Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রীর মহৎ চিন্তা

| প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে চলতি বছর ভূমিহীন, আশ্রয়হীন ও বস্তিবাসী লাখ লাখ মানুষকে জমিসহ ঘর দেয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও আশ্রয়হীন ভূমিহীন মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প অবশ্যই একটি মাইলফলক প্রকল্প। এবার শহরের সব বস্তিবাসিকে বস্তি ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু মুখের কথায় বস্তিবাসিরা গ্রামে ফিরে যাবে না, জানা কথা। এ কারণেই গ্রামে ফিরলে জমি, ঘর ও খাবারের নিশ্চয়তার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা জানি, ঢাকা শহরে লাখ লাখ মানুষ বস্তিতে মানবেতর জীবন যাপন করে। এরা বেশিরভাগ নাগরিক পরিষেবা ও ন্যুনতম সুযোগ সুবিধা ছাড়াই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বস্তিতে বসবাস করছে। শহরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছিন্নমূল মানুষ অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বস্তিতে বসবাস করায় নাগরিক পরিষেবা, পরিবেশ-পরিচ্ছন্নতা ও সাধারণ শৃঙ্খলার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মাঝে মাঝেই বস্তি উচ্ছেদের প্রসঙ্গ আসলেও তাদের জন্য বিকল্প আশ্রয় ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার তাগিদ উচ্চারিত হয়। আবার লাখ লাখ মানুষকে পুর্নবাসিত করার মত স্থান রাজধানী শহরে নেই। এ ধরণের নাগরিক ও সামাজিক সমস্যা নিরসনের একমাত্র উপায় হচ্ছে, বস্তিবাসিদের গ্রামে ফিরে যাওয়া। ভূমিহীন, ভিটাবাড়ি না থাকা বস্তিবাসিরা গ্রামে নিজস্ব ঘর এবং চাষাবাদের জমি পেলেই কেবল এ ধরনের সমস্যা স্থায়ী সমাধান সম্ভব। বস্তিবাসি লাখ লাখ পরিববারকে জমি বরাদ্দ দেয়ার মত খাস জমি কতটা আছে, সেটা একটা প্রশ্ন বটে। সে ক্ষেত্রে গ্রামে ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার কোনো বিকল্প নেই।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের মত স্থানীয়ভাবে গৃহহীনদের ঘর নির্মান করে দেয়ার পাশাপাশি রাজধানী শহরেও বস্তিবাসিদের জন্য স্বল্পভাড়ায় ফ্ল্যাট নির্মানের প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জন্য বেশকিছু নতুন আবাসন প্রকল্প উদ্বোধনের পাশাপাশি রাজধানীর মিরপুরে বস্তিবাসিদের জন্য ৩০০ ফ্ল্যাটের উদ্বোধন করা হয় গত মঙ্গলবার। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তজার্তিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বস্তিবাসিদের গ্রামে ফিরে যাওয়ার বিনিময়ে জমি, ঘর এবং খাবারের বন্দোবস্তের কথা উল্লেখ করেছেন। মুজিববর্ষের অন্যতম অঙ্গিকার দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। শুধু গৃহ নির্মান করে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে সব বস্তিবাসির গ্রামে ভিটা-জমি আছে, গ্রামে ফিরে গেলে তাদেরকে সেখানে ঘর নির্মান করে দেয়ার পাশাপাশি বিনামূল্যে ৬ মাসের খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তবে স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকলে এ ধরণের প্রকল্প নিয়ে হতদরিদ্র মানুষকে গ্রামে ধরে রাখা অসম্ভব হতে পারে।

দেশের ৮৫ ভাগের বেশি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে ভ‚মিমন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে। তবে এক বড় উদ্যোগের পরও ঢাকা শহরের বস্তির সংখ্যা কমেনি। অর্থাৎ সে সব প্রকল্পের প্রভাব শহরের বস্তিবাসিদের মধ্যে দেখা যায়নি। আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি, রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতি ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালী দলীয় নেতাদের কারণে প্রধানমন্ত্রীর মহতি উদ্যোগেও কালিমালিপ্ত হয়েছে। বস্তিবাসিদের গ্রামে ফিরিয়ে নেয়া হলে শহরের নাগরিক পরিবেশে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। বস্তিগুলো পেশাদার অপরাধি ও মাদকসেবি ও মাদক কারবারিদের অন্যতম আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা বস্তির লাখ লাখ মানুষ শহরের নাগরিক পরিষেবার উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। এখন তাদেরকে গ্রামে ফিরিয়ে নেয়ার যে পরিকল্পনার কথা প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন সুষ্ঠ, সঠিক ও রাজনীতি নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ায় তা বাস্তবায়নের পাশাপাশি গ্রামে কর্মসংস্থান সৃষ্টিই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বরাদ্দের হার প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। শুধুমাত্র ঢাকা শহরের বস্তিবাসিদের নিজ নিজ গ্রামে পুনর্বাসন করতে হলে অনেক বড় উদ্যোগের প্রয়োজন। সব গৃহহীন-ছিন্নমূল মানুষ ঢাকায় আসেনা। অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলাশহরেও এমন অনেক বস্তি গড়ে উঠেছে। রাতারাতি ভূমিহীন, গৃহহীন হয়ে পড়ার পেছনে নদীভাঙ্গণ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের মত বিষয়গুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রামের মানুষের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থান, শিক্ষা-চিকিৎসাসহ নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে কেউ শহরের ঘিঞ্জি বস্তিতে বসবাস করতে চাইবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই মহৎ চিন্তাপ্রসূত উদ্যোগের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রীর মহৎ চিন্তা
আরও পড়ুন