পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে রফতানি আয়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে তৈরি পোশাক ও পাটজাত পণ্য। ফলে পুরো রফতানি আয়ের উপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তৈরি পোশাক রফতানি করে অর্থবছরের প্রথম দু’মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ০১ শতাংশ আয় কম হয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানিতেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ০২ শতাংশ কম আয় হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে দেশের অর্থনীতির প্রাণ সঞ্চারি খাতগুলো এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের প্রধান যোগান প্রবাসী আয় রেমিটেন্স কমছে। সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে প্রবাসীরা যে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছে তা আগের বছরের তুলনায় ৩৯ কোটি ডলার (প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা) বা দুই দশমিক ৫৫ শতাংশ কম। তৈরি পোশাক নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের যে অবিশ্বাস তা এখনো দূর হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখনো শুল্কমুক্ত সুবিধা লাভে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে উন্নয়নের নামে যে মেগা প্রজেক্টগুলো হচ্ছে তা নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে। এগুলো দেখতে শুনতে যাইহোক কার্যত দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে না মিলালে এসব উন্নয়ন থেকে বেশি কিছু পাবার নেই।
দেশের অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে এখনো সক্রিয় রয়েছে রেমিটেন্স। সউদী আরব, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মানব সম্পদ রফতানি পরিস্থিতির উন্নতির যত কথাই বলা হোক না কেন কার্যত এখন পর্যন্ত এর থেকে কোন সুফল পাবার মতো ইতিবাচক অবস্থা তৈরি হয়নি। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবের কারণে এসব দেশে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানিতে কোন কার্যকর উন্নতি না হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে সংগত নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিতে কেবল যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরিতে সাহায্য করে তাই নয়, বরং দেশের মানুষের কর্মসংস্থানেরও একটি বড় মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। অন্যদিকে পোশাক শিল্পকেও কেবল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বিবেচনায় দেখার সুযোগ নেই। দেশের কর্ম বিনিয়োগের দিক থেকে এই শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের ৫০ লাখ নারী এই শিল্পের সাথে জড়িত। কর্মবিনিয়োগে এই শিল্পের অবদান যদি কোনভাবে বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে গোটা দেশের অর্থনীতি তথা সামাজিক ধস নামতে পারে দেশের প্রধান রফতানি আয়ের উৎসের মধ্যে একসময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের যে প্রভাব ছিল তা দিন দিনই হ্রাস পাচ্ছে। চা এখন আর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পণ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না। বরং ক্ষেত্র বিশেষ আমদানি করতে হচ্ছে। চামড়া শিল্পের অবস্থাও খুব একটা সন্তোষজনক নয়। এবছর কোরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করে চামড়া নিয়ে যেসব রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তাতে এই খাত থেকে কতটা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যেসব ননট্রেডিশনাল পণ্য কিছুুকিছু রফতানি হচ্ছে সেসব থেকেও অনেক কিছু আশা নেই। চিংড়ি রফতানির অবস্থাও খুব একটা আশাপ্রদ নয়। অন্যদিকে চলছে মেগাপ্রজেক্ট। এইসব প্রজেক্ট নিয়ে নানামুখী আলোচনা রয়েছে। এইসব প্রকল্পের কারণে দেশে কিছু কাঁচা টাকার নাড়াচাড়া হয়ত হচ্ছে। বাস্তবে এগুলো কোন কর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প নয়। অন্য বিবেচনায় বলা যায়, এসব প্রকল্প থেকে কার্যত কিছু লাভ করতে হলে মানুষের স্বচ্ছতার পাশাপাশি অর্থনীতি চাঙ্গা থাকা অতীব জরুরী। অন্যথায় এগুলো সাধারণ মানুষের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকও সতর্ক মন্তব্য করেছে। অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে তারা সংগত বিবেচনা থেকেই স্থিতিশীলতার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। একথা বোধহয় নতুন করে বলার কোন প্রয়োজন নেই যে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন প্রায় অসম্ভব। একদিকে বিনিয়োগ বৃদ্ধি না পেলে অন্যদিকে রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে দেশের অর্থনীতি যে মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকবে সেকথা আলাদা করে বলার কোন প্রয়োজন নেই। বিনিয়োগের সাথেই সম্পর্ক কর্মসংস্থানের। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বা একে ঘূর্ণায়মান রাখতে হলে নজর দিতে হবে সবদিকে। অবশ্যই এর সাথে জড়িত রয়েছে আস্থা। আস্থার সাথে সম্পর্ক রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার। বিদ্যমান সংকট কাটাতে সংশ্লিষ্টরা যেভাবে চেষ্টা করছেন বোধকরি তা কোন স্থায়ী সমাধান নয় হতে পারে না। জনগণের আয় না থাকলে করের বোঝা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই। প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হচ্ছে, দেশের ব্যাংকগুলো ভরে উঠছে মন্দঋণে। সংকট দেখা দিচ্ছে বিনিয়োগে। ব্যাংকগুলোর উচ্চ সুদের হারের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অন্যত্র। সবমিলে কথা এই দাঁড়ায় যে, দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভাল নেই। এ অবস্থার পরিবর্তন করতেই অর্থনীতিকে কর্ম-বিনিয়োগমুখী করতে হবে।
আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলার কোন সুযোগ নেই। রফতানি আয় বৃদ্ধিতে নজর দেয়া অপরিহার্য। কেন এবং কি কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দেশের জনশক্তি রফতানিতে কার্যকর কোন পরিস্থিতি তৈরি করা যাচ্ছে না তা খুঁজে দেখা দরকার। যত কথাই বলা হোক বাস্তবত দেশের পোশাক শিল্প যে মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে তা দূরীকরণে আন্তর্জাতিক মহলে আস্থা সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমানে দেশ যেভাবে ক্রমেই আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ছে তা থেকে বেরুতে হলে অবশ্যই রফতানি বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে হবে। দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের বিবেচনাতেও শিল্প বিনিয়োগকে ভাবতে হবে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বা টিকিয়ে রাখতে হলে অহেতুক চাপাবাজির কোন সুযোগ নেই। কোথায় কি ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা শনাক্ত করে দূরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। সকলেরই মনে রাখা দরকার একটু একটু উন্নয়ন যেমনি একসময়ে বড় উন্নয়ন হিসেবে বিবেচিত হয়, তেমনি একটু একটু ধসই একসময়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ধস ঠেকাতে সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। আমাদের রফতানি বাণিজ্যসহ যেসব খাত থেকে আমাদের অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে সেসব খাতে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক। সকলেই হা করে বসে রয়েছে লুফে নেবার জন্য। সে সুযোগ যাতে এরা না পায় তার দেখভাল করাও অতীব জরুরী। দেশের সামগ্রিক রফতানি বাণিজ্যের উন্নয়নে সংশ্লিষ্টরা তৎপর হবেন- এটাই প্রত্যাশিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।