পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঘরে বসে অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয়সহ নানা পন্য কেনা এখন দেশের মানুষের কাছে পরিচিত। বিগত কয়েকবছর ধরে অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন ক্রেতারা। এর সাথে এখন যুক্ত হয়েছে কোরবানির পশু কেনাও। প্রথম দিকে ব্যক্তি উদ্যোগে অনলাইনে কেনাকাটা শুরু হলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সাল থেকে সরকারি উদ্যোগে এখন অনলাইনে বসছে ডিজিটাল হাট। যেখানে রাজধানী শহর ছাড়াও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারি, ব্যক্তি উদ্যোক্তাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ফলে জেলা ও উপজেলা শহরেও এখন অনলাইন মাধ্যমে কোরবানির পশু কেনার সুযোগ পাচ্ছেন ক্রেতারা। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেও ভার্চুয়াল মাধ্যমে চলছে পশু কেনাবেচা।
অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট বা কোরবানির পশু বিক্রি করে এমন প্রতিষ্ঠানেগুলোর মধ্যে যারা কোরবানির গরু, ছাগল, উট, দুম্বা, মহিষ বিক্রি করে তারা হলো- বিক্রয় ডটকম, বেঙ্গল মিট, ডিজিটাল হাট, দারাজ গরুর হাট, প্রিয়শপ, দেশি গরু, মাদল, হেক্সা ট্রেডিং, ই-বাজার, অথবা ডটকম, আজকের ডিল ইত্যাদি।
সরকারের এটুআই প্রকল্পের একশপ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি বিভাগ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ডিজিটাল হাটের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। আগামীকাল রোববার এবারের ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনের পর যে কেউ আইসিটি বিভাগ পরিচালিত ‘ফরমরঃধষযধধঃ.মড়া.নফ’ ওয়েবসাইট থেকে কেনা-বেচা করতে পারবেন। আর বিক্রেতাদের স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ডিজিটাল হাটে তালিকাভুক্ত হতে হবে। এবারের ডিজিটাল হাটে ই-ক্যাব ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন অনুমোদিত খামারিরা পশু বিক্রি করতে পারবেন। এ ছাড়া স্থানীয় জেলা প্রশাসনের অনুমোদিত বিক্রেতারাও পশু বিক্রি করতে পারবেন।
জানা যায়, ডিজিটাল হাটে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের পশু সরাসরি কেনার সুযোগ করে দিচ্ছে ই-কমার্স সাইটগুলো। এবারের কোরবানির জন্য ইতোমধ্যে বেসরকারি উদ্যোগের ডিজিটাল হাটগুলো প্রস্তুত হয়েছে। বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম তাদের সাইটে পশুর ছবি, বর্ণনা দিয়ে প্রচারণাও শুরু করেছেন। খামারি, কৃষকরাও ফেসবুকসহ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিক্রির জন্য তুলে ধরছেন তাদের গরু, ছাগল, ভেড়াসহ কোরবানির পশু।
বিক্রেতারা জানান, অনলাইনে পশুর ছবি, বর্ণনা ও দাম উল্লেখ করার পাশাপাশি পছন্দ হলে স্বশরীরে ক্রেতাদেরকে পশু দেখে কেনার সুযোগও রাখছেন। রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন খামারী ও ফার্ম নিজস্ব নামে ফেসবুকে পেজ ও অনলাইনে হাটের আয়োজন করে বিক্রি করছে পশু। নামিদামি কোম্পানিগুলোও নিজেদের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকের গরু নিয়ে সাজিয়েছে পশুর হাট।
২০১৫ সাল থেকেই অনলাইনে শুরু হয়েছে কোরবানীর পশু কেনাবেচা। শুরুর দিকে বিষয়টি নিয়ে অনেকে হাস্যরস করলেও ধীরে ধীরে এটিই এখন সবচেয়ে বড় মার্কেটে পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জনপ্রিয় হয় অনলাইনে পশু কেনাবেচা। এখন এটি পশু কেনার নিরাপদ ও বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। পশুর হাটের নানা ঝক্কি ঝামেলা এড়িয়ে যারা কোরবানীর পশু কিনতে চান তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকছেন এই মাধ্যমে। রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, এটুআই’র একশপ, ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলে আয়োজন করা হচ্ছে পশুর হাট, প্রতিটি জেলাতেই সরকারি উদ্যোগেও থাকছে একই রকম আয়োজন।
আইসিটি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ডিজিটাল হাটে এবার দেশের সর্বমোট ৪৬৮টি হাট যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৩৬টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৭টি, খুলনা বিভাগে ৩৪টি, রাজশাহীতে ৬১টি, বরিশালে ৫০টি, সিলেটে ২৯টি, রংপুরে ৪৫টি এবং ময়মনসিংহে ২৬টি হাট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরুর প্রথম বছরেই বেশ সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো পরিচালিত ডিজিটাল হাটে বিক্রি হয়েছিল ২৭ হাজার পশু। গত বছর বিক্রি হয় ৩ লাখ ৮৭ হাজার পশু। এটাকে খুবই ইতিবাচকভাবে দেখছেন ডিজিটাল হাটের উদ্যোক্তা, ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
ডিজিটাল হাটের ওয়েবসাইটে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৭০টি পশু খামারের খামারিরা যুক্ত হয়েছেন। গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, উট ও মহিষকে প্রাণীর ক্যাটাগরি হিসেবে ওয়েবসাইটে রাখা হয়েছে। ওয়েবসাইটে গ্রাহকের অভিযোগ জানানোরও ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া আছে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের সুবিধা। ডিজিটাল হাটের উদ্যোগে পশু শিপমেন্টের ব্যবস্থাও রয়েছে। মাংস প্রসেসিং করার জন্য রয়েছে কসাইয়ের ব্যবস্থাও।
ই-ক্যাবের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর আলম শোভন বলেন, ডিজিটাল পশুর হাট সবার জন্যই উন্মুক্ত একটা প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) অধীনে দেশব্যাপী অনেক উদ্যোক্তা রয়েছেন। এই প্রান্তিক খামারিদের আমরা ‘ ডিজিটাল হাটে’ যুক্ত করছিলাম। এবার সরকার কেন্দ্রীভাবে ডিজিটাল হাটের আয়োজন করেছে। এখানে লেনদেন পদ্ধতি খুবই স্বচ্ছ, প্রতারণার সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে এই হাটের আরও প্রসার ঘটবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল হাট বাস্তবায়নে সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে ডিএনসিসি। এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় আরও গুরুত্ব পাবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে দেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ভিত্তিক অনলাইনে গবাদিপশু বিক্রি করতে বিভাগীয় কমিশনারদের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া অনলাইনে পশুর ছবি আপলোড করার আগে গবাদিপশুর স্বাস্থ্য সনদ নিতে হবে। এটি দেবেন সংশ্লিষ্ট ভেটেরিনারি সার্জনেরা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অনলাইনে গবাদিপশু বিক্রির জন্য খামারিদের সংশ্লিষ্ট অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযোগে সহযোগিতা করবে এবং আপলোড করার ক্ষেত্রে মালিকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, গবাদিপশুর বয়স, ওজন, মূল্য ও ছবি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আগামীকাল ৩ জুলাই ডিজিটাল হাটের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে।
দারাজ ২০১৭ সাল হতে ‘ডিজিটাল কোরবানির হাট” নামক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে কোরবানির গরু/ছাগল/মহিষ বিক্রি করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা প্রান্তিক খামারিদের এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত গরু/ছাগল/মহিষ বিক্রির সুযোগ করে দিচ্ছে। তারা শতভাগ অর্গানিক গরু পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি গরুর লাইভ ওয়েট, রঙ, দাত ইত্যাদি দেখে কেনার এবং ছবির পাশাপাশি খামার ও গরুর ভিডিও দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। এছাড়া, বিদেশি উন্নত জাতের গরুর পাশাপাশি রয়েছে দেশি জাতের সনাতন পদ্ধতিতে লালিত পালিত গরু।
২০২০ সাল হতে ‘কোরবানির পশুর হাট’ শিরোনামে কোরবানির পশু বিক্রি করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ইকমার্স প্রতিষ্ঠান অথবা ডটকম। কোরবানির গরু বিক্রির পাশাপাশি ছাগল ও কোরবানির সরঞ্জাম বিক্রি করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া, মুল্য পরিশোধ সাপেক্ষে কসাই সার্ভিস ও কোরবানির পশু প্রসেস করে হোম ডেলিভারি করে থাকে।
বেঙ্গল মিট পাবনাতে তাদের খামার করেছে। তবে রাজধানীসহ সারাদেশেই তারা অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে কোরবানির পশু সরবরাহ করছে। তাদের ওয়েবসাইটে ‘হালাল এবং নিরাপদ কোরবানি’ নামে একটি ক্যাম্পেইন চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এবার গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ পশু নিয়ে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বিপণন প্রধান মেহেদি সাজ্জাদ। একইভাবে অন্যান্য অনলাইন শপগুলোও পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে অনলাইনে গরু, ছাগল, মহিষ, দুম্বা ইতাদি বিক্রি করছে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, নতুন এই অনলাইন ব্যবস্থায় ক্রেতাদের অভ্যস্ত করার জন্য তাদের সন্তুষ্টিকে আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি।
এদিকে অনলাইনে ক্রেতাদের পণ্য কেনার ক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ অনেক পুরনো। বিশেষ করে অর্ডার করা প্রত্যাশিত পণ্য না পাওয়া, পেমেন্ট নেয়ার পর পণ্য ডেলিভারিতে বিলম্ব, পণ্য দিতে ব্যর্থ হলে পেমেন্ট ফেরত পেতে অনিশ্চয়তাসহ নানা অভিযোগ ক্রেতাদের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনলাইন ক্রেতাদের সুরক্ষায় নীতিমালা করেছে। যেখানে পণ্যের মূল্য পরিশোধ, পণ্য প্রদানে ব্যর্থ হলে মূল্য ফেরত এবং নির্ধারিত সময়ে পণ্য ডেলিভারির নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। গাইডলাইনে ক্রেতাদের পণ্য অর্ডারের ক্ষেত্রে মূল্য পরিশোধ পদ্ধতি, পণ্য দিতে না পারলে সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যে অর্থ ফেরত, নির্ধারিত সময়ে ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছে দেয়া, ক্রেতাকে টেলিফোন, ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে অবহিত করার বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ক্রেতাদের কেনাকাটায় সুরক্ষা এবং প্রতারণা থেকে মুক্তি মিলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।