Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যায় বিপর্যস্ত ইউরোপে জরুরি উদ্ধার তৎপরতা

আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

আবহাওয়ার প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে কার্বন নিঃসরণ সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনার জন্য তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বারবার গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলেও ইউরোপসহ পশ্চিমাদের কানে তার আওয়াজ পৌঁছেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো ঘোষণা দিয়ে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা থেকে সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু এবার নিজেদের ঘরে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব পড়ায় তারাও অনেকটা নড়েচড়ে বসতে চলেছে। প্রচণ্ড খরা ও তাপদাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল এলাকা দাবানলে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। দমকল বাহিনীর সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে আগুনের লেলিহান শিখা তার থাবা বিস্তার করেই চলেছে।
কয়েক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইউরোপ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৩০ জনে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিম জার্মানির বেশিরভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবারও জরুরি উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রাখেন। এর মধ্যে কেবল জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলেই প্রাণহানির সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১০০। এছাড়া এখনও সেখানে শত শত মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
জার্মানির পত্রিকা বিল্ড এই বন্যাকে ‘ফ্লাড অব ডেথ’ নামে অভিহিত করেছে। দেশটির বাসিন্দারা আচমকা এমন ভয়াবহ বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েন। কোনো কোনো অঞ্চলে রাস্তা এবং ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর রাস্তায় গাড়ি উল্টে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কয়েকটি জেলা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।
জার্মানির রাইনল্যান্ড-প্যালেটিনেট প্রদেশের ব্যাড নিউইনাহরের ২১ বছর বয়সী ডেকোরেটার অ্যাগ্রোন বেরিশা বার্তাসংস্থা এএফপি’কে বলেন, ‘১৫ মিনিটের মধ্যে সবকিছু পানির নিচে তলিয়ে যায়। আমাদের ফ্ল্যাট, আমাদের অফিস, আমাদের প্রতিবেশিদের বাড়িঘর, সবকিছু পানির নিচে ছিল।’ হান্স-ডিয়েটার ভ্রানকেন নামে ৬৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা এখানে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাস করছি এবং আগে কখনও এমন পরিস্থিতির শিকার হইনি।’
রাইনল্যান্ড-প্যালাটিনেটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রজার লেওয়েন্টজ জার্মান পত্রিকা বিল্ডকে জানিয়েছেন, মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। জরুরি সেবার সাথে সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে নিখোঁজদের তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে।
উত্তর পশ্চিম ইউরোপজুড়ে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে জার্মানি ছাড়াও বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস এবং সুইজারল্যান্ডের মত কয়েকটি দেশ জুড়ে এই বন্যা দেখা দেয়। বেলজিয়াম থেকে অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বলা হচ্ছে, ইউরোপে গত কয়েক দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। জার্মানিতে সবচাইতে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রাইনল্যান্ড-প্যালাটিনেট এবং নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়া নামে দু’টি রাজ্য। জার্মানিতে উদ্ধার ও সন্ধানকাজে সাহায্য করার জন্য ১৫ হাজার পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য এবং জরুরি সংস্থার কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।
জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় আরভাইলার জেলার কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ১৩০০ মানুষের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। শুল্ড নামে একটি গ্রাম প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। রাইনল্যান্ড-প্যালাটিনেট-এ জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। কোলোনের কাছে এরফস্টাট-ব্লেজেম শহরে একসাথে অনেকগুলো বাড়ি ধসে পড়েছে।
অন্যদিকে বেলজিয়ামের লিয়েজ এবং নেদারল্যান্ডসের ম্যাস্ট্রিখটের মতো বেশ কিছু শহর ও গ্রামে বন্যার ঝুঁকির কারণে হাজার হাজার লোককে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে রাজনীতিবিদরা আকস্মিক এই বন্যার জন্য বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া ও এই কারণে ঘটা দুর্যোগের সংখ্যা আগামীতে আরও বাড়বে। তবে কোনো একটি ঘটনাকে দিয়ে এর ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। গোটা বিশ্ব আগামীতে এ রকম আরও নানান সঙ্কটের মুখে পড়বে। সূত্র : ডয়চে ভেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ