পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস হিসাবে পরিচিত পূর্ব রেলের সদর দফতর সিআরবিতে একটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) এই হাসপাতাল ও কলেজ প্রতিষ্ঠায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত শতাব্দি প্রাচীন সুউচ্চ বৃক্ষরাজি ঘেরা এলাকায় ৫শ’ শয্যার হাসপাতাল ও ১শ’ আসনের কলেজের মতো একাধিক বহুতল ভবন নির্মাণের এমন উদ্যোগে চট্টগ্রামে সর্বমহলে ব্যাপক ক্ষোভ, অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশবাদী সংগঠনের পাশাপাশি সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ঐতিহ্য ও পরিবেশ বিধ্বংস এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তাদের দাবি সেখানে হাসপাতাল হলে বৃক্ষরাজি আর সবুজ বন ধ্বংস হয়ে যাবে। পৌনে এক কোটি মানুষের এই নগরীতে নান্দনিক উম্মুক্ত সবুজ চত্বর বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। কালের সাক্ষী অবিভক্ত ভারতের আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের সদর দফতর সিআরবি ভবনটি হয় ১৮৯৫ সালে। শতবর্ষী বৃক্ষরাজি, পাহাড়, টিলা ও উপত্যকা ঘেরা এই এলাকাটি হরেক প্রজাতির পাখ-পাখালি ও প্রাণির আবাস।
শিরীষ তলা, সাত রাস্তার মাথাসহ পুরো এলাকা জনসমাগমের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। পহেলা বৈশাখসহ নানা অনুষ্ঠানমালা ছাড়াও ছায়া-সুনিবিড় এ এলাকায় নগরীর প্রবীণরা সকাল-বিকেল ভ্রমণ, ব্যায়াম চর্চা করে থাকেন। শিশু-কিশোর-যুবকদের খেলাধুলা, বিনোদন তথা মানসিক বিকাশের কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত সিআরবি। ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসাবে ১৮৭২ সালে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন সিআরবি ভবনের পাশাপাশি সেখানে রয়েছে ১৮৯৯ সালে ব্যবহৃত প্রথম স্টিম ইঞ্জিন। এসব স্থাপনা দেখতে সেখানে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় জমে।
মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাসপাতাল, কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউটের মত স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশবিদ, নগর বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, চট্টগ্রামে হাসপাতাল করার মত উপযুক্ত জায়গার অভাব নেই। এছাড়া মহানগরীতে একাধিক মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয় থাকায় নতুন করে মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের আদৌ কোন দরকার আছে কি না তা ভেবে দেখা জরুরি। সিআরবিতেই রয়েছে রেলওয়ে হাসপাতাল।
চট্টগ্রামের ১৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এক যুক্ত বিবৃতিতে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ না করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, ঐতিহ্যবাহী সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের খবর চট্টগ্রামবাসীকে অত্যন্ত ব্যথিত, উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করেছে। এলাকাটি চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসাবেই গণ্য। হাসপাতালের কারণে জনসমাগম বৃদ্ধি ও ক্লিনিক্যাল বর্জ্য সিআরবি এলাকার নির্জনতা ও পরিবেশকে ঝুঁকিতে ফেলবে। স্থানটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে তারা বলেন, সিআরবি ভবনটি দেশের ব্রিটিশ বা কলোনিয়াল স্থাপত্যের বিলীয়মান নিদর্শনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপত্যকলা। ইতিহাসের ছাত্র-শিক্ষকের শিক্ষা ও গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এসব বিবেচনা থেকেই এলাকাটিকে বাংলাদেশ সরকার সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ২৪ ধারা অনুযায়ী ঐতিহ্য ভবন ঘোষণা করে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তারা।
তারা বলেন, আমরা হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধী নই। কেবল প্রাকৃতিক কারণে সংবেদনশীল ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের স্থানে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ অনুচিত হবে বলে মনে করছি। চট্টগ্রামে আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজন আছে। তবে তা উপযুক্ত স্থানেই নির্মিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অবিলম্বে এ হটকারী সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ থেকে সরে না আসলে নাগরিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলন ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বিবৃতিদাতারা হলেন- প্রফেসর ড. অনুপম সেন, প্রফেসর মু. সিকান্দার খান, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন, প্রফেসর ড. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক হরিশংকর জলদাস, নাট্যব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার, স্থপতি জেরিনা হোসেন, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার প্রমুখ।
মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক সিটি প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন সিআরবিতে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শতবর্ষী বিভিন্ন গাছ কেটে ফেলার চক্রান্ত হিসাবে উল্লেখ করে ঐতিহ্য রক্ষায় নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বৃটিশ আমলের ভবন, আকাবাঁকা রাস্তা, পাহাড়-টিলা ও শতবর্ষী নানা গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ এ এলাকাটি চাটগাঁর ঐতিহ্যের অংশ। গাছ-গাছালিতে পাখির কল-কাকলি, সবুজের সমারোহ এমন দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়ে না। এটিকে ধ্বংস করা যাবে না।
এদিকে সিআরবিকে পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকা অথবা রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন। সংস্থার চেয়ারপার্সন অ্যাডভোকেট এলিনা খান, পরিচালক (অর্গানাইজিং) এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসানসহ ১০১ জন আইনজীবী গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী পাথরঘাটায় ৩শ’ বছরের মটকা ভবন প্রত্নতাতিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। একইভাবে সিআরবি রক্ষায় তার হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব, বাসদসহ (মার্কসবাদী) বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সিআরবির সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।