পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আসমানীদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও/ রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও/ বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি/ একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি/ একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে’ (জসীমউদ্দিন)। পল্লী কবির এই কবিতার মতোই এখন ‘ভূমিহীন-গৃহহীনদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও/ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে সবাই চলে যাও/ বাড়ি তো নয়...’। সারা দেশের ভূমিহীন-গৃহহীনদের স্থায়ী ঠিকানা দেয়ার যুগান্তকারী উদ্যোগ ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ কি নজির সৃষ্টি করেছেন দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে প্রায় সবকিছুই বন্ধ। পাল্টে গেছে মানুষের জীবনধারা। কিন্তু বন্ধ হয়নি দুর্নীতির উলঙ্গনৃত্য। পাল্টায়নি কিছু আমলার দুর্নীতি এবং সেই দুর্নীতিবাজদের রক্ষার নানাবিধ কলাকৌশল। প্রবাদে রয়েছে ‘কাক কখনো কাকের গোশত খায় না’। অতএব, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আমলাদের দুর্নীতি ওই আমলারা তদন্ত করলে কি প্রকৃত চিত্র উদ্ঘাটন হবে? কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তোলপাড় শুরু করে। অভিযোগ প্রমাণের আগেই দুদক ওই ব্যাক্তিকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণে মিডিয়া ট্রায়াল করেন। অথচ আমলাদের কেউ দুর্নীতি করলে দুদক ‘নীরব কবি’ হয়ে যায়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্নীতি ইস্যুতে দুদক নীরব কবির ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে দুদকের চেয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরো এগিয়ে। ব্যবসায়ী বা সরকারি দল করেন না এমন কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই মামলা, গ্রেফতার, তদন্তের হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। অথচ প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ‘ধসে যাওয়া ঘর’ দুর্নীতি নিয়ে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে শোনা যায়নি।
নির্বাচন নিয়ে যতই বিতর্ক থাকুক না কেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু কিছু উদ্যোগ দেশ-বিদেশ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। যেমনÑ আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিনিয়োগ প্রকাশ, পরিবেশ সুরক্ষা নামের প্রকল্প ইত্যাদি। এরই একটা উদ্যোগ আশ্রয়ণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ৮৮৫৬২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর উপহার দেয়ার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই মধ্যে প্রথম ধাপে ৬৯৯০৪ পরিবারকে উপহারের ঘর দেয়া হয়েছে। সেই ঘর বানানো নিয়ে শুরু হয়েছে গোলক ধাঁ ধাঁ। যেসব ঘর গৃহহীন ও দ্স্থুদের দেয়া হয়েছে সেগুলো সবই নিম্নমানের। কোনোটা ভেঙে গেছে, কোনোটার পলেস্তার ঘসে পড়েছে, যাতায়াতের নেই রাস্তা, ঘরের মেঝো ফাটা, দেয়াল ফাটা, নেই জানালা, কোথাও দেবে গেছে, আবার কোনোটা ধসে গেছে। পত্রিকার খবরে দেখা যায় ভূমিহীন-গৃহহীনদের খড়-লতাপাতার ঘরের জীর্ণদশার চেয়েও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বাস করা ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে তারা ধসে পরার ভয়ে ওইসব ঘরে থাকছেন না। এর মধ্যেই ২২টি জেলায় ৪৬টি উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণে দুর্নীতি ধরা পড়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে ৫ উপজেলার ৫ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। বাকিরা রয়েছেন বহাল-তবিয়তে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৫টি কমিটি; তারা তদন্ত করছেন। দায়ী কর্মকর্তাদের কারো বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং তাদের বাঁচাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নানাভাবে তদবির করা হচ্ছে। ইনকিলাবে খবর বের হয়েছেÑ দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে প্রথম ধাপে ৭৬৯টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৩০টি এবং উপজেলা পর্যায়ের দুটিসহ মোট ১০০১টি বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। ৭৬৯টি বাড়ি নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তদন্তদল সেখানে গেলেও তাদের নতুন নির্মিত ঘর দেখানো হলেও অজ্ঞাত কারণে প্রথম পর্যায়ের অত্যন্ত নিম্নমানের ঘরগুলো দেখানো হয়নি।
গত শুক্রবার দেশের বেসরকারি টিভিগুলোর খবরে দেখা গেল, আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক মুন্সীগঞ্জ জেলার আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করছেন। সঙ্গে বেসরকারি টিভিগুলোর একঝাঁক সাংবাদিক। তিনি কঠোরভাষায় বলছেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধরনের অনিয়ম ও অবহেলা সহ্য করা হবে না’। প্রকল্পের প্রধানই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’। প্রশ্ন হলো অবহেলা করল কে? এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কি একদিনে সিদ্ধান্ত হয়েছে? ঘর নির্মাণ কাজ কি একদিনে হয়েছে? মাসের পর মাস ধরে নির্মাণ কাজ তদারকিতে কেন্দ্রের কেউ যায়নি?
যে কোনো সরকারি প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। জানা যায়, এ প্রকল্পের কাজ উপজেলার ইউএনওরা সরাসরি তত্ত্বাবধানে করেছেন। জমি নির্বাচন, নির্মাণের পর তা ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করেছেন; তারও আগে প্রকল্প গ্রহণ, ঠিকাদার নির্বাচন, অর্থ ছাড়, কাজের মান না দেখে বাড়ি বুঝে নেওয়া, ঠিকাদারসহ কাজ তত্ত্বাবধান বিশাল কর্মযজ্ঞ হয়েছে। এতদিক কিছুই বোঝা গেল না, বাড়ি বুঝে নিয়ে অর্থ ছাড়ের সময় কিছুই জানা যায়নি; হঠাৎ করে কাজের নিম্নমান ধরা পড়ল? বন্ধুবান্ধব যারা ইঞ্জিনিয়ার আর ঠিকাদারী করেন, তাদের বক্তব্য ‘ডিজিটাল যুগে গুগলে গেলেই দেখা যায় ঘর বানাতে গেলে কি পরিমাণ বালুতে কি পরিমাণ সিমেন্ট ও ইট ব্যবহার করতে হয়। বালু-সিমেন্টের ওই রেসিও থেকে যদি সিমেন্ট একটু কমও দেয়া হয়, তাহলেও স্থাপনা ভেঙে পড়বে না। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে সিমেটের পরিমাণ কতটুকু দেয়া হয়েছেÑ সেটা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। নদীমার্তৃক বাংলাদেশে ঘরে পানি উঠলেই ইটের ঘর ভেঙে পড়বে এটা বিশ্বাস করা দূরূহ।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্ল্যান/ডিজাইন বিশ্লেষণে দেখে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সমতল ভূমি, চর, নিচু ভূমি, বিল ভূমি সর্বত্র একই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারও আগে প্রকল্পের প্ল্যান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত বরাদ্দকৃত ৯০ ভাগ ঘরই খালি পড়ে আছে। আর এ প্রকল্পের ঠিকাদার ইউএনও, তদারকি কমিটির সভাপতি ইউএনও, বিল প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ সেও ইউএনও এবং সর্বশেষে ভূমিহীনদের তালিকা প্রস্তুতকারী ইউএনও। যারা করণে ভোলার দৌলতখানে সহকারী শিক্ষা অফিসারের বাবার নামে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক ও গৃহপরিচারিকার নামে, উপজেলা ভূমি অফিসের নাজিরের গৃহপরিচারিকার নামেও ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবকিছুই করছেন কিছু আমলারা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যে ৫টি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে তারাও অভিযুক্তদের সহকর্মী আমলা। আবার পত্রিকায় খবর বের হয়েছে অভিযুক্ত আমলাদের রক্ষায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তদবির চলছে; আবার দিনাজপুরে ভাঙাঘর তদন্ত কমিটিকে দেখানোই হয়নি। এটা ঠিক আমলাদের মধ্যে অনেক মেধাবী, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা রয়েছেন। তারপরও ‘কাক কাকের গোশত খায় না’ প্রবাদের মতোই আমলাদের দিয়ে তদন্তে প্রকৃত চিত্র প্রত্যাশা করা যায় না। আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র বুঝতে চাইলে অন্য কোনো সংস্থা বা বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করে তদন্ত করা উচিত। তাছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণও কোনো শাস্তি নয়। প্রথমে দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করতে হবে; অতঃপর, যাদের ভুল সিদ্ধান্ত ও দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের এতো টাকা ক্ষতি হয়েছে শাস্তির পাশাপাশি ওই অভিযুক্তদের নিজেদের টাকায় ভূমিহীনদের ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেয়ার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এটাই হোক দুর্নীতিবাজ আমলাদের শাস্তি। ‘ঠাকুর ঘরে কে রে/ আমি কলা খাই না’ প্রবাদের মতো যারা উচ্চবাচ্য করছেন; তাদের বিষয়েও তদন্ত হওয়া দরকার। দায় শুধু মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এটা বিশ্বাস করা কঠিন। জনগণের টাকার অপব্যবহার কারও কাম্য নয়। দুর্নীতিবাজদের অর্থে গৃহহীনদের ঘর পুনর্নির্মাণ করা হলে পরবর্তীতে অন্যেরা দুর্নীতি করার সাহস পাবে না। তাছাড়া এটা ঠিক ভূমিহীন যারা ঘর পেয়েছেন তাদের ঘরের সহসাই মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের আর্থিক সক্ষমতা নেই। সংগত কারণেই এদের জন্য নির্মিত ঘর অধিকতর মজবুত ও টেকসই হওয়া উচিত ছিল। সাধারণ নিয়মে প্রকল্প পরিচালকরা প্রকল্পের কাজের গুণগত মান ও আর্থিক বিষয়ে দায়বদ্ধ। অবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।
দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালোবাসা প্রশ্নাতীত। সে কারণেই তিনি সারা দেশের ভূমিহীন-গৃহহীনদের স্থায়ী আবাসের ব্যবস্থা করতে আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করেন। এটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এবং প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই প্রকল্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমর্যাদা জড়িত। এটাকে যারা কলুষিত করেছেন তাদের মুখোশ উন্মোচন করা উচিত। প্রশাসনে কর্মরত আমলাদের ইমেজও উজ্জ্বল হবে। অভিযুক্তদের সহকর্মী আমলাদের দিয়ে তদন্তের নামে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার’ চেষ্টা কাক্সিক্ষত নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।