পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আলোচিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা (৩০) ও মরিয়ম আক্তার মৌ (৪৩) নিয়মিত নিজেদের বাসায় নাচ-গানের আসর বসাতেন। নাচ-গানের এই আসরকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলতে তাদের সংগ্রহে রাখতেন বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য। আসরে ডেকে আনা অথবা ইনভাইটেশনে আসা গেস্টদের কাছে অর্থের বিনিময়ে বিদেশি মদ, ইয়াবা ট্যাবলেট, নিষিদ্ধ সিসাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করতেন মডেল পিয়াসা ও মৌ। রাজধানীর গুলশানের বারিধারা থেকে মডেল পিয়াসাকে ও মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাড়ি থেকে মডেল মৌকে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতারের পর প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব তথ্য পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বারীধারার ৯ নম্বর রোডের ৩নং বাসার তৃয়ীয় তলার আলিশান ফ্ল্যাট। যেখানে রাত হলেই বসতো মদ ও শিসার আসর। আসরের মধ্যমনি হয়ে যোগ দিতেন দেশের ব্যবসায়ী ও বিত্তশালি পরিবারের সন্তানেরা। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য তৈরি থাকতো সুন্দরী রমনীরা। রমনী সংগ্রহ ও সরবরাহের কাজটি সুচারুভাবে সম্পাদন করতেন ২০০৯ সালে সুপার হিরোইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শোবিজ জগতে পা রাখা ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। পিয়াসার আস্থাভাজন হিসেবে মনোরঞ্জন-বাণিজ্য দেখভাল করত আরেক মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ। নিজেদের আস্তানায় কাক্সিক্ষত পুরুষ এলে অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের শিকার বানিয়ে ফেলতে উস্তাদ ছিলেন দু’জনই। ক্যামেরায় অন্তরঙ্গ দৃশ্য ধারণ করে, পরে করতেন বø্যাকমেইল। শুরু হতো অর্থ আদায়।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, প্রতিরাতেই পিয়াসার বারীধারার ওই ফ্ল্যাটে নিয়মিত মদ ও শিসার আসর বসতো। সেখানে নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন বারীধারা ও গুলশানের বিত্তশালী পরিবারের সন্তানেরা। এরমধ্যে দুই ব্যবসায়ী ও একাধিক পরিবারের সন্তানরা পিয়াসার গোপন ক্যামেরার মিশনে ধরা পড়েন। তাদের নেশা করার দৃশ্য কৌশলে ধারণ করে রাখা হয়। এছাড়া দুই ব্যবসায়ীর অন্তরঙ্গ দৃশ্যও তারা ধারণ করেন। এক পর্যায়ে তাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। তারা টাকা দিতে অপরাগতা জানালে তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ওই ভিডিও পাঠানো হবে বলে হুমকি দেয়।
ডিবি সূত্র জানায়, ওই দুই ব্যবসায়ীর মধ্যে একজন ক্ষমতাশালী রয়েছেন। তারা বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের জানান। এবং এমন কর্মের কারণে অনুতপ্ত বলে জানান। এরপর পিয়াসা ও মৌ এর কর্মকান্ড নিয়ে গোপনে মাঠে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। তারা ঘটনার সত্যতা পান। এরপর রোববার রাত ১২টার দিকে প্রথমে পিয়াসার বারীধারার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে মদ ও শিসাসহ গ্রেফতার করা হয়। এপর তার দেওয়া তথ্যমতে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের ২২নং ভবনের নিচ তলায় মৌয়ের ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকেও বিপুল পরিমাণ মদ ও ইয়াবা জব্দ করা হয়। ওই দুই ঘটনার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে অনেকে এসে এই দুই রানীর কাছে সর্বস্ব খোয়ায়েছেন বলে অভিযোগ করেন। কিন্তু নিজেদের সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে তারা কেউই মামলায় বাদী হতে অস্বীকার করেন। পরে পুলিশ বাদী হয়ে তাদের নামে মোহাম্মদপুর ও গুলশান থানায় মাদক মামলা দায়ের করেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার হারুণ-অর-রশিদ জানান, পিয়সা ও মৌ দীর্ঘদিন ধরেই তাদের বাসায় মদ, নারী ও শিসার আসর বসাতেন। এরপর তারা কৌশলে এসব দৃশ্য ধারণ করে রাখতেন। এরপর ওই ভিডিও দেখিয়ে তারা অর্থ হাতিয়ে নিতেন। এ ধরনের একাধিক অভিযোগের পর তদন্ত শেষে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে আরো কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, আটক দুই মডেল হচ্ছেন রাতের রানী। তারা দিনের বেলায় ঘুমান এবং রাতে এসব কর্মকান্ড করেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পার্টির নামে বাসায় ডেকে আনতেন তারা। বাসায় আসলে তারা তাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। পরবর্তীতে তারা সেসব ভিডিও ও ছবি ভিক্টিমদের পরিবারকে পাঠাবে বলে বø্যাকমেইল করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিতেন।
সূত্র মতে, কোরবানির ঈদের আগে লকডাউন শুরু হলে অর্থ কষ্টে পড়েন পিয়াসা। বিশেষ করে লকডাউনে জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকার কারণে ওই ফ্ল্যাটে আসর না জমায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এসময় মৌ ও পিয়াসা কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে অর্থ সহায়তা চান। যারা প্রতি নিয়ত তাদের বাসায় আসা যাওয়া করতেন। কিন্তু ওইসব ব্যবসায়ীরা তাদের টাকা দিতে অপরাগতা জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যবসায়ীর বউকে ফোন করেন পিয়াসা এবং তার কাছে ব্যবসায়ীর ভিডিও আছে বলে জানান। এ নিয়ে ওই পরিবারে অশান্তি তৈরি হয়।
ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, পিয়াসার ওই ফ্ল্যাটের সর্বনিম্ন মাসিক ভাড়া দেড় লাখ টাকা। এছাড়া মৌ এর বাসা ভাড়া ৪০ হাজার টাকার উপরে। তাদের প্রতিরাতেই অন্তত ২০ হাজার টাকার নেশাজাতীয় দ্রব্য লাগে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের পাশে কেউ না থাকায় তারা ক্ষিপ্ত হন। এরপর ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে এসব ভিডিও পাঠানো শুরু করেন। উপায় না পেয়ে তারাও পুলিশের স্মরণাপন্ন হন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামেই জন্ম ও মডেলিংয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল পিয়াসার। ২০০৯ সাল থেকে ঢাকার অভিজাত মহলে পরিচিতি পান মডেল পিয়াসা হিসেবে। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠলেও অল্প সময়ের মধ্যে ৩২ বছর বয়সী পিয়াসার হাত হয়ে উঠে অনেক লম্বা। তাকে সমীহ করে চলেন অনেক বাঘা বাঘা শিল্পপতিও। অভিযোগ রয়েছে কক্সবাজারে হোটেল হোয়াইট সেন্ট নামের একটি প্রকল্পের কথা বলে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন সাড়ে আট কোটি টাকা। প্রকল্পের গালগল্পে ভুলিয়েছেন চট্টগ্রামের বেশকিছু ব্যবসায়ীকেও।
দুই মামলায় রিমান্ডে পিয়াসা ও মৌ : এদিকে বারিধারা ও মোহাম্মদপুর এলাকায় পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, মদ ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্যাদিসহ মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে গ্রেফতার মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত উভয়ের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলাটির তদন্ত সাইবার ক্রাইম ইউনিট তদন্ত করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মামলায় যা বলা হয়েছে : ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার (৩০) বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার (নম্বর-৩) এজাহারে এসআই শহিদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, রোববার ১ আগস্ট রাত ৯টা ২৫ মিনিটে নতুন বাজার এলাকায় অবস্থান করার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি যে, কতিপয় মাদক কারবারি অবৈধ মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করতে নিজ নিজ হেফাজতে নিয়ে গুলশানের বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের ৯ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাসায় অবস্থান করছেন। এমন সংবাদ যাচাই করতে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সেখানে যাই। রাত ১০টার দিকে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে এক নারীকে আটক করা হয়। তাদের উপস্থিতিতে আসামির ভাড়া বাসার উত্তর-পূর্ব কর্ণার রুমে কথিত ৪টি হুক্কাকলকির (যা সিসাসহ বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবনের কাজে ব্যবহৃত হয়) পাশে একটি শপিং ব্যাগে রাখা অবস্থায় ৭৮০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ঘরের রেফ্রিজারেটরের ভেতরে একটি প্লাস্টিকের বক্সে রাখা অবস্থায় ভেষজ নির্যাস ক্যারামিল মিশ্রিত ফ্রুটস শ্লাইস, রান্নাঘরের কেবিনেটের বিভিন্ন বক্স থেকে ৮ বোতল বিদেশি মদ ও ৪ বোতল বিয়ার (যার মূল্য ৪৮ হাজার টাকা) জব্দ করা হয়।
আসামি পিয়াসাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে তিনি বাসায় আনেন। তার বাসায় নাচ ও গানের আসর বসান এবং লোকজন ডেকে এনে অর্থের বিনিময়ে তাদের কাছে এসব মাদক বিক্রি করতেন। এই কাজে তাকে আরো কয়েকজন সহায়তা করতেন বলেও প্রাথমিকভাবে জানান আসামি মডেল পিয়াসা।
অপর দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মডেল মরিয়ম আক্তার মৌয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা মাদক মামলার এজাহারে মামলার বাদী পরিদর্শক শিশির কুমার কর্মকার উল্লেখ করেন, রোববার ২ আগস্ট রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে মোহাম্মদপুর থানাধীন বাবর রোডের ২২৯ বাসার নিচতালার রুমে অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্যসহ এক নারীকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ তার নাম মরিয়ম আক্তার মৌ বলে জানা যায়। মডেল মৌয়ের ঘরে কাঠের তৈরি ড্রেসিং টেবিলের নিচের ড্রয়ার থেকে নীল রঙের জিপার যুক্ত ৫টি প্যাকেটে ৭৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, মাস্টার বেডরুমের বাথরুমের ভেতর থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের ১২ বোতল বিদেশি মদ, বাসার রুমে দেয়ালের কাচের আলমারি থেকে মদ পানের জন্য ব্যবহৃত ১০টি লং কাচের গøাস, ১২টি কাচের গøাস, ১টি স্টিলের আইস বক্স, কাচের খালি বোতল ১টি জব্দ করা হয়। মৌ জানান, তার বাসায় নাচ ও গানের আসর বসে এবং লোকজন ডেকে এনে অর্থের বিনিময়ে তাদের কাছে মদ, ইয়াবাসহ অন্যান্য নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য বিক্রয় করেন। মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌ দু’জনের বাসায় ইয়াবা ট্যাবলেট, বিদেশি মদ, মদ খাওয়ার সরঞ্জাম বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নিজ হেফাজতে রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬(১) এর টেবিল ১০(ক) ২৪(খ) ৪১ ধারায় অপরাধ করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।