গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
বিতর্কিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা মডেলিংয়ের আড়ালে অপরাধ সাম্রাজ্যে বিচরণ তার। আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনে চোরাই পথে বিদেশি বিভিন্ন ব্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি এনে বিক্রি করতেন তিনি। এসব গাড়ি বিক্রিতে ক্রেতার অভাব হয়নি পিয়াসার। কারণ উচ্চবিত্ত পরিবারের বখে যাওয়া সন্তানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তাকে গাড়ি বিক্রিতে বেগ পেতে হয়নি। এ ছাড়া র্যাবের হাতে আটক মিশুর রয়েছে ধনী পরিবারের সন্তানদের বন্ধু সিন্ডিকেট। বড়লোকের এসব দালাল ছেলেরা তার গাড়ি বিক্রিতে সহায়তা করত।
মিশুর মাধ্যমে গাড়ি এনে বিক্রির মূল কাজটি করতেন বিতর্কিত এ মডেল পিয়াসা। এসব গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে টার্গেট করতেন ধনী পরিবারের দুলালদের। মূলত চক্রটি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কন্টেইনারের মাধ্যমে বিদেশ থেকে এসব গাড়ি আনত। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গাড়ি আনলেও এসব গাড়ির কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তবে পিয়াসা এসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের কাগজ তৈরি করতেন কৌশলে। এরপরই বিক্রি করতো চরাদামে।
সূত্র জানায়, পিয়াসা এ পর্যন্ত শতাধিক নামি দামি মডেলের গাড়ি বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, মার্সিডিস, মার্সেডিজ-মেব্যাক, মার্সিডিজ-বেঞ্জ জি ক্লাস, অডি, অডি আর-৮, ল্যাম্বারগিনি, মাজদা, বিএমডব্লিউ ও লেক্সাস-৫৭০ মডেলেরসহ নানা গাড়ি।
বিতর্কিত মডেল পিয়াসার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, মার্সিডিজ-বেঞ্জ জি ক্লাস মডেলের গাড়ি পিয়াসা অন্তত ২৫-৩০টি বিক্রি করেছে। বিদেশি ব্যান্ডের গাড়ি বিক্রির তালিকার নোয়াখালীর একজন সংসদ সদস্যের ছেলেও রয়েছেন।
মার্সেডিজ-মেব্যাক মডেলের বিলাসবহুল একটি গাড়ির দাম ৮ কোটি টাকা হলেও পিয়াসা সিন্ডিকেট ৪ কোটি টাকায় বিক্রি করতেন। বিদেশ থেকে একটি গাড়ি এক কোটি টাকায় কিনলেও তিনি অন্তত একটি গাড়িতে ৭ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিতেন সরকারকে।
ওই সূত্র জানায়, এসব গাড়ি বিক্রিতে পিয়াসা কৌশলের আশ্রয় নিতেন। যদি তিনি কোনো মার্সিডিস গাড়ি বিক্রি করতেন সেক্ষেত্রে ১০ বছর আগের পুরাতন একটি মার্সিডিস কিনতেন। পরে সেই গাড়ির চেসিস নম্বর বিশেষ কায়দায় নতুন গাড়ির দরজা ও বনেটের নিচে খোদাই করে বসাতেন। পরে ওই গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি নতুন গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতেন। এরপরই সেই গাড়ি বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করতেন।
এভাবেই পিয়াসা একের পর গাড়ি বিক্রি করে রেজিস্ট্রেশন নম্বর করে দিতেন। আর পুরাতন গাড়িটি নষ্ট করে ফেলতেন।
পিয়াসাকে গ্রেফতারের পর মিশু হাসানকেও গ্রেফতার করে র্যাব। এরপরই চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানা যায়। পিয়াসা ও মিশু সিন্ডিকেটের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য রয়েছে, যা আজ-কালের মধ্যে অনেকটা খোলাসা হতে পারে।
সূত্র আরও বলছে, মিশুর মাধ্যমে ইয়াবা, হীরা এবং সোনার চালান আনা হলেও বিক্রির মূল কাজটা করেন পিয়াসা নিজেই। এ জন্য তিনি ডার্ক ওয়েব এবং ফেসবুক চ্যাটিং গ্রুপ ব্যবহার করতেন। মিশুর মাধ্যমে আগ্নেয়াস্ত্রের চালানও আনা হয়। পিয়াসার ইয়াবার মূল ক্রেতা ছিলেন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল পড়ুয়া ধনী পরিবারের সন্তানরা।
আলোচিত রেইন ট্রি হোটেলের ঘটনায় নাম আসে এই পিয়াসার। সেই যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যান। পরে মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনাতেও মামলার এজহারে নাম আসে তার। এবার ডিবির অভিযানে গ্রেফতারের পরও ফের আলোচনায় আসেন পিয়াসা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।