পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুজিববর্ষে দেশের ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া গৃহ নির্মাণে অনিয়মের অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গঠিত তদন্ত টিম। এখন সেসব প্রতিবেদন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। চলছে ভেঙে যাওয়া ঘর পুনর্নির্মাণের কাজ।
সারাদেশের ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্পৃক্ততায় পাঁচটি তদন্ত দল গঠন করা হয়। খোদ প্রকল্প পরিচালকের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত দলগুলো ৯ জুলাই থেকে তদন্ত কাজ শুরু করে। অনিয়ম অনুসন্ধানে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় টানা পাঁচ দিন ঘুরে এসে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা প্রতিটি জেলা-উপজেলা পরিদর্শন করেছি। যেখানে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভেঙে যাওয়া ঘরগুলো দ্রুত মেরামত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার কাজ চলমান। এখন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কাজ চলছে। এর বাইরে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। কাজ শেষ হলে জানতে পারবেন।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। পরে টানা বৃষ্টি শুরু হলে কিছু স্থানের ঘর ধসে পড়ে, আবার বড় বড় ফাঁটলও দেখা দেয় কোনো কোনো ঘরে। মাটিতে দেবে যেতেও দেখা গেছে। এ সংক্রান্ত ছবি গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা এবং প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে নানা প্রশ্ন। এই সমালোচনার মুখেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রকল্প কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত হয় তদন্ত টিম। পাঁচটি তদন্ত টিম মাঠ পর্যায়ে গিয়ে শুধু ঘরই পরিদর্শন করেননি, তারা সুবিধাভোগীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করছেন। ত্রুটি কী কী রয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন। সে অনুসন্ধানে কোথাও কোথাও দেখা গেছে, ঘরের মেঝেতে তিন স্তরের আস্তরণ দেয়ার কথা থাকলে দেয়া হয়েছে দুই স্তর। আবার জমি নির্বাচনও ঠিকমতো করা হয়নি। ঘর নির্মাণ হয়েছে তো সেখানে থাকার বা চলাচলের কোনো ব্যবস্থা নেই। এমন অসংখ্য অসঙ্গতি উঠে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার বলেন, মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইল. বগুড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কয়েক স্থানে দেখা গেছে, ঘরের পাশ থেকে মাটি সরে গেছে কিংবা চলাচলের রাস্তা নেই। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে কিছু বালু ধুয়ে গেছে। তবে ওই এলাকায় ঘরে ফাটল ও দেবে যাওয়ার মতো দৃশ্য চোখে পড়েনি। প্রতিবেদন প্রকল্প পরিচালকের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি যেসব ঘর ভেঙে গেছে তা মজবুত করে পুনর্নির্মাণ হচ্ছে। এ পর্যন্ত সারাদেশে ৩৬টি ঘর পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ভূমিহীন এবং গৃহহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এ পদাধিকারবলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। সদস্যরা হলেনÑ সহকারী কমিশনার (ভূমি), এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকল্প বায়স্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউএনওদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা মুখ খুলতে সাহস পান না। তবে কোনো কোনো উপজেলায় প্রকল্প থেকে ইউএনওদের অবৈধ আয়ের ভাগ পিআইও এবং জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও পেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দুর্নীতি ঢাকতে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪টি ঘর রাতের আঁধারে ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো উপজেলায় ইউএনও কাজ শুরু করে দিয়ে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। নতুন ইউএনও যোগ দিয়ে দায়ভার আগের জনের ওপর চাপিয়ে নিজের আখের গুছিয়েছেন। তদন্তে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিনকে ওএসডি করা হয়। এসব কারণেই প্রকল্পের তদন্ত নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে।
এ পর্যন্ত ৩ উপজেলা প্রকল্প বায়স্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) প্রত্যাহার করা হয়েছে। ২২টি জেলায় ৪৬টি উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণে দুর্নীতি ধরা পড়লেও মাত্র ৫টি উপজেলার ৫ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। বাকি উপজেলার কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং তাদের বাঁচাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নানাভাবে তদবির করা হচ্ছে। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হামিদুর রহমান, ধামনার উপজেলা সাবেক নির্বাহী অফিসার আবুল কালামসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার পক্ষে কয়েকজন সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব, রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের রক্ষায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
৯ জুলাই শুক্রবার থেকে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাকে পাঁচটি ব্লকে ভাগ করে পরিদর্শন শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৫টি টিম। একটি টিমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন নির্মাণাধীন বাড়িগুলোর নির্মাণশৈলী ও গুণগতমান, অনুমোদিত ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়নি। এগুলো নতুন করে তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে আট লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেবে সরকার। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে এক লাখ ২৯ হাজার ১৯৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬ হাজার ৩, চট্টগ্রাম বিভাগে এক লাখ ৬১ হাজার ২৯৭, রংপুর বিভাগে এক লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৪, রাজশাহী বিভাগে ৯৬ হাজার ৫০৪, খুলনা বিভাগে এক লাখ ৪২ হাজার ৪১১, বরিশাল বিভাগে ৮০ হাজার ৫৮৪ এবং সিলেট বিভাগে ৫৫ হাজার ৬২২টি গৃহহীন পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে জমি ও ঘর নেই এমন পরিবারের পাশাপাশি ১০ শতাংশ জমি আছে কিন্তু জরাজীর্ণ বাড়ি এমনও পরিবার রয়েছে। প্রথম ধাপে ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার বঙ্গবন্ধুকন্যা উপহারের ঘর দিয়েছেন। এর মধ্যে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রদান করেন। এছাড়া ২২টি জেলার ৪৬টি উপজেলায় ৪৪টি গ্রামে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হবে। আর চলতি অর্থবছরে মুজিববর্ষেই আরো ৭ লাখ ১৫ হাজার ৭১৮ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে স্বপ্নের নীড়সহ দুই শতক জমির মালিকানা দিয়ে স্থায়ী ঠিকানা গড়ে দেয়া হয় সরকারিভাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।