Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৃষ্টি কবে দৃষ্টি আকাশে

ভ্যাপসা গরমে-ঘামে কাহিল মানুষ : ঘরে ঘরে অসুস্থ :: বৃহস্পতিবার নাগাদ স্বস্তির বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে :: তবে শ্রাবণের ‘স্বাভাবিক’ বর্ষণের জন্য আরো অপেক্ষা :: গরম বাতাসের বলয় আটলান্ট

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২২, ১১:৫৯ পিএম

আষাঢ় পেরিয়ে চলছে শ্রাবণ মাস। ভরা বর্ষা ঋতুর মধ্যভাগে এসেও ভারী বৃষ্টিপাত তো নেই-ই। বরং বৃষ্টির পরিবর্তে দিনভর কড়া সূর্যের তেজে যেন আগুন ঝলসে পড়ছে। উফ্! অসহ্য গা-জ্বলা গরম! কবে ঝরবে স্বস্তির বৃষ্টি? চাতক পাখির মতো সবার দৃষ্টি আকাশপানে। ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে...’। ভরা বর্ষা-বাদলের দিনগুলোতেও বিরাজ করছে খরাদশা। অতিষ্ঠ মানুষজন মেঘের ছায়া, স্বস্তির বৃষ্টির আশায় আকুল ফরিয়াদ করছেন। বৈরী আবহাওয়া থেকে পরিত্রাণ চেয়ে বৃষ্টির জন্য মসজিদে মসজিদে দোয়া হচ্ছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা আভাস দিয়েছেন, চলতি সপ্তাহ শেষে আগামী বুধবার-বৃহস্পতিবার নাগাদ প্রত্যাশিত বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে। তাপমাত্রা কমতে পারে স্থানভেদে এক থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। তবে তাপদাহের বিদায় ও শ্রাবণের ‘স্বাভাবিক’ বর্ষণের ধারা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে।

ভ্যাপসা গরমে-ঘামে কাহিল মানুষ। দিনে-রাতে কোথাও স্বস্তি নেই। বাতাস থমকে গেছে। আবার কোথাও বাতাসে মরুর আগুনের হলকা। ফ্যানের বাতাসও উত্তপ্ত। আকাশ প্রায় মেঘমুক্ত। সরাসরি সূর্য কিরণ এসে উত্তপ্ত করছে মাটিকে। কড়া সূর্যের দহনে পুড়ছে ফল-ফসল, মাঠ-ঘাট। উত্তর বঙ্গোপসাগর থেকে আসা অত্যধিক পরিমাণে জলীয়বাষ্পের কারণে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে গিয়ে গরম অসহনীয় হয়ে উঠেছে। শরীর থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঘাম বের হয়ে মানুষ দ্রুত কাহিল ও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় দিন এনে দিন খাওয়া গরীব কর্মজীবী, শ্রমজীবী, কুলি-মজুরদের কষ্ট-দুর্ভোগ অবর্ণনীয়। তাদের রুজি-রোজগার কমে গেছে। ইতোমধ্যে বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত রাজশাহী ও উত্তরের জনপদ নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। সিলেটেও ৩৮ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। যা মৌসুমের এ সময়ে অর্থাৎ জুলাই মাসে গত ৪০ বছরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।

দেশের অনেক জায়গায় পারদ ৩৬ বা ৩৭ ডিগ্রি অতিক্রম করেছে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে দিনের বেলায় স্থানভেদে এক থেকে ৬ ডিগ্রি সে. ঊর্ধ্বে এবং রাতে এক থেকে ৩ ডিগ্রি সে. ঊর্ধ্বে। বিশেষজ্ঞরা একে জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরী প্রভাব ও আবহাওয়ার খেয়ালী আচরণ হিসেবেই দেখছেন। দিনের তাপমাত্রার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রাতের পারদও। দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে গেছে। মৌসুমের এ সময়ে স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ এবং সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি সে. থাকার কথা। গতকালও সমগ্র রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।

দিনে-রাতে অস্বাভাবিক তাপদাহের কারণে জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে প্রায়ই ঘরে ঘরে অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে বাড়ছে রোগীর ভিড়। হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়েছে। এ সময়ে বেশিহারে বিশুদ্ধ পানি পান, রোদ পরিহার করে ছায়ায় অবস্থান, ধুলোবালি-ধোঁয়া এড়িয়ে চলার পরমর্শ দেন চিকিৎসকগণ।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত তপ্ত বাতাসের বলয় বা সার্কেল বিরাজ করছে। ভারত মহাসাগরের শেষ প্রান্তে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত তপ্ত বায়ু সক্রিয়। উষ্ণ বা তপ্ত বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে এই তিনটি সাগর-মহাসাগর তীরবর্তী জাপান থেকে শুরু করে সমগ্র ইউরোপ-আমেরিকা পর্যন্ত দেশগুলোতে অসহনীয় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের কোন কোন অঞ্চল দাবানল ও হিটডোমে পুড়ছে।

অন্যদিকে, তপ্ত বলয়ের বাইরে ও সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর বলয়ে অবস্থানের কারণে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও পকিস্তানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবার ভারতের উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে দুর্বল হয়ে পড়া সুস্পষ্ট লঘুচাপ থেকে সৃষ্ট লঘুচাপের বর্ধিতাংশের কারণে বাংলাদেশ অবধি আরেকটি উষ্ণ বলয় বিরাজ করছে। এর ফলে বর্ষার মৌসুমী বায়ু নিষ্ক্রীয় হয়ে পড়েছে। জ্যৈষ্ঠ থেকে আষাঢ় মাসের গোড়াতে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় ও জোরদার ছিল। তবে আষাঢ়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মৌসুমী বায়ু কম সক্রিয় থেকে নিষ্ক্রীয় অবস্থায় রয়েছে।

আবহাওয়ায় ‘এল নিনো’র প্রভাবও এর অন্যতম কারণ। প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগর থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত উষ্ণ বা তপ্ত বায়ুর প্রভাব কেটে গেলে এ সপ্তাহের শেষে আগামী বুধবার-বৃহস্পতিবার থেকে প্রত্যাশিত বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে। এরপর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ক্রমশ বেড়ে গিয়ে শ্রাবণের স্বাভাবিক বর্ষণ হতে পারে আসছে সপ্তাহে। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় ও জোরদার হয়ে আবহাওয়ায় এর প্রভাব বাড়লে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাবে। তখন এ মাসের শেষে কিংবা আগস্টের গোড়াতে উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতে অতি বর্ষণের কারণে ফের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসেও বন্যার শঙ্কার কথা বলা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৃষ্টি কবে দৃষ্টি আকাশে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ