Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্মৃতিতে অম্লান মাওলানা একেএম ফারুক

রূহুল আমীন খান | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৪ এএম

মাওলানা একেএম ফারুক নশ্বর জগত থেকে অবিনশ্বর জগতে পাড়ি জমালেন। চিরদিনের মতো আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। মাওলানা ফারুক দৈনিক ইনকিলাবের পাঠকদের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম। আমাদের সবার কাছে প্রিয়জন, একটি প্রিয়মুখ। শ্বাস কষ্ট ও কাশিতে আক্রান্ত হলে তাঁকে ঢাকার মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে স্থনান্তর করা হয় রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালে। সেখানেই করোনা টেস্টে পজিটিভ আসে। এভাবে দশদিন রোগ ভোগার পর হাসপাতালেই ৩১ জুলাই, শনিবার সকাল এগারটায় (৮২ বছর বয়সে) তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সেখান থেকে তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয় এবং ঐ দিনই রাত সাড়ে ৯টায় পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।

মাওলানা ফারুক একজন প্রথিতযশা আলেমেদ্বীন, একজন সুলেখক ও সাংগঠনিক ব্যক্তিত্ব। ১৯৩৯ সালে তিনি নরসিংদী জেলার চরসুবদ্দীর বাহেচরে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আহমাদ হাসান ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন। তিনি ছিলেন চরসুবদ্দী মাদরাসার অধ্যক্ষ এবং স্থানীয় ঈদগাহের ইমাম। তাঁর তিন পুত্রের মধ্যে মাওলানা ফারুক জ্যেষ্ঠ। তিনি ছিলেন মেধাবী, উদ্যোগী ও মনোযোগী। প্রাথমিক শিক্ষার পরে, চরসুবদ্দী মাদরাসায় অধ্যয়ন করেন তিনি এবং কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন ঢাকা আলিয়া মাদরাসা থেকে। এরপর শুরু হয় কর্মজীবন। চাকুরি নেন বিএডিসিতে। এখানেই তিনি নিয়মতান্ত্রিক শ্রমিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হন। যোগদান করেন বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনে। বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করার পর এক সময় তিনি এ সংগঠনের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। সেখান থেকে চলে গিয়ে তিনি যোগদান করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলে এবং নির্বাচিত হন এ দলের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক পদে। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনেরও উপদেষ্টা হিসেবে আমৃত্যু বরিত ছিলেন। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি (সাবেক) সোভিয়েত ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক শ্রমিক প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগদান করেন এবং সে দেশের বিভিন্ন শহর পরিভ্রমণ করেন।

দৈনিক ইনকিলাবের সঙ্গে মাওলানা ফারুকের বরাবরই যোগাযোগ ছিল। তিনি ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেম হযরত মাওলানা আলহাজ্ব এম, এ মান্নানের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসতেন। মাওলানা হুজুরের ব্যক্তিত্বের দুর্বার আকর্ষণে ও তাঁর সান্নিধ্য লাভের আকাঙ্খায় ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে এই যাতায়াত।

সিরাতুল মুস্তাকীমের সন্ধানে
অবশেষে মাওলানা ফারুক সাগ্রহে একটি মহৎ কাজের গুরুদায়িত্ব তুলে নেন নিজ কাঁধে। সেটি হলো মাওলানা হুজুরের মসজিদে গাউসুল আজমে খুৎবার পূর্বে প্রদত্ত অমূল্য ভাষণগুলো সংগ্রহ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করা। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মাওলানা হুজুরের একটি অনন্য পরিচয় হলো, তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন আলেমেদ্বীন ও সুবক্তা। ইলমী জটিল বিষয়গুলিও তিনি আলোচনা করতেন অত্যন্ত সাবলীল ও হৃদয়গ্রাহী ভাষায়। ঢাকার মহাখালীতে মসজিদে গাউসুল আযম আবদুল কাদির জিলানী প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে তিনি প্রতি শুক্রবার জুমআর খুৎবার পূর্বে বয়ান রাখতেন প্রায় নিয়মিতভাবে। তাঁর সে প্রজ্ঞাপূর্ণ ও আকর্ষণীয় বয়ান শোনার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এসে মসজিদে জমায়েত হতেন জ্ঞান পিপাসু শ্রোতামন্ডলী। সিদ্ধান্ত হলো, এই বয়ানসমূহ সংগ্রহ করে রাখা ও প্রকাশ করার। মাওলানা ফারুক স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে গ্রহণ করলেন এই মহতী কাজের জিম্মাদারী। তিনি এ গুলো ক্যাসেটবদ্ধ করতে থাকলেন, সেখান থেকে অনুলিখন করতে থাকলেন এবং প্রকাশের ব্যবস্থা করতে থাকলেন দৈনিক ইনকিলাবের ধর্ম-দর্শন পাতায়। এই প্রকাশিত বয়ানগুলি আবার গ্রন্থাকারে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া হলো এবং ‘সিরাতুল মুস্তাকীমের সন্ধানে’ শিরোনামে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে প্রায় সাড়ে আটশ’ পৃষ্ঠার দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হলো বাংলাবাজারের বাড কম্প্রিট এন্ড পাবলিকেশন্স থেকে। এর সার্বিক তত্তাবধানেও ছিলেন মাওলানা ফারুক। তাঁর দায়িত্বশীলতা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা বাস্তবিকই প্রশংসনীয়। তিনি মাওলানা হুজুরের জীবনী লেখার কাজেও হাত দিয়ে ছিলেন এবং অনেক দূর অগ্রসর হয়ে ছিলেন। নিজেও তিনি নিবন্ধ লিখতেন। লেখায় তাঁর হাত ছিল চমৎকার।

মাওলানা ফারুক ছিলেন সদা হাস্যমুখ, সদালাপী, বন্ধুবৎসল, নীতিনিষ্ঠ, উদারদিল এক আদর্শ মানুষ। তাঁর স্মৃতি ভুলবার নয়। পারিবারিক জীবনে সহধর্মিনী, দুই কন্যা ও এক পুত্র নিয়ে তিনি সুখীই ছিলেন। কিন্তু ২০০৫ সালে আসে বিপদের এক প্রচন্ড ঝাপটা। একমাত্র পুত্র ইশতিয়াক হাসান ছিল অত্যন্ত মেধাবী। কৃতিত্বের সাথে সে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করে স্টান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকে চাকরির মাধ্যমে শুরু করে কর্মজীবন। বিবাহের কথাবার্তাও চলছিল তার। সামনে অপেক্ষমান সোনালি ভবিষ্যৎ। কর্মস্থল চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা করেছিল সে পিতা-মাতা ও বোনদের সাথে মিলিত হতে। কিন্তু হায়! সে আশা তার পূরণ হলো না। পথে ঘটল সড়ক দুর্ঘটনা এবং তাতে মর্মান্তিকভাবে জীবনাবসান হলো তার। এই হৃদয়বিদারক মৃত্যুতে মাওলানা ফারুক ভেঙে পড়লেন। ২০১৬ সালে ইন্তেকাল করেন তার সহধর্মিনী। তার দু’টি কন্যা ১. ফারাহ দিবা জলি ২. নুসরাত দিবা পলি। উভয়েই উচ্চশিক্ষিতা, বিবাহিতা এবং সুপ্রতিষ্ঠিতা। পিতা, মাতা, ভ্রাতাহীন অবস্থায় অবশ্যই তারা দারুণ শোকে মূহ্যমান। শোকে কাতর তাঁর স্বজনরা, আমরাও শোকাহত এবং তাদের দুঃখের অংশীদার। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবাইকে ধৈর্যধারণ করার তৌফিক দান করুন এবং মাওলানা ফারুককে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মকামে অধিষ্ঠিত করুন। আমীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাওলানা একেএম ফারুক
আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->