খুলনা মহানগরীর সুন্দরবন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অবৈধ গর্ভপাত, নবজাতক বিক্রির ও পাচার চেষ্টার অপরাধে ক্লিনিক মালিকসহ ১০জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৬। এঘটনায় শনিবার লবনচরা থানায় মামলা হয়েছে। দুপুরে র্যাব-৬ কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল রওশনুল ফিরোজ।
শুক্রবার রাতে ওই ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হল- ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে অবৈধ বাচ্চা প্রসব এবং পাচার সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রধান আসামী বাগেরহাটের রামপালের রামেশ চন্দ্র রায়ের পুত্র রংধনু আবাসিকের সুন্দরবন ক্লিনিকেন মালিক তুষার কান্তি মন্ডল (৪৫), তার স্ত্রী বেবী চন্দন রায় (৩২), বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের জিওধরা গ্রামের মৃত আলী আক্কাস হাওলাদারের ছেলে মোঃ সোহরাব হাওলাদার (৬৫), তার মেয়ে ও নবজাতকের মা তামান্না তমা (২৬), খুলনার লবনচরার ফাতেমাবাদ এলাকার মৃত আঃ খালেকের ছেলে মোঃ মজুনুর রহমান খাঁন লালু (৪৫), একই এলাকার মোঃ শাহাজাহান সানার ছেলে মোঃ মহিদুল ইসলাম (২৭), হরিণটানা জয়খালী এলাকার মোঃ শাহজাহান খানের ছেলে মোঃ শামীম হোসেন (১৮), ডুমুরিয়ার গজেন্দ্রপুরের মোঃ মজনুর রহমান লালুর স্ত্রী নবজাতক ক্রেতা মোঃ লাজলী খাতুন (৩০), একই এলাকার শওকত মোল্লার স্ত্রী মোছাঃ লাকী আক্তার (৪৮) এবং লবনচরার ফাতেমাবাদ এলাকার মোঃ জাকির হোসেনের স্ত্রী মোছাঃ হোসনেআরা বেগম (৪৫)।
প্রেসব্রিফিংয়ে র্যাব-৬ অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল রওশনুল ফিরোজ বলেছেন, মানব সেবার মত প্রশংসনীয় কাজে নিয়োজিত থেকে সুন্দরবন ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে অবৈধ বাচ্চা প্রসব, অবৈধ গর্ভপাত ও শিশু পাচারসহ বিভিন্ন ঘৃন্য কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। শুধু তাই নয় অবৈধ গর্ভপাত ও শিশু বিক্রির মতো নিকৃষ্ট কাজে রোগীদের উৎসাহিত করতো ক্লিনিকটির মালিক। র্যাব নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, জনৈক মহিলা অবৈধ গর্ভস্থ হওয়ায় তার সন্তান ভূমিষ্ট করা এবং পরবর্তিতে বিক্রি করার মতো ঘৃণ্য কাজের পরিকল্পনা করছে। এক্ষেত্রে সে টিউমার অপারেশনের নামে ক্লিনিকের ভর্তি হয় এবং সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর তাকে অসাধু ব্যক্তিদের কাছে বিক্রয়ের জন্য পরিকল্পনা করে। এ ব্যাপারে সুন্দরবন ক্লিনিক ও তার স্বত্তাধিকারী সরাসরি সহায়তা প্রদান ও জড়িত বলে জানা যায়। ওই ক্লিনিকে প্রায়শই অবৈধ বাচ্চা ক্রয় বিক্রয় ছাড়াও নানাবিধ অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো বলে জানা যায়। পাশাপাশি মেয়াদ উর্ত্তীণ রেজিস্টেশনের সুন্দরবন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কিংবা প্রশিক্ষিত নার্স কারো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কথিত ডাক্তার মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট হয়েও রোগী দেখা থেকে শুরু করে সিজারিয়ান অপারেশনও পরিচালনা করতো। ক্লিনিকে ব্যবহৃত ওষুধ ও ব্যবহারের অযোগ্য সরঞ্জামাদি ক্লিনিকের পরিবেশকে অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। বসবাসের অযোগ্য এ পরিবেশে ক্লিনিকের মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট নিজেই বিভিন্ন সময় নানাবিধ সিজারিয়ান অপারেশনসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে।
শুক্রবার রাতে সুন্দরবন ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করে নবজাতক সন্তান বিক্রিকালে শিশুটিকে উদ্ধার পূর্বক এ ঘটনার সাথে জড়িত সকল অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ক্লিনিক মালিক কথিত চিকিৎসক তুষার কান্তি মন্ডল ডাক্তার সেজে তার স্ত্রী বেবী চন্দন রায়ের সহযোগীতায় দীর্ঘদিন যাবত ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে অবৈধ বাচ্চা প্রসব, অবৈধ গর্ভপাত ও পাচারের মত জঘন্য অপরাধ করে আসছে। এছাড়াও তাদের নিকট হতে বাচ্চা ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিনামার তিনটি সাদা ১০০ রেভিনিউ স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়। এ ছাড়া অভিযুক্তরা নারী ও পুরুষ বাচ্চা ক্রয়-বিক্রয় ও পচারের সাথে জড়িত বলে তারা র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের লবনচরা থানায় হস্তান্তর করে তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং মানব পাচার আইনে মামলা করা হয়েছে। একই সাথে জেলা সিভিল সার্জনের সহায়তায় সুন্দরবন ক্লিনিক সিলগালা করে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। র্যাব-৬ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ বজলুর রশীদ প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।