নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো এবারের ইউরোতে ফলাও করে প্রচার করেছিল বৃটিশ পপ ত্রয়ী ডেভিড ব্যাডিল, দ্য লাইটনিং সিডস ও ফ্রাঙ্ক স্কিনাররের থ্রি লায়ন্স অ্যালবামে গাওয়া বিখ্যাত ‘ইটস কামিং হোম’। ইংল্যান্ড ফুটবল দলের থিম সংটি শুধু মাত্র গান হিসেবেই নয়, এবারের ইউরো ফাইনালের স্বাগতিক হবার পর থেকেই এক রকম প্রচ্ছন্ন হুমকি হিসেবেই দিয়ে আসছিল দেশটির মিডিয়া। অর্থ একটাই- শিরোপা যাচ্ছে তাদের ঘরেই। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। ঐতিহ্যবাহী ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে গতপরশু রাতের ফাইনাল জিতে ইতালি বুঝিয়ে দিলো- ‘ইটস গোয়িং রোম’। নিজেদের শিরোপা জয়ের ঐতিহ্য ধরে রেখে ১৯৬৮ সালের ইউরো জেতা দলটি ৫৩ বছর পর আবারও মাথায় পড়ল ইউরোপসেরার মুকুট।
ফাইনালের মঞ্চে নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে সমতা ছিল ইতালি-ইংল্যান্ডের। এরপর ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। ইউরোর ইতিহাসে ১৯৭৬ সালের পর এটাই প্রথম ফাইনালে পেনাল্টি শুট আউট। সেবার চেক রিপাবলিকের সঙ্গে পশ্চিম জার্মানির ম্যাচটা টাইব্রেকারে সমাধান হয়েছিল। সেখানেও নাটক। শেষ পর্যন্ত বুকায়ো সাকার শেষ কিকটি ঠেকিয়ে দিয়ে নায়ক বনে গেলেন ইতালিয়ান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। চতুর্থ দল হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর শিরোপা জিতল টানা ৩৪ ম্যাচ অপরাজেয় পথচলায় ৮৬ গোল করা রবের্তো মানচিনির দল। আর বড় শিরোপার জন্য অপেক্ষা বাড়ল ইংল্যান্ডের। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর বড় উৎসব করতে পারল না ইংলিশরা। অথচ শুরুটা স্বপ্নের মতো হয়েছিল ইংল্যান্ডের। সংক্ষিপ্ত বিদায়ী অনুষ্ঠানে দেখানো হয় আগের সব আসরের চ্যাম্পিয়নদের শিরোপা উল্লাস। এরপর ট্রফি নিয়ে আসেন গত আসরের ফাইনালে পর্তুগালের জয়সূচক গোলদাতা এদের। শুরু হয় নতুন চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণী লড়াই। সেন্টার লাইনের নিচ থেকে শ পাস দিয়েছিলেন কেইনকে, কেইন এরপর লং পাস বল বাড়িয়েছেন বাঁ পাশ থেকে ডান পাশে থাকা ট্রিপিয়ারের দিকে। ট্রিপিয়ার বল পেয়ে যখন অসাধারণ ক্রসটা করলেন, তখন পোষ্টের সামনে হাজির লুক শ। ফাঁকা থাকলেও যে পজিশনে ছিলেন, সেখান থেকে বল জালে জড়ানো অতটা সহজ বিষয়ও ছিল না। লুক শ দুর্দান্ত ভলিতে এমনভাবে ফিনিশিং করলেন, দেখে মনে হবে খুব একটা কঠিন ছিল না।
এর আগে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে লুক শ কোনও গোল করতে পারেননি। কিন্তু নিজ দর্শকদের সামনে যে গোলটা করলেন, সেটিও রেকর্ড গড়ে। ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের মাথায়ই লুক শ করেছিলেন নিজের প্রথম গোলটা। এত কম সময়ের মধ্যে ইউরো ফাইনাল এর আগে কোন গোল দেখেনি। ওয়েম্বলিতে হাজার ষাটেক দর্শক গোলটা দেখে মেতেছিলেন বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে। স্টেডিয়ামে থাকা ইংলিশদের মধ্যে সবচেয়ে কম উদযাপন করেছেন বোধহয় গ্যারেথ সাউথগেটই। শুধু একবার যেন বললেন, ‘ইয়েসস...’। ব্যাস। বাকিটুকু হয়তো জমিয়ে রেখেছিলেন জয় নিশ্চিতের পরের জন্য। এরপর ইতালি ম্যাচের ফেরার চেষ্টা করে গেছে। লং রেঞ্জ থেকে কয়েকটা শট নিয়েছিল, যদিও গোলের খুব কাছে যাওয়া হয়নি। অন্যদিকে ইংল্যান্ডও গোলের পরিষ্কার কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি আর। তবু প্রথমার্ধে অন টার্গেটে থাকা একমাত্র শটটাই তাদের বিরতিতে নিয়ে গেছে স্বস্তিতে।
৪৫ থেকে ৬০ মিনিট, এবারের ইউরোতে সবচেয়ে বেশি গোল হয়েছে এই পনেরো মিনিটেই। গোল পেতে মরিয়া ইতালিও এ ম্যাচে সেসময়ে একের পর এক আক্রমণ করে গেছে। তবু সমতায় ফেরা হচ্ছিলো না কোনমতেই। ৬১ মিনিটে অবশ্য গোলের দেখা পেয়ে যেতে পারতো ইতালি। বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া কিয়েসার শট দুর্দান্ত সেভে পিকফোর্ড ফিরিয়ে দিলে গোলবঞ্চিত হয় আজ্জুরিরা। তবে গোল আসতে যে বেশ দেরি নেই, সেটা ইতালি তাদের খেলায় বুঝিয়ে দিচ্ছিলো ভালোভাবেই। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম আধা ঘন্টায় খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ইতালি শেষমেশ গোল পেয়েই যায় ৬৭ মিনিটে।
ভেরাত্তির হেড পোষ্টে লেগে ফিরে আসলে সিক্স-ইয়ার্ড বক্সে গোলের সামনেই থাকা বনুচ্চি বল পেয়ে যান। বনুচ্চির বয়স ৩৪ বছর ৭১ দিন, এই বয়সে ইউরো ফাইনালে কারো গোল করার সৌভাগ্য হয়নি। ওয়েম্বলিতে হওয়া আগের তিন ফাইনালেই জয়ী নির্ধারণের জন্য নির্ধারিত সময় যথেষ্ট হয়নি। ১-১ স্কোরলাইনে অমীমাংসিত এ ম্যাচেও খেলা গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে। ডিফেন্সিভ দিক দিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা দুটি দলের খেলায় সেসময়ও কোনও ব্যবধান গড়ে দিতে পারেনা। ইউরোর ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো তাই ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন খুঁজে নিতে টাইব্রেকারে যেতে হয়।
সেখানে ইতালির দ্বিতীয় শটই ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড। বেলোত্তির শটের বুঝে ফেলেছিলেন ইংলিশ কিপার। আর ইংল্যান্ডের ভুল তৃতীয় শটে। পেনাল্টি নিতেই যাঁকে নামানো সেই মার্কাস রাসফোর্ডে পোস্টে বল লাগান। একই উদ্দেশ্যে নামা জাডোন সাঞ্চোর শটও কোনো কাজে আসেনি। সেটি ঠেকিয়ে দেন দোন্নারুম্মা। ৪ শটের পর ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল ইতালি। পঞ্চম শটে গোল করলেই ইতালির জয়।
পেনাল্টি নেওয়ার জন্য বিখ্যাত জর্জিনিও সে শট পোস্টে লাগালেন! অথচ সেমিফাইনালে এমন পরিস্থিতিতেই দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন চেলসি মিডফিল্ডার। ইংল্যান্ডের হয়ে শেষ শট নিতে আসেন বুকায়ো সাকা। এবারও নায়ক হয়ে উঠলেন দোন্নারুমা। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দিয়েছেন সাকার শট। ইতালি যে ইউরো জিতে গেছে সেটা যদিও দোন্নারুম্মার প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝার উপায় ছিল না। ডাগ আউটে রবার্তো মানচিনির উল্লাস দেখেই নিশ্চিত হওয়া গেল, তিন বছর আগে বিশ্বকাপে জায়গা করতে না পারা দলটিই ইউরোর সেরা এখন! সকল আনন্দ-উচ্ছ্বাস যে এখন বরাদ্দ শুধু ইতালির জন্যেই!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।