Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাস্টা আইন : সউদী আরবের কঠোর প্রতিক্রিয়া

প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভেটোকে প্রত্যাখ্যান করে কংগ্রেসে পাস হওয়া জাস্টা (জাস্টিজ এগেইনস্ট স্পনসরস অব টেরোরিজম অ্যাক্ট) বিল পাস হওয়ায় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই বিলকে টুইন টাওয়ার হামলায় দায়ী রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মামলা করার অনুমতি সংক্রান্ত বিল বা ‘নাইন-ইলেভেন’ বিল বলেও অভিহিত করা হয়। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ায় নাইন-ইলেভেনের ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা ক্ষতিপূরণ চেয়ে সউদী সরকারের যে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে মামলা করতে পারেন। যার বা যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হোক না কেন, তাকে বা তাদেরকে মার্কিন আদালতে মামলার বিষয় মোকাবিলা করতে হবে। প্রধানত সউদী আরবকে টার্গেট করে এ ধরনের একটি আইন করার আলোচনা শুরু হয় ২০০৯ সালে। গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে বিলটি উত্থাপন করা হয়। গত মে মাসে তা মৌখিকভাবে পাস হয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের নি¤œকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদেও সেটি পাস হয়। এরপর প্রেসিডেন্ট ওবামা বিলটিতে ভেটো দেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ওবামার ভেটো প্রত্যাখ্যান করে কংগ্রেসের উভয় কক্ষ। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ায় সঙ্গতকারণেই তীব্র ও কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সউদী আরব। সউদী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সউদী আরব পাস হওয়া বিলকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এর সর্বনাশা ও বিপজ্জনক পরিস্থিতির বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে বিবেচনা করার তাকিদ দিয়েছে। বলেছে, এই আইন রাষ্ট্রগুলোর অনাক্রম্য ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের জন্যই হুমকি হয়ে দেখা দেবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, বিলটি পাসের জোর তৎপরতার প্রেক্ষাপটে গত মাসে সউদী বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের পাঠানো এক বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেয়া হয়, বিলটি পাস হলে সউদী আরব যুক্তরাষ্ট্রে ৭৫ হাজার কোটি ডলারের বন্ড ও অন্যান্য বিনিয়োগ তুলে নেবে। সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেস সউদী আরবের কাছে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সউদী আরব অস্ত্র কেনা বন্ধ করে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের শত শত নাগরিক বেকার হয়ে পড়তে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত মিত্র সউদী আরব। সন্দেহ নেই, এই বিতর্কিত বিলটি পাস হওয়ায় দু’দেশের এই সম্পর্ক ও মিত্রতায় চিড় এমনকি বড় আকারে ফাটল দেখা দিতে পারে। সউদী বাদশাহর হুঁশিয়ারিতে তার আভাস রয়েছে। অন্যদিকে উপসাগরীয় অন্যান্য দেশ এই বিলের বিরুদ্ধে থাকায় ওই সব দেশের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আর স্বাভাবিক থাকবে বলে মনে হয় না। বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস মধ্যপ্রাচ্যে তার মিত্র হারানোর ঝুঁকি নিয়েই বিলটি পাস করেছে। এতে দূরদর্শিতার পরিচয় কতটা ফুটে উঠেছে, সেটাই প্রশ্ন। প্রেসিডেন্ট ওবামা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিলটির বিরোধিতা করেছেন। বরাবরই তিনি বলেছেন, এই বিল পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণœ হবে। বিল পাস হওয়ার পর তিনি বলেছেন, এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত এবং বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে। এটা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও স্বার্থকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। এমনকি তা বিশ্বের নানা প্রান্তের অধিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ করে দিতে পারে। শুধু প্রেসিডেন্ট ওবামাই নন, মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সিআইএ’র তরফেও ইতোপূর্বে এই বলে সতর্ক করা হয় যে, বিলটি পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। অন্য দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের বিচারের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে যে দায়মুক্তি দেয়া হয়, তা আর থাকবে না। ফলে অন্য দেশে কর্মরত মার্কিন বাহিনী বা কর্মকর্তাদেরও একইভাবে বিচারের আওতায় আনার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। আশঙ্কার এই গুরুতর দিকটিও কংগ্রেস আমলে নেয়নি। সব দিকের বিচারেই বলা যায়, প্রেসিডেন্ট ওবামার কথাই ঠিক, এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত।
লক্ষ্য সউদী আরব হলেও বিলটিতে নাইন-ইলেভেনের হামলা কিংবা সউদী আরবের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এখানে একটি সূক্ষ্ম কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় নাইন-ইলেভেনে নিহতদের স্বজনরা যেমন সউদী আরবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে মামলা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করে নিতে পারবেন, তেমনি যে কোনো মার্কিন নাগরিক অন্য যে কোনো দেশের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে কিংবা কোনো হামলায় মার্কিন নাগরিকের হতাহত হওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করে ক্ষতিপূরণ আদায় করার সুযোগ পাবেন। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতি কারো অজানা নেই। সেখানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভেদ সৃষ্টি করে, সংঘাত জিইয়ে রেখে ফায়দা ওঠানোর নীতিই সে অনুসরণ করছে। এ-ও লক্ষণীয়, সেখানে শিয়া রাষ্ট্রগুলোকে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সে সহযোগিতা করছে। পক্ষান্তরে মিত্র সুন্নি রাষ্ট্রগুলোকে দাবিয়ে রাখছে কিংবা তাদের হেয়প্রতিপন্ন ও ক্ষতির শিকারে পরিণত করছে। পাস হওয়া জাস্টা বিল থেকেও এটা পাবিষ্কারই বোঝা যায়। সউদী আরবসহ ওই অঞ্চলে সুন্নি রাষ্ট্রগুলোকে বিষয়টি গভীরভাবে এখন ভাবা দরকার। জাস্টা আইনকে যে সাধারণীকরণ করা হয়েছে তাতে মুসলিম দেশগুলোর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তবে কথায় বলে, ইট মারলে পাটকেল খাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। এক্ষেত্রেও তা রয়েছে। জাস্টা আইনের অনুরূপ আইন যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশও করে এবং একই ধরনের ঘটনা বা অভিযোগে মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং তার ফলাফল অভিন্ন হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও বিপাকে পড়ে যাবে। বিশ্লেষকদের মতে, আইনটি যে কোনো দেশের সার্বভৌমত্বের জন্যও হুমকিস্বরূপ। কারণ, এই আইনে ব্যক্তির পাশাপাশি কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও মামলা করার সুযোগ আছে। সার্বিক বিবেচনাতেই আইনটি অনভিপ্রেত ও বিপজ্জনক। এটি কার্যকর বা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত নয়। এই সত্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশেষত তাদের রাজনীতিক ও আইন প্রণেতাদের বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে হবে। জানা গেছে, কংগ্রেস আইনটি পুনর্বিবেচনা করতে পারে। রিপাবলিকান দলের নেতারা এই পুনর্বিবেচনার পক্ষে। এটি শুভ লক্ষণ।

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাস্টা আইন : সউদী আরবের কঠোর প্রতিক্রিয়া
আরও পড়ুন