Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

১৮৩৩ কোটি টাকার পশু বিক্রি অনলাইনে

ডিজিটাল হাটের ১৫ দিন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২১, ১২:০৩ এএম

করোনার ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে এবার অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাকাটাতেই বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। শহর থেকে গ্রামে-গঞ্জে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট (ভারতীয়) সংক্রমণ ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এবার হাটে জমায়েত হওয়ার পরিবর্তে অনলাইন মাধ্যম থেকে পশু কেনার পরামর্শ দিয়েছেন। এজন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ দেশের জেলা-উপজেলার অনলাইন হাটগুলোকে সম্পৃক্ত করে একটি প্ল্যাটফর্মে এনেছে। ডিজিটাল হাট ডট নেট নামে এই প্ল্যাটফর্মে ১ হাজার ৮৪৩ টি অনলাইন শপের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের ২৪১টি হাটকে যুক্ত করা হয়েছে। এসব হাটে গত ১৫ দিনেই এক হাজার ৮৩২ কোটি ৯৭ লাখ ৮৩ হাজার ২৫৭ টাকা মূল্যে ২ লাখ ৬৩ হাজার ২১৬টি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার একদিনেই অনলাইন হাটে ২৫ হাজার ১৪৮টি গরু-ছাগল/ভেড়া বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ হাজার ১১৯টি গরু/মহিষ ও ৬ হাজার ২৯টি ছাগল/ভেড়া।

তবে এর বাইরেও অনেকে ব্যক্তি পর্যায়ে অনলাইনে পশু বিক্রি করছেন। অনেক কৃষক ব্যক্তি উদ্যোগে, আবার কেউ কেউ কয়েকজন মিলে একেকটি হাটের আয়োজন করেছেন। খামারিদেরও রয়েছে পৃথক পৃথক অনলাইন পশুর হাট।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশে কোরবানি হয়েছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার পশু। এর মধ্যে কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত অনলাইনে মাত্র ৭০ হাজার গরু-ছাগল বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এবার কোরবানির এক সপ্তাহ আগেই তার প্রায় চার গুণ বেশি বিক্রি হয়েছে। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি, সরকারি উদ্যোগে পশু কেনাকাটা সহজ করা, প্রন্তিক কৃষকের সাথে ক্রেতাদের সংযোগ স্থাপন এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে আস্থা তৈরি করার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আগামী কয়েকদিন বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (খামার) জিনাত সুলতানা। তিনি বলেন, গত বছর ৯৪ লাখ ৫০ হাজারের মতো পশু কোরবানি হয়েছে। তার মধ্যে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার। এবার এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৬৩ হাজার ২১৬টি পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার করোনা পরিস্থিতি খারাপ। তাই অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির সম্ভাবনাও বেশি।

অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ জুলাই পর্যন্ত অনলাইনে গরু/মহিষ বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ২৩৯টি এবং ছাগল/ভেড়া ৫৮ হাজার ৯৭৭টি। পশু বিক্রির দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এই বিভাগে এক লাখ ১৩ হাজার ৬৮১টি গরু-মহিষ এবং ২৪ হাজার ৫১৩টি ছাগল-ভেড়া অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রাজশাহী বিভাগ। রাজশাহীতে ২২ হাজার টি গরু ও ১৫ হাজার ২৯১টি ছাগল-ভেড়া বিক্রি হয়েছে। তৃতীয় স্থানে ঢাকা বিভাগ। ঢাকা বিভাগে মোট ৩২ হাজার ৩৮৩টি গরু/মহিষ এবং ২ হাজার ৮৯২টি ছাগল-ভেড়া বিক্রি অনলাইনে হয়েছে। চতুর্থ স্থানে রংপুর বিভাগ। এই বিভাগে অনলাইন মাধ্যমে গরু বিক্রি হয়েছে ২৩ হাজার ৪১০টি ও ছাগল-ভেড়া ৯ হাজার ৮৭৪টি। অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রিতে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ। বিভাগটিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র এক হাজার ২২৪টি গরু ও ৬৫টি ছাগল-ভেড়া অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি, গত ২ জুলাই শুরু হয়েছে অনলাইন হাট। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ডেইরী ফার্ম এসোসিয়েশন ঢাকায় ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করছে। আর গত মঙ্গলবার সবগুলো হাটকে একসাথে করে ফরমরঃধষযধধঃ.হবঃ নামে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করা হয়। এতে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ১ হাজার ৮৪৩ টি অনলাইন শপের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের ২৪১টি হাট একটি প্লাটফর্মে যুক্ত হয়েছে।

জানা যায়, চলতি বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৯ লাখ। তার মধ্যে গরু-মহিষ ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার, ছাগল-ভেড়া ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার এবং অন্যান্য ৪ হাজার ৭৬৫টি। কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মধ্যে গৃহপালিত গবাদিপশুর সংখ্যা ৫৬ লাখ ৮০ হাজার ৪৫২টি। খামারে পালন ৬২ লাখ ৩৬ হাজার। এসব কোরবানিযোগ্য পশু উৎপাদনের খামারির সংখ্যা ৬ লাখ ৯৮ হাজার। কোরবানির পশু বিক্রির ক্ষেত্রে এবার ২৫ শতাংশ অনলাইনে বিক্রির টার্গেট নির্ধারণ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (স¤প্রসারণ) ডা. দেবাশীষ দাশ বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে জনসমাগম এড়াতে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাকাটার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। মোট পশুর ২৫ শতাংশ ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস থেকে বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ