পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত জেলার কোতোয়ালী থানাধীন সিআরবি এলাকা উন্মুক্ত স্থান হিসেবে গণ্য করে বৃক্ষ নিধন না করার অনুরোধ জানিয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)সহ ৫টি সংগঠন। নোটিশে পাহাড়, টিলা এবং গাছ-পালা কেটে হাসপাতাল নির্মাণ না করারও অনুরোধ জানানো হয়।
গতকাল বুধবার এ নোটিশ পাঠানো হয়। অন্য সংগঠনগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফরম অ্যান্ড ডিভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)
নোটিশে পরিবেশের গুরুত্ব অনুধাবন করে শতবর্ষী গাছ ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এলাকাটিকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ‘বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা’, জাতীয় ঐতিহ্য, স্মারক বৃক্ষ এবং কুঞ্জ বন ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ঐতিহ্যগত স্থান ঘোষণার এবং শতবর্ষী গাছগুলোকে স্মারক বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বেসরকারি সংস্থা ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে ৬ একর জায়গার উপর ৫শ’ শয্যা ও ১০০ আসন বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। যদিও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনাতে সিআরবি এলাকাকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর সকল পাহাড়/টিলাকে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত রক্ষিত অঞ্চল হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। চট্টগ্রামের ফুসফুসখ্যাত অপরূপ নৈসর্গিক অঞ্চল, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যকলা এবং ইতিহাস সমৃদ্ধ সিআরবি এলাকায় বাংলদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য নিশ্চত করার জন্য একটি হাতপাতাল থাকা সত্ত্বেও,আরেকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল নির্মিত হলে পাহাড়-টিলা এবং অসংখ্য গাছ কাটা পড়বে, জীববৈচিত্র্য তার আবাস হারাবে, জনসাধারণের যাতায়াত বৃদ্ধি পাবে, লোক সমাগম হবে, যাতে করে সিআরবি অঞ্চল তার শতবছরের বৈশিষ্ট্য হারাবে এবং নির্জন এলাকাটি কোলাহলযুক্ত একটি ব্যস্ত অঞ্চলে পরিণত হবে। তাতে করে এ অঞ্চলের গাছ ও জীববৈচিত্র্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, এলাকাটি ছোট বড় পাহাড় ,টিলার সমন্বযে মোট ২১০ একরজুড়ে বিস্তৃত একটি স্থান। যেখানে রয়েছে সেন্ট্রাল বৃটিশ আমলের রেলওয়ে বিল্ডিং, অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন বাংলো, শিরিষ, গর্জন, কড়ইসহ নানা শতবর্ষী গাছ। এসকল গাছে বসবাস করে পাহাড়ি ময়না, টিয়া, শালিক, জালালি কবুতর, চড়ুই, ফিঙ্গে, ছাতারে, মাছরাঙা, কাঠঠোঁকরাসহ নানা প্রজাতির পাখি, ছোট বড় পাহাড়-টিলা, গাছ-গাছালি, পিচঢালা আঁকাবাঁকা রাস্তা আর অনেক শতবর্ষী বৃক্ষ দেখতে ছিমছাম ছবির মত এই পাহাড় কেবলমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই নয়। এলাকাটি ঐতিহাসিক কারণেও গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৩০ সালের ইতিহাস প্রসিদ্ধ চট্টগ্রাম বিদ্রোহে বিদ্রোহীরা অর্থ সংগ্রহের জন্য এখানে অভিযান চালিয়েছিল, তাই ইতিহাসের ছাত্র-শিক্ষকের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সিআরবি, সাতরাস্তার মোড় ও টাইগার পাস ঘিরে থাকা পাহাড় ও উপত্যকায় গাছপালা মণ্ডিত যে এলাকাটি রয়েছে, তা চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ হিসেবে গণ্য করা হয়। সমুদ্রবর্তী নদীবেষ্টিত চট্টগ্রাম নগরী তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও জন্য যুগ যুগ ধরে দেশি বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করে আসছে। এখানে রয়েছে শিরিষতলা নামে একটি প্রশস্ত মাঠ যেখানে প্রতি বছর ১লা বৈশাখ, ১লা ফাল্পুন ইত্যাদি ঐতিহ্যগত উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে।
নোটিশে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদফতর, প্রধান বন সংরক্ষক, জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ রেলওয়ে (পূর্বাঞ্চল), বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার, ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ‘প্রাপক’ করা হয়েছে। নোটিশে উল্লেখিত বিষয়ে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে-মর্মে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, সিআরবি হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ ও নার্স ইনস্টিডিউট নির্মাণের ঘোষণায় চট্টগ্রামে সর্বমহলে প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা গতকাল বুধবার এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বিএনপি নেতারা সবুজ ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিবাদে সিআরবিতে গাছের চারা লাগিয়েছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, উত্তরজেলা সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামসহ নেতারা সিআরবি পরিদর্শন করেন এবং প্রকল্প কর্মকর্তার সাথে সার্বিক বিষয়ে মতবিনিময় করেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, তারা প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলে প্রকল্প সর্ম্পকে অবহিত হয়েছেন। একটি সংবাদ সম্মেলন করে এ ব্যাপারে জনগণকে অবহিত করা হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রেলের কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের জানান, কোন শতবর্ষী গাছ কাটা হবে না এবং শিরিষতলায় হাসপাতাল নির্মাণ হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন পিপিপি কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে রেলওয়ের সিআরবি এলাকায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল এবং ১০০ আসন বিশিষ্ট মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।
অপরদিকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন দলের নেতাদের সাথে নিয়ে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে সিআরবিতে গাছের চারা রোপন করেন। তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে পরিবেশ ও ঐতিহ্য ধ্বংস করতে দেওয়া হবে না। চট্টগ্রামে হাসপাতাল করার মতো জায়গার অভাব নেই। এসময় বিএনপি নেতা আবুল হাশেম বক্কর, এম এ আজিজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে, বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি স্থায়ী পরিষদের সভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরী, কার্যকরি কমিটির চেয়ারম্যান ডা. শেখ শফিউল আজম ও মহাসচিব এইচ এম মুজিবুল হক শুক্কুর এক যুক্ত বিবৃতিতে হাসপাতাল নির্মাণের নামে বিনোদন স্পট সিআরবি ধ্বংসের পাঁয়তারা হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, চট্টলাবাসী এটা মেনে নেবে না। আধুনিক হাসপাতাল দরকার। তবে তা সিআরবি এলাকায় করা যাবে না।
পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আতিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, কংক্রিটের স্থাপনা নির্মিত হলে এই এলাকার ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ধ্বংস হবে। সাংস্কৃতিক এই সম্মিলন কেন্দ্রটি হারাবে বর্তমান রূপ। তাই সিআরবি এলাকা নয় বরং এমন কোনো স্থানে হাসপাতাল নির্মাণ করা হোক।
সিআরবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা ইউনিট কমান্ড এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা কমিটি। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড মহানগর কমিটির আহবায়ক সাহেদ মুরাদ সাকুর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী মনির পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর আহমদ। তারা এ প্রকল্প বাতিল করে অন্যস্থানে হাসপাতাল করার দাবি জানান এবং একইসাথে যারা এই চুক্তির সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করারও আহ্বান জানান। পরে এক বিক্ষোভ মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিআরবিতে শেষ হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।