পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দরিদ্র মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে চাল খাওয়ানোর রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছিল সরকারের। সে অনুসারে সম্প্রতি দেশের কোথাও কোথাও ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ভর্তুকিমূল্যে চাল, আটাসহ কিছু নিত্যপণ্য সরবরাহ প্রকল্পও চালু রয়েছে। ডিলার নিয়োগ থেকে শুরু করে ওএমএস’ পণ্য নিয়ে দুর্নীতি ও কারসাজির অভিযোগও শুরু থেকেই আছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখা যায়, ওএমএস বা খোলাবাজারে বিক্রির জন্য ভর্তুকি মূল্যের আটা দরিদ্র মানুষ পাচ্ছেনা। কেজিতে ১২ টাকা ভর্তুকি দিয়ে গরীব মানুষের জন্য ১৭ টাকায় আটা বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ডিলাররা খোলা বাজারে বিক্রি না করে বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়ে লাভ নিচ্ছে নিজেদের পকেটে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেয়া সরকারের ভর্তুকির সুফল পাচ্ছেনা দরিদ্র মানুষ। এভাবেই সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ দরিদ্র মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারছে না। গত সোমবার একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে খুলনায় ১০ কেজি দরে চাল বিক্রি স্কিমে ডিলার নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে এবং প্রকৃত ডিলারদের বঞ্চিত করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মী পরিচয়ধারী ব্যক্তিদেরকে ডিলার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
দেশে মানুষের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, দেশ অর্থনৈতিকভাবে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে বাড়ছে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য। ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে, গরীব আরো গরীব হচ্ছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আওতায় অতি দারিদ্র্য হ্রাস এবং সকল মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব উন্নয়নশীল দেশের উপর কিছু আন্তর্জাতিক কমিটমেন্ট রয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মত বেকার, অতিদরিদ্র মানুষদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসার অর্থনৈতিক সক্ষমতা আমাদের সরকারের না থাকলেও সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেও কৃষি, খাদ্য ও জ্বালানী খাতে এবং দরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির ব্যবস্থা করছে সরকার। খোলা বাজারে ও ট্রাকে নিয়ে প্রতিদিন খোলা বাজারে চাল-আটা বিক্রির ব্যবস্থা দেশে দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকলেও বর্তমান সরকারের সময় ওএমএস ব্যবস্থার পরিধি বাড়ানো হয়েছে। নিম্নবিত্ত থেকে গ্রামীণ মধ্যবিত্ত পর্যন্ত স্বল্পমূল্যের খাদ্যপণ্য কিনতে ভিড় জমানোর সংবাদ পাওয়া যায়। মূল্যস্ফীতি বা নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতির কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ যখন কায়ক্লেশে সংসারের খরচ সামলাতে গলদঘর্ম হচ্ছে, তখন কমমূল্যের খাদ্য সামগ্রী তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারে। তবে ডিলার নিয়োগে অনিয়ম, দলবাজি, ডিলারদের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে দরিদ্র মানুষের সুবিধার জন্য সরকারের এসব ব্যবস্থা তেমন কাজে আসছেনা।
একদিকে কৃষিপণ্যে বাম্পার ফলনের পরও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেনা কৃষকরা, অন্যদিকে চাল-আটার মত নিত্যপণ্যও দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকছেনা। এই দ্বিবিধ বাস্তবতার কারণে দরিদ্র মানুষের জন্য ভর্তুকিমূল্যে খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে সরকারকে। শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েও এসব মহৎ উদ্যোগের সুফল দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। একইভাবে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকার কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ ও মজুদ করে থাকে। সরকারী ধান-চাল ক্রয়েও বড় ধরনের দুর্নীতি-কারসাজি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সাধারণ কৃষকরা সরকারী ক্রয়ের সুফল পাচ্ছেনা। সরকারী দলের পরিচয়ধারী একশ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগী ও মিল মালিকরাই সরকারী বরাদ্দের সুফল ভোগ করছে। খোলা বাজারে চাল-আটা বিক্রির ডিলার হিসেবে যেমন সরকারী দলের ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারা নিয়োগ পাচ্ছেন। একইভাবে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল ক্রয় কার্যক্রমেও এসব দলীয় ক্যাডারদের সরব উপস্থিতির অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছর কৃষকদের কাছ থেকে ১৩ লাখ টন ধানচাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২৩ টাকা কেজি দরে ধান এবং ৩২ টাকায় চাল কেনার কথা থাকলেও অনেক স্থানে সরকারী দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাই সরকারী মূল্যে ধান-চাল বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে বলে ইতিপূর্বে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। এভাবেই সরকারী দলের বেপরোয়া, লুটেরা নেতা-কর্মীদের কারণে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- এবং মহৎ উদ্যোগগুলোর সুফল থেকে দরিদ্র মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। জনকল্যাণে রাষ্ট্রীয় খাত থেকে শত শত কোটি টাকা খরচ করেও সরকারের বদনাম কুড়াতে হচ্ছে। দরিদ্র মানুষের ন্যায্য অধিকার এবং সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের যথাযথ লক্ষ্য ও সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে ডিলার নিয়োগে অনিয়ম, ধানচাল ক্রয়ে দুর্নীতি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ করে সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।