মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
তিউনিসিয়ার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আননাহদার জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার মারুফকে গৃহবন্দী করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যগুলো এই খবর জানায়।
সাবেক যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী আনোয়ার মারুফ আননাহদার প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে অন্যতম। গত ২৫ জুলাই তারিখে প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদের প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত ও পার্লামেন্ট স্থগিত করে নিজের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা তুলে নেয়ার পর আনোয়ার মারুফ আননাহদার প্রথম নেতা, যার বিরুদ্ধে গৃহবন্দিত্বের আদেশ দেয়া হলো।
প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের এই পদক্ষেপকে দেশটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আননাহদাসহ সব রাজনৈতিক দলই প্রেসিডেন্টের আদেশকে ‘সাংবিধানিক অভ্যুত্থান’ হিসেবে মন্তব্য করেছে।
এর আগে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ বৃহস্পতিবার বলেন, পার্লামেন্ট স্থগিত করে তিউনিসিয়ার নির্বাহী ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেয়ার যে সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন, তার থেকে পিছু হটবেন না তিনি। সাইদের এমন ঘোষণার একদিন পরেই আনোয়ার মারুফকে গৃহবন্দী করা হলো।
তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিও চিত্রে কায়েস সাইদকে বলতে শোনা যায়, 'সৎ ব্যক্তি ছাড়া কারো সাথে সংলাপ হবে না' এবং 'ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের' সাথে কোনো প্রকার সংলাপ সম্ভব নয়। এর আগে তিউনিসিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে প্রেসিডেন্টের সাথে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলো আননাহদা।
করোনা পরিস্থিতিতে তিউনিসিয়ায় সৃষ্ট দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ২৫ জুলাই আকস্মিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর রাতে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ দুই বছর আগে নির্বাচিত পার্লামেন্ট ৩০ দিনের জন্য স্থগিত, প্রধানমন্ত্রী হিশাম মাশিশিকে বরখাস্ত ও নিজের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আদেশ জারি করেন।
প্রেসিডেন্টের আদেশের জেরে ২৬ জুলাই দেশটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আননাহদার প্রধান ও পার্লামেন্ট স্পিকার রশিদ গানুশিসহ দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য ও সমর্থকরা রাজধানী তিউনিসে পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। অপরদিকে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের সমর্থকরাও পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়। এই সময় দুই পক্ষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। একইসাথে তিনজনের বেশি লোককে প্রকাশ্যে জমায়েত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তিনি।
এছাড়া বেশ কিছু মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেন কায়েস সাইদ। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দেশটিতে গৃহবন্দী করা হয়েছে।
তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদের এসব পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে দেশটিতে স্বৈরাচারী শাসন ফিরে আসার শঙ্কায় আছেন।
২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর নিজেকে রাজনৈতিকবিরোধী হিসেবে প্রচারের প্রয়াস নেন কায়েস সাইদ। রাজনৈতিক দলবিহীন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত সাবেক এই আইনের অধ্যাপক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমনের প্রতিজ্ঞা করেন।
দায়িত্ব নেয়ার অল্প কয়েক মাস পরেই তিউনিসিয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এক কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশে ভাইরাস সংক্রমণে ১৭ হাজারের বেশি লোকের প্রাণহানি হয়। করোনা পরিস্থিতি বিপ্লবের পর খুঁড়িয়ে চলা দেশটির স্বাস্থ্যখাতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং অর্থনৈতিক সংকটকে আরো জটিল করে।
মে মাসে তিউনিসিয়া আন্তর্জাতিক তহবিল সংস্থা আইএমএফের সাথে আর্থিক সাহায্য প্যাকেজের বিষয়ে আলোচনা শুরু করে। যদি তা গ্রহণ করা হয়, তবে তা সংস্থাটি থেকে দেশটির জন্য চতুর্থবারের ঋণ নেয়া হবে।
তিউনিসিয়ার ঋণগ্রহণের বিনিময়ে আইএমএফের চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যেই দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। একইসাথে করের হার বাড়ানো ও সরকারি ক্ষেত্রে চাকরির পরিমাণ কমানো হয়েছে। এর ফলে বিন আলীর সময় থেকেই নিষ্পেষিত জনগণ আরো ক্ষুব্ধ হয়।
তিউনিসিয়ার পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাষ্ট্রই দেশটিতে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। যদিও বেশিরভাগই একে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকে।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তিউনিসিয়ার পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ জানায় এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশটিতে ‘গণতান্ত্রিক বৈধতা’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। সূত্র : মিডল ইস্ট আই ও আলজাজিরা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।