Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে কাল থেকে প্রতিবাদী অবস্থান

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০২১, ২:৫৪ পিএম

সিআরবি প্রাণ -প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিবাদে আগামী কাল বুধবার থেকে প্রতিদিন বিকেলে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে
নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম। সিআরবি এলাকা থেকে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বে (পিপিপি) হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্প সরিয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ের অন্য কোন জায়গায় স্থানান্তরের দাবিতে নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মিলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরীর বাবুল। এ সময় নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক প্রফেসর ড অনুপম সেন সহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর হৃদপিন্ডে অবস্থিত, হাজার হাজার বৃক্ষরাজী শোভিত, ছোটবড় টিলা পাহাড় নিয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে সিআরবি। চট্টগ্রাম শহরে সিআরবির মত অপর কোন উন্মুক্ত স্থান নেই, যেখানে গিয়ে নগরবাসী বুকভরে শ্বাস নিতে পারেন। পাহাড় ও প্রাচীন বৃক্ষবেষ্টিত সিআরবিকে চট্টগ্রামবাসী শ্বাস দেয়ার উন্মুক্ত সবুজ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এখানে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের সার্বজনীন অনুষ্ঠানে সর্বস্থরের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। তাছাড়া এখানে উদযাপিত হয় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শাহাবুদ্দিনের বলীখেলা: ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাপ্রেমী মানুষ জড়ো হয়ে স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলনে একাত্বতা ঘোষণা করে এবং ১৬ ডিসেম্বর সিআরবিতে এসে বিজয়ের জয়গান গেয়ে ৩০ লক্ষ শহীদ, ২ লক্ষ সম্ভ্রম হারানো মা-বোনকে হৃদয় নিংড়ানো সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে স্মরণ করে। উদযাপিত হয় বসন্ত উৎসব। তাছাড়া রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীও এখানে অনুষ্ঠিত হয়। প্রমা বোধন আবৃত্তি পরিষদসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো প্রায় প্রতিদিন সিআরবিকে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। এসব অনুষ্ঠানে অগণিত মানুষ স্বপরিবারে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করে। তাই কালের পরিক্রমায় সিআরবি হয়ে উঠে আবহমান বাঙালী সংস্কৃতিচর্চার প্রাণকেন্দ্র।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইফেটিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান অফিনিয়নের (ইকো) উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণায় সিআরবিতে ১৯৭টি উদ্ভিদ প্রজাতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বড়গাছ ৭৪ প্রজাতির ও মাঝারিগাছ ৩৭ প্রজাতির, গুল্ম প্রজাতি ৬৭টি এবং লতা জাতীয় উদ্ভিদ ১৪ প্রজাতির বিপন্নপ্রায় ৯টি প্রজাতির গাছও আছে। এখানে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (ইকো), ভেনম রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, চিটাগাং বার্ডস ক্লাব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গবেষণাগারসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান গবেষণার স্থান হিসাবে চিহ্নিত প্রাকৃতিক গবেষণাগার। এখানে হাসপাতাল হলে প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, মানুষের চেতনা, নতুন প্রজনের দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষা করে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কোনো উন্নয়ন হতে পারে না। সিআরবি আমাদের শৈশবের স্মৃতিধন্য বিচরণক্ষেত্র। সিআরবি রক্ষা করতে হবে চট্টগ্রামের স্বার্থে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিধন্য সিআৱৰি। ১৯৭১ এ স্বাধীনতা যুদ্ধে বহু মানুষ শহীদ হয়েছেন এখানে। শহীদের সমাধির উপর রক্তাক্ত স্বাধীনতার ইতিহাস ম্লান করতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি, সুকৌশলে চট্টগ্রামের হৃৎপিন্ড ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে। হাসপাতাল নির্মাণের নির্ধারিত স্থানেই তিনশ শতবর্ষী গাছ আছে। প্রস্তাবিত স্থানটিতে রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুর রব, শহীদ শেখ নজির আহাম্মদ, শহীদ এম. এ. মনোয়ার হোসেন, বিমল সিং, ফখরুল আলম, মোঃ সিরাজউদ্দিন, আলী নূর চৌধুরী, মহিউদ্দিন, নুরন্নবী চৌধুরী ও গঙ্গারামের স্মৃতিস্তম্ভ। শহীদ আবদুর রবের পৈত্রিক বাসস্থান এখানে সে বাসা থেকে তিনি যুদ্ধে যান। যুদ্ধের ইতিহাস মুছে দিতে এখানে বাণিজ্যিক হাসপাতাল হতে পারে না।

উল্লেখিত পরিবেশ ও প্রতিবেশগত কারণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রজ্ঞাপন জারী করে, যাতে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি সম্মতি প্রদান করলে ২৫ জানুয়ারী, ২০০৯ সালে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। উক্ত ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানের জোন-৩ এর ৮৩ সংস্কৃতিচর্চার প্রাণকেন্দ্র ও চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবিকে কালচার এণ্ড হেরিটেজ ঘোষণা করা হয় এবং সেটা রক্ষার জন্য ৮টি নির্দেশিকা প্রদান করা হয়। কালচার এণ্ড হেরিটেজ এর ৮টি নির্দেশিকা বাস্তবায়নকারী হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার উপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সিআরবিকে প্রোটেকটেড এরিয়া হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়। ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে এটি সংরক্ষণের জন্য রেলওয়ে, চউক, সিটি কর্পোরেশনসহ
সেবাদানকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিআরবিতে বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মান সংবিধান পরিপছি। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত বিষয়টি অবহিত হলে জনস্বার্থ বিরোধী এই প্রকল্প চট্টগ্রামে রেলওয়ের অন্য কোন জায়গায় স্থানান্তরের নির্দেশ দিবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিআরবি

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ