পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আইপি টিভি নামে এক শ্রেণির টিভির আলোচনা সম্প্রতি প্রাধান্যে এসেছে। আসলে এটি কোনো টিভি নয়, এটি অনলাইন প্রযুক্তি মাত্র। রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যন্ত তথাকথিত এই টিভির বিস্তার ঘটেছে। এর সংখ্যা কত, সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় না। ইনকিলাবের এক খবরে ‘শত শত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই খবরে এও জানানো হয়েছে, ইন্টারনেটভিত্তিক ভিডিও সম্প্রচারে ৬১টি কোম্পানিকে আইপি টিভি সেবা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি। অনুমতিপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলো ছাড়া আর কারো আইপি টিভি পরিচালনার এখতিয়ার থাকার কথা নয়। তাহলে শত শত আইপি টিভি গড়ে উঠতে পারলো কীভাবে? তথাকথিত এসব অবৈধ টিভির দৌরাত্ম্যে মানুষ অতিষ্ঠ। এদের প্রধান কাজ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করা। বিজ্ঞাপন প্রচারও আয়ের একটি উৎস। একেকটি আইপি টিভির তথাকথিত সাংবাদিক সংখ্যাও অনেক। রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের অফিসে এদের ভিড় এত বেশি যে, প্রকৃত সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত হন এবং বিব্রত বোধ করেন। সাধারণ মানুষের পক্ষে কে আসল কে নকল সাংবাদিক, তা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। নামধারী এই সাংবাদিকরা একটি পরিচয়পত্র ছাড়া কিছু পান না। উপরন্তু পরিচয়পত্রের জন্য আইপি টিভির কর্তৃপক্ষকে তারা মোটা অংকের অর্থ দিয়ে থাকেন। সাম্প্রতিককালে বহুল আলোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীরের অনেক কান্ডের সঙ্গে তার আইপি টিভি ‘জয়যাত্রা’র কান্ডও প্রকাশিত হয়েছে। জয়যাত্রা ছিল তার প্রভাব বিস্তার ও ব্ল্যাকমেইল করার হাতিয়ার। এই অবৈধ আইপি টিভির জন্য তিনি নিয়োগ দেন ৮০০ সাংবাদিককে। ঢাকা শহরে তার সাংবাদিক সংখ্যা ২০০ জন। বিভাগীয় শহরগুলোতে ২৫ জন করে সাংবাদিক নিয়োগ দেন তিনি। এছাড়া জেলা-উপজেলা পর্যায়েও তার সাংবাদিক রয়েছে। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন, জেলাকেন্দ্রিক সাংবাদিক নিয়োগে তিনি ১ লাখ করে টাকা নিয়েছেন। ২ বছরের নিয়োগ চুক্তিতে মাসিক বেতন পাবেন না বলে উল্লেখ আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
প্রতারণা, চাঁদাবাজি, প্রভাব বিস্তার, ব্ল্যাকমেইলিং, অশালীন কনটেন্ট ও বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে অর্থ কামাই ইত্যাদিই যে অবৈধ আইপি টিভি খোলার উদ্দেশ্য, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একটি টিভি চ্যানেল গড়ে তোলা ও তার যথাযথ পরিচালনা শুধু মোটা অর্থের বিষয় নয়, দক্ষতারও বিষয়। দক্ষ, যোগ্য, শিক্ষিত লোক ছাড়া তা সম্ভব নয়। সংবাদপত্র প্রকাশ ও পরিচালনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যেসব টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র সুনাম, সুখ্যাতি ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে, তাদের বিনিয়োগ যেমন বিশাল, তেমনি সাংবাদিক-কর্মী নিয়োগেও কর্তৃপক্ষ সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়েছে। অথচ, টিভির নাম দিয়ে দুর্নীতি, দুষ্কৃতি, চাঁদাবাজি, প্রতারণাকে মূল লক্ষ্য করা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিভি মাধ্যমের যেমন দুর্নাম হচ্ছে, তেমনি সাংবাদিকতা পেশারও মান-মর্যাদা বিনষ্ট হচ্ছে। এইসঙ্গে দেশ ও সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে এসব অবৈধ টিভি কীভাবে গড়ে উঠতে ও চলতে পারছে? পর্যবেক্ষকদের মতে, এসব আইপি টিভির অধিকাংশের মালিক সরকারি দলের বা দলের সমর্থক লোকজন। দলের হোমরা- চোমরাদের অনেকে এসব টিভির পৃষ্ঠপোষক। ফলে এদের কেশাগ্র স্পর্শ করা বাস্তবকারণেই কঠিন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নিয়ম-নীতিহীন এসব টিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, আইপি টিভির জন্য পাঁচ শতাধিক দরখাস্ত জমা পড়েছে। যাচাই-বাছাই করে সেগুলোর রেজিস্ট্রেশন দেয়া হবে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ৬১টি কোম্পানিকে আইপি টিভি সেবা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে বিটিআরসি। এর বাইরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা আইপি টিভি বন্ধ এবং বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বিটিভির ওপর অর্পিত হয়েছে। কিন্তু বিটিভির পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে ‘মুভি বাংলা’, ‘আনন্দ বাংলা’, ‘চ্যানেল-৭’, ‘এসবিটিভি’ ইত্যাদি অবৈধ আইপি টিভি বন্ধে বিটিভিকে তিন দফা চিঠি দেয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বলা বাহুল্য, কাউকে কোনো ক্ষেত্রে দায়িত্ব দিলেই হবে না, দায়িত্ব পালনের সক্ষমতায়ও তাকে সমৃদ্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
স্বনামখ্যাত কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানকে, যাদের ইতোমধ্যে আইপি টিভি সেবা দেয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তারা ছাড়া অবৈধ আইপি টিভি যত আছে অবিলম্বে তা বন্ধ করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে একটা অনুপুঙ্খ তদন্ত অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। কারা এই অবৈধ কর্মের সঙ্গে যুক্ত তদন্তে অবশ্যই তা বেরিয়ে আসবে। তাদের বিরুদ্ধে যথোপুযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে বিশেষভাবে বলা দরকার, প্রতিষ্ঠিত ও খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানগুলোর আইপি টিভি সেবা দেয়ার জন্য আলাদা সাংবাদিক বা কর্মীর কোনো প্রয়োজন নেই। তাদের উদ্দেশ্যও কখনোই অসৎ হওয়ার কথা নয়। যেহেতু এটা অনলাইন প্রযুক্তি, ফলে এর ভালো ব্যবহার যেমন হতে পারে, মন্দ ব্যবহারও হতে পারে। কাজেই আইপি টিভির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও নিয়মিত নজরদারির একান্ত ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে আলাদা একটা কর্তৃপক্ষও এজন্য গড়ে তোলা যেতে পারে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এদিকে যথাযথ দৃষ্টি দেবে ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।