Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হিজরি সনের মর্যাদা ও গুরুত্ব

আলম শামস | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মহররম। এ মাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইসলামের জয়-পরাজয়, উত্থান-পতন ও সুখ-দুঃখময় বিভিন্ন ঘটনা। মহররম শব্দটি সম্মানিত, পবিত্র ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। মহররম মাসের ১০ তারিখকে ‘আশুরা’ বলা হয়। আশুরা দিবসের কারণে মহররম মাস বেশি ফজিলতপূর্ণ। হজরত হোসাইনের (রা.) শাহাদত আশুরাকে আরো স্মরণীয় করেছে। মূলত হিজরতের ঘটনাকে স্মরণ করে হিজরি সনের প্রবর্তন করা হয়েছে। এ সনের গণনা হয় চাঁদের হিসেবে। এ জন্য হিজরি বর্ষকে চান্দ্রবর্ষও বলা যায়। ইসলামের অভ্যুদয়ের পর পবিত্র মক্কায় ইসলাম বিরোধীদের নির্যাতনের মুখে নবুয়তের ১৩তম বছরে হজরত মুহাম্মদ (সা.) তৎকালীন ইয়াসরিবে (আজকের মদিনায়) হিজরত করেন। অবশ্য এরও কয়েক বছর আগে থেকে নবীজির (সা.) নির্দেশে অনেক সাহাবি একা, সপরিবারে ও কোনো কোনো পর্যায়ে কাফেলাসহ প্রথমে আবিসিনিয়ায় ও পরবর্তী সময়ে ইয়াসরিবে হিজরত করেন। জীবন ও বিশ্বাস রক্ষায় মুসলিমরা ঘর-বাড়ি ও স্বজন ত্যাগ করে হিজরতের পথ বেছে নেন। হিজরতের পর থেকেই মুসলমানদের ঘুরে দাঁড়ানোর যুগের সূচনা হয়। ইসলামের বিকাশ ও জয়যাত্রার ইতিহাসে হিজরতের তাৎপর্য তাই ব্যাপক। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুকের (রা.) শাসনামলে রাষ্ট্রীয় কাজের সুবিধার্থে সন গণনার প্রয়োজন হলে এই হিজরত থেকেই ইসলামী সন গণনা শুরু করার নির্দেশ জারি করেন।

মুসলমানদের কাছে হিজরি ক্যালেন্ডার অন্য যে কোনো ক্যালেন্ডারের মতো নয়। মুসলমানরা এ ক্যালেন্ডারের হিসাবে নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজের মতো ইবাদতগুলো পালন করে থাকে। আর এসব পালন করতে গিয়ে তাদের অনেক ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করতে হয়। মুসলমানের জীবনে কোনো ভোগ নেই, ত্যাগই তার সাধনা-এটাই মনে করিয়ে দেয় এই ক্যালেল্ডার। কারণ হিজরি ক্যালেন্ডার কোনো মানুষের জন্ম বা মৃত্যুকে উপলক্ষ করে শুরু হয়নি। তা শুরু হয়েছে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তার সাহাবিদের জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করার মতো ত্যাগের চরম পরাকাষ্ঠা দেখানোর মধ্য দিয়ে। সে হিসেবে বলা যায়, হিজরি ক্যালেন্ডারের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হলো, জীবনে ত্যাগ ও তিতিক্ষার প্রতিফলন ঘটানো।

মুসলিম জীবনে হিজরি সন ও তারিখের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কারণ হিজরি সন এমন একটি সন, যার সাথে মুসলিম উম্মাহর তাহজিব-তামাদ্দুন ও ঐতিহ্যের ভিত্তি সম্পৃক্ত। মুসলমানদের রোজা, হজ, ঈদ, শবেবরাত, শবেকদর, শবেমিরাজসহ ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান হিজরি সনের ওপর নির্ভরশীল। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও আনন্দ-উৎসবসহ সব ক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ হিজরি সনের অনুসারী। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, হিজরি সনের পহেলা মাস মহররম একের পর এক আমাদের দুয়ারে হাজির হয় ঠিক, কিন্তু হিজরি সনের নব আগমন উপলক্ষে হৈ-হুল্লোড় নেই, নেই কোনো প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়ার বিশেষ কোনো আয়োজন। যেমনভাবে বিশেষ আয়োজন পরিলক্ষিত হয় খ্রীষ্টীয় নববর্ষ কিংবা বাংলা নববর্ষের আগমনে।

খ্রীষ্টীয় নববর্ষ কিংবা বাংলা নববর্ষের আগমনে আমাদের দেশের সংস্কৃতিপ্রেমিকরা সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির চর্চায় মেতে ওঠে। এতে ইসলামী বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা করা হয় না। তথাকথিত সংস্কৃতিপ্রেমীদের সাথে সাথে আমাদের একশ্রেণির তারুণ-তরুণী নববর্ষ উদযাপনের নামে অশ্লীলতা ও বেলেল্লাপনায় গা ভাসিয়ে দেয়। খ্রীস্টিয় নববর্ষ কিংবা বাংলা নববর্ষকে অধিকতর গুরুত্ব তথা আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। আর হিজরি নববর্ষের প্রতি প্রদর্শিত হয় চরম অবহেলা। দেখে মনে হয় হিজরি নববর্ষের যেন আমাদের প্রয়োজনই নেই। অথচ হিজরি নববর্ষকে গুরুত্বসহকারে পালন করাই ছিল আমাদের মুসলিম অধ্যুষিত দেশে কাম্য।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, সনের প্রথম মাস হলো মহররম। মহররম একটি তাৎপর্যমন্ডিত ও বরকতময় মাস। মুসলিম ইতিহাসে এ মাসটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। কুরআন কারিমে এ মাসকে ‘শাহরুল্লাহ’ তথা আল্লাহর মাস বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, ‘চারটি মাস রয়েছে যেগুলো সম্মানিত মাস। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মহররম। (সুরা তাওবাহ : ৩৬)। আর এ মাসেই রয়েছে ফজিলতপূর্ণ ‘আশুরা’। মহররমের দশম তারিখে কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। এছাড়াও বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই দিনে ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও অনেক ঘটনা ঘটবে। মহররমের ফজিলতপূর্ণ অনেক আমল রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নফল রোজা। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুল (সা.) কে এই দিন (আশুরার) এবং এই মাসে রমজানের রোজার চেয়ে অন্য কোনো রোজাকে এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি (মিশকাত শরিফ)। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমার বিশ্বাস যে, আশুরার রোজার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা বিগত এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন’ (তিরমিজি শরিফ)।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হিজরি সনের মর্যাদা ও গুরুত্ব
আরও পড়ুন