Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদেশি বিনিয়োগ দেশের জন্য মঙ্গল

‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০২১, ১২:০৫ এএম

শেয়ারবাজারে প্রণোদনার টাকাযাচাই করবে অর্থ মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন


অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ যত বেশি ফরেন ইনভেস্টমেন্ট আকর্ষণ করতে পারবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল হবে। তিনি বলেন, এখন আমাদের হাতে টাকা আছে, তাই নিজেরা ব্যয় করছি। কিন্তু আমরা চাই ফরেন ইনভেস্টমেন্ট। একই সঙ্গে করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় সরকারের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় দেয়া ঋণের টাকা ‘শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে’র যে অভিযোগ উঠেছে তা যাচাই করা হবে বলে উল্লে করেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে যারা রেমিট্যান্স পাঠায় তাদের আমরা ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছি। যারা টাকা পাঠান, এবং যারা এখানে সেই টাকা রিসিভ করেন, তারা টাকা হাতে আসলে তা নিজেরাও ব্যয় করতে পারবেন। পুঁজিবাজারেও ব্যয় করতে পারবেন। সে কারণে পুঁজিবাজারে টাকা গেছে বলে আমরা জানি। প্রণোদনার প্যাকেজের ঋণের টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে তথ্য আমি পাইনি। আমি এখন এটি ভেরিফাই করব। আমরা পরবর্তী সভায় জবাব দেব। আমাকে আগে জানতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে শেষে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। সভায় রাজুপাড়া থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগসহ ছয়টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রণোদনার প্যাকেজের যেগুলো কোভিড রিলেটেড সেগুলো স্পেসিফাইড করা আছে কোন খাতে আমরা কতো ব্যয় করব। সেই খাত বাদ দিয়ে অন্য কোথাও টাকা যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। আমরা এই টাকা সরাসরি ট্রান্সফার করেছি। যার জন্য টাকাটি অনুমোদিত হয়েছে তাকেই আমি পাঠিয়েছি। সুতরাং সেই টাকা রিসিভ করে সে কি করবে সেটা পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের ভেরিফাই করতে হবে। আগামীতে দেখব যদি এ ধরনের আরও কোনো ঘটনা ঘটে, যদিও আমার বিশ্বাস ঘটেনি, কারণ যাদের দিয়েছি আপনারা জানেন কোন কোন খাতে কোন কোন সেক্টরকে টাকা দিয়েছি। সেখান থেকে টাকা পুঁজিবাজারে যাওয়ার কথা না। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেফারেন্স যেহেতু দিয়েছেন সুতরাং আমাকে এটি আরও ভেরিফাই করতে হবে। ভেরিফিকেশন করার পর আমি সম্পূর্ণ তথ্য দিতে পারব। এর আগে গত বছরে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের ব্যবসায়ী এবং শিল্পোদ্যোক্তাদের এই ঋণ দেয়া হয়। আরক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীদের ৪ শতাংশ সুদে দেয়া হয় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের সুদহার ছিল ৯ শতাংশ। বাকি সুদের টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শামসুল আরেফিন এক ভার্চুয়াল ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের জানান, ‘পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’ প্রকল্পের (প্যাকেজ নং- ডব্লিউডি-০৫) আওতায় রাজুপাড়া থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের পূর্ত কাজ সম্পাদনে ঠিকাদার নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ কাজটি করবে ‘স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড’। এতে ব্যয় হবে ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার টাকা।
তিনি জানান, বৈঠকে ‘বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ স্থাপন’ প্রকল্পের (প্যাকেজ নং- ডব্লিউডি-১) পূর্ত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ কাজটি পেয়েছে ‘এম জামাল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’। এতে ব্যয় হবে ২৬৬ কোটি ১৭ লাখ ১৭ হাজার ৬২৮ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের (প্যাকেজ নংডব্লিউপি-১) পূর্ত কাজ সম্পাদনে ঠিকাদার নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যৌথভাবে এ কাজটি পেয়েছেÑ ‘বিআইসি’ ও ‘এসএসআরআই’। এতে ব্যয় হবে ১৫৫ কোটি ৪৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
তিনি জানান, বৈঠকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সউদী আরবের ‘সউদী বেসিক ইন্ডাস্টিজ কর্পারেশন’ (সাবিক) থেকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ১ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ‘বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন’ (বিসিআইসি) এ সার আমদানি করবে। এতে ব্যয় হবে ১২৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে আগামী ২০২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক স্তরের (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের মোট ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৬টি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ৫২টি লটে এসব বই সংগ্রহ করবে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’। এর মধ্যে ৪৬টি লটের বই সরবরাহের কাজটি পেয়েছে ‘অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস’ এবং অবশিষ্ট ৬টি লটের বই সরবরাহ করবে ‘কচুয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স’। এতে মোট ব্যয় হবে ১১৫ কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
তিনি জানান, বৈঠকে জামালপুরের ‘যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড’ (জেএফসিএল)-এর জন্য ‘রিফর্মড গ্যাস ওয়েস্ট হিট বয়লার’ ও তৎসংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি কেনার একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫৬ কোটি ৬৫ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে তিনটি প্রস্তাব :
অতিরিক্ত সচিব জানান, ক্রয় কমিটির বৈঠকের আগে অনুষ্ঠিত ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ণাঢ্য ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের বছরব্যাপী গৃহীত কর্মসূচির মাধ্যমে সমাপনী ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম নিয়োগ, নগরসজ্জা এবং দেশে-বিদেশে ওয়ার্কশপ/সেমিনার/কনফারেন্স, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী আয়োজনসহ বিভিন্ন প্রকাশনা, ভিডিও, ডকুমেন্টারী, এলইডি স্কিন স্থাপন এবং আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সেবা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়; বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড-এর আওতায় ফোর টায়ার জাতীয় ডাটা সেন্টারের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ‘ওরাকল ক্লাউড’ ক্রয় এবং ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ’ কর্তৃক কর্ণফুলী নদীর ডান তীরে লালদিয়া চর এলাকায় ৫৯.৮৭ একর জমির উপর পিপিপি-এর আওতায় প্রস্তাবিত ‘লালদিয়া বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ’ প্রকল্পটি পিপিপি তালিকা হতে বাদ দেয়ার একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্প টি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ইনিশিয়াল স্টেজে যে ধ্যান-ধারণা নিয়ে প্রকল্পটি করা হয়েছিল, পরে দেখা গেছে সেভাবে করলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এখানেও তাই হয়েছে। এখানে যে পরিমাণ জায়গা রয়েছে, সেগুলো যদি আমরা ব্যবহার করি তাহলে চাহিদা মেটাতে পারব না। এই কারণে কিছু কিছু প্রকল্প এভাবে বাদ দিতে হয়। তিনি বলেন, পিপিপি কনসেপ্টটি আমরা এখনও ভালোভাবে নিতে পারিনি, এটা সত্য। তারপরও কাজ শুরু হয়েছে। যৌথভাবে শুরু করলে সময়টা দিতে হবে। যেসব বিষয় আমাদের ফেস করতে হচ্ছে, সেগুলো মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যাব। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রথমদিকে আমরা পারিনি। কারণ, আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ছিল না। ইনফ্রাস্ট্রাকচার বলতে ফিজিক্যাল নন-ফিজিক্যাল বোথ। এখন আমরা সবধরনের ইনফ্রাস্ট্রাকচারের জন্য ক্যাপাবল। সেজন্য আমরা মনে করি, পিপিপি কনসেপ্ট এবং ডিরেক্ট ফরেন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাহত হবে না। সামনের দিকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ