিকের অব্যবস্থাপনার কারণে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয় না। এক সাথে অনেক গাড়ি রাস্তায় বের হয়; সে জন্যই যানজটের সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, ট্রাফিকে যারা দায়িত্ব পালন করছেন; তারা লকডাউনেও কাজ করেছেন। তারা সবাই রাস্তায় ছিলেন এবং থাকবেন। আমাদের নতুন কিছু নেই। হাইওয়ে পুলিশের এসপি (মিডিয়া) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, মহাসড়কের সার্বিক অবস্থা মনিটরিং করা হবে। এছাড়াও পেট্রোল টিম, মোবাইল টিম, মোটরসাইকেল টিম বাড়িয়ে দেয়া হবে। যানজটমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।