পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস হিসাবে পরিচিত সিআরবির ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে নানা কর্মসূচিতে উত্তাল সিআরবির সবুুজ প্রাঙ্গণ। গতকাল শনিবারও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে সিআরবি সাত রাস্তার মাথায় প্রতিবাদী অবস্থান, বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, সাইকেল র্যালি এবং প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গান-নাচ, কবিতা ও কথামালায় পরিবেশ ও প্রকৃতি বিধ্বংসী এই অপতৎপরতার প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীরা। সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা সিআরবিতে জড়ো হন। হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবিত সেই স্থানের সামনে সড়কেই দাঁড়িয়ে চলে গান-নাচ, মূকাভিনয়সহ নানা আয়োজন। সবুজ ধ্বংসের প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে সিআরবি এলাকায় গাছের চারা রোপন করা হয়।
নগরীর সবচেয়ে দৃষ্টি নন্দন এবং উম্মুক্ত সবুজ-ছায়াশীতল সিআরবিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) একটি ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ ও ৫০ আসনের নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে চট্টগ্রাম। গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে নানা প্রতিবাদী কর্মসূচি। সর্বস্তরের মানুষের এই প্রতিবাদ, বিক্ষোভ রূপ নিয়ে সামাজিক আন্দোলনে। গতকালের নানা কর্মসূচিতে বক্তাগণ বলেন, সিআরবি হেরিটেজ ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা। সেখানে কোন বাণিজ্যিক স্থাপনা করার এখতিয়ার কারো নেই। আইন অমান্য করে যারা সেখানে হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। অবিলম্বে এই প্রকল্প বাতিল করতে হবে। আর তা না হলে তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে সাত রাস্তার মোড়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ধ্রুব ভট্টাচার্য্য, নগর সভাপতি দীপা মজুমদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতিবাদ ও ক্ষোভকে উপেক্ষা করে সরকার ও রেল কর্তৃপক্ষ সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল ও কলেজ নির্মাণের জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। সিআরবি একটি রিজার্ভ এলাকা। এখানে অনেক শতবর্ষি বৃক্ষ আছে। পরিবেশের ক্ষতি করে এখানে কোন ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া যাবে না। সিআরবির প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় শিশু কিশোর মেলার উদ্যোগে সিআরবির সাত রাস্তার মোড় থেকে সাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিটি নগরীর বিভিন্ন মোড় প্রদক্ষিণ করে ফের সিআরবিতে এসে শেষ হয়। সেখানে শিশু কিশোর মেলার সংগঠকদের মধ্যে অরুণা সরকার, আকাশ বড়ুয়া, ধ্রুব ভট্টাচার্য্য, দিবাকর দেওয়ানজী এবং রিপা মজুমদার বক্তব্য রাখেন। বক্তারা অবিলম্বে ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষের সাথে রেল কর্তৃপক্ষের সম্পাদিত জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল এবং সিআরবিকে হেরিটেজ ও রিজার্ভ এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের জোর দাবি জানান। এডাব চট্টগ্রামসহ কয়েকটি সংগঠন মানববন্ধন এবং গাছের চারা রোপন করে। উদীচী চট্টগ্রাম ও কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবাদী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
হাসপাতাল সিআরবিতে নয় : মেয়র
সিআরবিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে হাসপাতাল নির্মাণ না করার আহ্বান জানিয়েছেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। প্রয়োজনে সিটি করপোরেশন ওই প্রকল্পের জন্য জমির ব্যবস্থা করে দেবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে শুক্রবার রাতে সিটি মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, আমার কথা হল, চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কোনো কিছু করার তো দরকার নেই। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমরা আর ফিরে পাব না। রেলওয়ের প্রচুর জায়গা আছে পাহাড়তলীসহ বিভিন্ন স্থানে। আর তারা যদি দিতে না পারে, তাহলে সিটি করপোরেশনের মোহরাসহ কয়েকটি এলাকায় কিছু জমি আছে। সেখান থেকে দিতে পারব। দুই আড়াই একরের মত, তারা যা চায়।
‘সিআরবিতে স্থাপনা আইনের পরিপন্থি’
আওয়ামীলীগ নেতা বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেছেন, সিআরবিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সিআরবির আকার, প্রকৃতি নষ্ট করে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ করা মানেই বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। গণমাধ্যমকে দেয়া মতামতে তিনি বলেন চট্টগ্রামের উন্মুক্ত এলাকা সিআরবিকে অনেকে ‘ফুসফুস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মুক্ত পরিবেশে শ্বাস নেয়ার জায়গা হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। হাসপাতাল হলে এলাকার নাগরিকদের শারিরীক সুস্থতার চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা প্রকট হতে পারে বিধায় হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা করা সকল নাগরিকের দায়িত্ব। সিআরবি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত। এখানে কোন ধরনের হাসপাতাল নির্মাণ করা মানে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।