Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রংপুরের সর্বত্রই বৃষ্টির জন্য হাহাকার

মওসুমের শেষেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি নেইঃ পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে জমি ও চারা

রংপুর থেকে হালিম আনছারী | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২১, ৪:১৩ পিএম

‘‘বেলা দ্বি-প্রহর, ধু-ধু বালুচর, ধূপেতে কলিজা ফাটে, পিয়াসে কাতর আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই, আল্লাহ মেঘ দে-
আসমান হইলো টুটা-ফুটা, জমিন হইলো ফাটা’’

মরমী শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের হৃদয়গ্রাহী এই গানের মত আজও বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে রংপুর অঞ্চলের সর্বত্র। বৃষ্টির জন্য মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে ডুকরে কাঁদছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। আষাঢ়-শ্রাবণের এই ভরা মওসুমের শেষ হয়ে এলেও বৃষ্টির অভাব আর প্রচণ্ড তাপদাহে হাস-ফাস করছে কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের মানুষ। প্রকৃতির অমোঘ নিয়তির কাছে অসহায় হয়ে পড়ে বৃষ্টির জন্য হা-হুতোস করছেন সব মানুষ। তবুও মিলছে না কাঙ্খিত সেই বৃষ্টি। বৃষ্টির অভাবে তৈরী করতে পারছেন না আমনের জমি। শুকিয়ে যাচ্ছে আমনের বীজতলা ও চারা।

উত্তরবঙ্গের শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত রংপুর অঞ্চলে এবার আমন চাষে বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্ষা মওসুমের শেষ নাগাদ এসেও বৃষ্টির অভাবে জমি তৈরি করতে না পেরে চরম বেকায়দায় পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। মধ্যবিত্ত কৃষকরা ডিজেল শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে সেচ দিয়ে জমি তৈরী করে আমনের চারা রোপন করলেও নি¤œবিত্ত ও প্রান্তিক চাষিদের সামর্থ না থাকায় সেচ দিতে ব্যর্থ হয়ে বৃষ্টির আশায় দিন গুনছেন। এতে করে লক্ষ্যমাত্রা পুরণেও ব্যাতয় ঘটবে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ইতিমধ্যে নিচু জমিতে লাগানো আমরনে চারাগুলোও পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। জমি ফেটে যাচ্ছে অনেক স্থানে। বাধ্য হয়ে এ সমস্ত জমির আমনের চারা বাঁচাতে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচের ব্যবস্থা করছেন কৃষকরা। বৃষ্টি না হওয়ায় প্রখর রোদ এবং তীব্র তাপদাহের কারনে সেচের মাধ্যমে ধান ক্ষেতের পানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেইসঙ্গে বাড়ছে পোকামাকড়ের উপদ্রব। এতে করে অতিরিক্ত কীটনাশক এবং সার দুটোই ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে বাড়তি খরচের পাশাপাশি আমন ফলন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে এ অঞ্চলের সর্বত্র।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি মওসুমে রংপুর বিভাগে প্রায় ৬ লাখ ১২ হাজার ৭’শ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত রোপন করা হয়েছে প্রায় ২ লাখ হেক্টরে জমিতে। রংপুরে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আমন রোপণ হয়েছে মাত্র ৫৫/৬০ হাজার হেক্টর জমিতে।

গাইবান্ধায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে আর রোপণ হয়েছে প্রায় ১৫-২০ হাজার হেক্টর জমিতে। কুড়িগ্রামে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ৮৮ হাজার ৩৯৬ হেক্টর জমিতে, রোপণ করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। লালমনিরহাটে ৭৯ হাজার ৯৯ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এখন পর্যন্ত রোপণ করা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। নীলফামারীতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে আর রোপণ করা হয়েছে প্রায় ৭০-৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, আমনের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় মধ্য আষাঢ় থেকে শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত। কিন্তু এবার মৌসুমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক বৃষ্টি পাচ্ছেন না কৃষকরা। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে চারা রোপন করতে পারছেন না তারা। এতে লক্ষ্যমাত্রার ব্যাতয় ঘটার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া, সেচ দিয়ে জমি তৈরীতে কৃষকের বাড়তি খরচ হবে, যা অনেকের পক্ষেই কষ্টকর ও অসম্ভব। পর্যাপ্ত পানি না হলে জমিতে আগাছা, রোগ ও পোকার আক্রমণ বেড়ে যাবে। এতে ধানের ফলনও কম হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে কৃষি বিভাগের মতে, শুধুমাত্র বৃষ্টির অভাবেই এখন পর্যন্ত জেলা ভেদে লক্ষ্যমাত্রার ৩৫-৪৫ শতাংশ জমিতে আমনের চারা রোপন করা হয়েছে। তবে এখনও বৃষ্টির সময় আছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে আগামী ১৫/২০ দিনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পানির অভাবেই এখন পর্যন্ত অনেকেই জমি তৈরী করতে পারেনি। নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক চাষিরা অর্থাভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি সেচ দিতে পারছেন না। মহামারী করোনা ও লক ডাউনের কারনে কাজ-কর্ম, ক্ষুদ্র ব্যাবসা বন্ধ থাকায় তাদের হাত শুন্য হয়ে আছে। এ অবস্থায় বাড়তি টাকা দিয়ে সেচ দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তারা এখনও বৃষ্টির আশায় বসে আছেন। তাদের মতে, শ্যালো মেশিনে ৪/৫ ঘণ্টা পানি সেচ দিয়ে ২০-২৫ শতাংশ জমি তৈরী করা সম্ভব। এতে প্রতি ঘণ্টার জন্য ১’শ টাকা দিতে হয়। যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। আষাঢ়-শ্রাবণ ভরা বর্ষাকাল। অথচ শ্রাবণ মাসের শেষ সপ্তাহে এসেও স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নেই এ অঞ্চলে। বরং প্রচন্ড রোদ আর তীব্র তাপদাহে পুড়ছে জমি-জমাসহ সব ফসলের ক্ষেত। মাঝে-মধ্যে কখনো টিপ টিপ, কখনো একপশলা বৃষ্টি হচ্ছে। যা স্বস্তির বদলে অস্বস্তি এনে দিচ্ছে জনজীবনে।

সরেজমিন জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, পানির অভাবেই অনেকেই এখন পর্যন্ত আমনের জমিই তৈরী করতে পারেননি। কেউ কেউ সেচ দিয়ে জমি তৈরী করে চারা রোপন করেছেন, কিন্তু বৃষ্টির অভাবে সেগুলোও লালচে আকার ধারণ করছে। অনেক স্থানেই চারা রোপনকৃত জমি ফেটে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে এগুলোও রক্ষা করা সম্ভব নয়। শ্যালো বা বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে সেচ দিলেও কয়েকদিনের মধ্যে তা শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে করে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। আগামী দু’ সপ্তাহের মধ্যে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে আমনের চারা রোপন করতে পারবেন না অধিকাংশ কৃষকরা। আর এতে করে ভেস্তে যাবে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা।
রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৩৩ মিলিমিটার। অথচ বৃষ্টিপাত প্রয়োজন ৪৫৩ মিলি.মিটার।
এদিকে, বৃষ্টির অভাবে এ অঞ্চলের অধিকাংশ খাল-বিলে পানি নেই। সেচ দিয়ে পানি তুলে নেয়ায় ইতিমধ্যে খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ার পথে। ফলে পানির অভাবে অধিকাংশ এলাকাতেই পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা। কাঁচা পাট নিয়েও এ অঞ্চলের কৃষকরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
জমি থেকে কাঁচা পাট কেটে এনে স্তূপ করে রেখে বৃষ্টির অপেক্ষায় আছেন পাটচাষীগন। পানির অভাবে এখনো অর্ধেক পাট জাগ দেয়া সম্ভব হয়নি। এতে করে অনেকের পাট জমিতে কিংবা খাল-বিলের ধারেই শুকিয়ে যাচ্ছে।

কৃষকরা জানান, পানির অভাবে কেউই পাট জাগ দিতে পারছে না। টিলার ভাড়া করে দুর-দুরান্তের বিলে নিয়ে গিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতে করে বাড়তি খরচ হচ্ছে। তাছাড়া চুরির ভয়ও আছে।

কৃষি বিভাগের মতে, রংপুরে এবার ৫৬ হাজার ৭’শ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত অর্ধেক জমির পাট জাগ দেয়া সম্ভব হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৃষ্টি

১৯ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->