পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা। বিশ্বের তাবৎ অর্থনীতি করোনাকারণে মারাত্মক মন্দার শিকার হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল এতদিন। সেই অবস্থান এখন থাকছে না। অর্থনীতির প্রায় সকল সূচক নিম্নমুখী। উন্নতির লক্ষণ তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। রফতানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স- অর্থনীতির এই দুই স্তম্ভ ইতোমধ্যে বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরের প্রথম মাসে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ রফতানি পতন ঘটেছে। আর রেমিট্যান্স আয়ে পতন হয়েছে ২৮ শতাংশ। রফতানি আয় মূলত গার্মেন্টপণ্যনির্ভর। করোনাসংক্রমণ রোধে লকডাউনসহ কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের কারণে গার্মেন্টেপণ্যের উৎপাদান ও রফতানি দুই-ই কমেছে। অন্যদিকে একই কারণে জনশক্তি রফতানিও কমছে। করোনাকালে বিদেশে কর্মী গেছে কম, উপরন্তু প্রায় ৫ লাখ দেশে ফিরে এসেছে। করোনা আমাদের কৃষিখাতকে তেমন স্পর্শ করতে না পারায় খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের তেমন সঙ্কট দেখা যায়নি। তবে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ার কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর দুর্বহ চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এখনো চাল, ডাল, আটা, তেল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম বাড়ছে। এর রাস টানা সম্ভব হবে, সেটাও মনে হচ্ছে না। মোটকথা, রফতানি আয়, রেমিট্যান্স ও কৃষি উৎপাদন মোটামুটি ঠিক থাকায় অর্থনীতি এতদিন ব্যাপক বিপর্যয়ের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়নি। রাষ্ট্র পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করা ছাড়াও মেগা প্রকল্পসহ উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের কাজও যতটা সম্ভব অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে। এখন অর্থনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নেওয়া হয়ে থাকে। এমনিতে কোনো বছরই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ষোলআনা বাস্তবায়ন হয় না। বছর শেষে কাগজ-কলমে দেখানো হয়, ৯০-৯৫ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। আসলে ৫০ শতাংশও বাস্তবায়িত হয় কিনা সন্দেহ। করোনাকারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন সর্বনিম্ন পর্যায়ে উপনীতি হয়েছে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, মেগাপ্রকল্পের বাস্তবায়ন ইত্যাদির জয়গান যতই ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হোক না কেন, প্রকৃত অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স কমার প্রবণতা তো আছেই, সেইসঙ্গে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত না হলেও খাদ্য ও কৃষিপণ্যের দাম ক্রমাগত উচ্চমুখী। বিনিয়োগ বলতে গেলে নেই-ই। কী দেশি, কী বিদেশি- কোনো বিনিয়োগই আসছে না। গত ১৪ বছরের মধ্যে বিনিয়োগ এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে। জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন, আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধির অপরিহার্যতা প্রশ্নাতীত। বিনিয়োগে খরাবস্থা অনেক দিন ধরে চলছে। করোনাকালে তা বেড়েছে। রাজস্ব আয়ও তলানিতে এসে ঠেকেছে। ওদিকে করোনায় দারিদ্র্য বেড়েছে; দরিদ্রের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। কর্মসংস্থান হারিয়েছে অন্তত ২২ লাখ মানুষ। প্রতি বছর অন্তত ২০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে, অথচ তাদের অধিকাংশেরই কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এভাবে প্রতি বছর বেকারদের সংখ্যা পুঞ্জিভূত হতে হতে কয়েক কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। কর্মাভাব ও অন্যান্য কারণে অনেকে পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে অন্তত ৬ কোটি মানুষ। তাদের বেশিরভাগ কর্মসংকটে পড়েছে। অনেকে একেবারে বেকার হয়ে গেছে। নতুন দরিদ্র ও কর্মহারা মানুষের জন্য চলতি বছরের বাজেটে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রচন্ড অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। কীভাবে তাদের এ অবস্থা থেকে উদ্ধার করা সম্ভব, সেটা যখন প্রধান বিবেচ্য বিষয়, তখন দেশের অর্থনীতির আরো নাজুক অবস্থায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।
অর্থনীতির বর্তমান হাল এবং ভবিষ্যতে অবনতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সমূহ আশঙ্কার জন্য আমাদের বাস্তবোচিত চিন্তা, পরিকল্পনা, সততা ও কর্মনিষ্ঠার দৈন্য এবং বাস্তবায়ন দক্ষতার অভাব বিশেষভাবে দায়ী। দায়ী দুর্নীতি, লুটপাট, দলীয়করণ, অসচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাব। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনাকালের নজিরবিহীন বাস্তবতা। বিশেষজ্ঞরা একমত, এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমাদের চলতে হবে, সামনে এগিয়ে যেতে হবে। করোনার বিদায় সহসা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কাজেই তাকে সঙ্গে নিয়ে জীবনযাপন, কর্মপ্রবাহ, অর্থনৈতিক কার্যক্রম, উন্নয়ন কর্মকান্ড, ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন-রফতানি ইত্যাদি সচল রাখতে হবে। বর্তমান অবস্থায় অর্থনৈতিক উত্থান ও বিকাশের জন্য বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বিনিয়োগ বাড়লে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার শুভ প্রভাব পড়বে। কর্মসংস্থানে গতি আসবে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে। দারিদ্র্য কমবে। পণ্য সরবরাহের সঙ্গে রফতানিও বাড়বে। একই সঙ্গে কৃষিকে বরাবরের মতোই বিশেষ অগ্রাধিকারে রাখতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তাসহ কৃষিপণ্যের যোগান ও মূল্য ন্যায়সঙ্গত পর্যায়ে স্থিতিশীল রাখার জন্য কৃষিবিকাশের বিকল্প নেই। রফতানিমুখী শিল্পের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে, যাতে রফতানি আয় বাড়ে। সেই সঙ্গে বিদেশে কর্মসংস্থানের জোর তৎপরতা চালাতে হবে। বেশি বেশি মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থান হলে রেমিট্যান্স আপনা আপনিই বাড়বে। সম্ভাবনার এই দিকগুলো কাজে লাগাতে হবে। এছাড়া আমাদের অবশ্য অবশ্যই করোনা নিরোধে সফল হতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিকাশে এটা এখনকার সবচেয়ে বড় পূর্বশর্ত। মানুষের জীবনযাত্রা, কাজকর্ম, চলাচল আজ মারাত্মক শ্লথতার শিকার। এ অবস্থার অবসানে করোনাসংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমিয়ে একটা স্বাভাবিক পরিবেশ-পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। করোনা মোকাবিলায় কঠোর লকডাউন চলছে। আগামীকাল বুধবার এটা উঠে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাসংক্রমণ এতে বাড়তে পারে। তাদের মতে, স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণই কেবল সংক্রমণ রুখতে পারে। টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত আছে, যাতে আরো গতি আনতে হবে। এ জন্য টিকার পর্যাপ্ত সংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব বেশির ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। আনলে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হবে, যা বিনিয়োগসহ অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভবপর ও গতিশীল পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য একান্তভাবেই প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।