পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়ার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ৬৯ হাজার ৯০৪ পরিবারকে উপহারের ঘর বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেক ঘরই ভেঙে গেছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি করায় ঘরগুলো ভেঙে গেছে। দুর্নীতির অভিযোগে ৫ কর্মকর্তাকে ওএসডি ও ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ৫টি তদন্ত টিম তদন্ত করছে। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের রক্ষায় চলছে নানান তদবির। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, ভূমি ও দুর্যোগ ব্যবস্থপনা মন্ত্রণালয় প্রত্যেকেই নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বাঁচাতে তৎপর। এ নিয়ে মাঠ প্রশাসনের সাথে মন্ত্রণালয়ের দূরত্ব বাড়ছে বলে জানা গেছে। তবে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী এবং উপজেলা প্রকল্প বায়স্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)রা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করায় বসবাসের অনুপযোগী বহু ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। কয়েকটি উপজেলা পরিষদে কর্মরত ইউএনও ঘর ভেঙে ফেলার কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানান, নিম্নমানের হওয়ায় সেগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি উইংয়ের যুগ্ম সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী উদ্যোগ আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের রক্ষায় নানান তদবির করছে। আমার অনেক স্যার ফোন করছেন।
জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন ইনকিলাবকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ৩ জন উপজেলা প্রকল্প বায়স্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)-কে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাকিগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
জানা গেছে, ভূমিহীন এবং গৃহহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণের এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ পদাধিকারবলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। সদস্যরা হলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি), এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকল্প বায়স্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইউএনওদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা মুখ খুলতে সাহস পান না। তবে কোনো কোনো উপজেলায় প্রকল্প থেকে ইউএনওদের অবৈধ আয়ের ভাগ পিআইও এবং জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও পেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দুর্নীতি ঢাকতে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৪টি ঘর রাতের আঁধারে ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো উপজেলায় ইউএনও কাজ শুরু করে দিয়ে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। নতুন ইউএনও যোগ দিয়ে দায়ভার আগেরজনের ওপর চাপিয়ে নিজের আখের গুছিয়েছেন।
তদন্তে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিনকে ওএসডি করা হয়। এসব কারণেই প্রকল্পের তদন্ত নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। গতকাল পর্যন্ত ৩ উপজেলা প্রকল্প বায়স্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) প্রত্যাহার করা হয়েছে। ২২টি জেলায় ৪৬টি উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণে দুর্নীতি ধরা পড়লেও মাত্র ৫টি উপজেলার ৫ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। বাকি উপজেলার কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং তাদের বাঁচাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নানাভাবে তদবির করা হচ্ছে। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হামিদুর রহমান, ধামনার উপজেলা সাবেক নির্বাহী অফিসার আবুল কালামসহ প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার পক্ষে কয়েকজন সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব, রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের রক্ষায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তদবির করছেন।
গত শুক্রবার থেকে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাকে পাঁচটি ব্লকে ভাগ করে পরিদর্শন শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৫টি টিম। একটি টিমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, নির্মাণাধীন বাড়িগুলোর নির্মাণশৈলী ও গুণগতমান, অনুমোদিত ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়নি। এগুলো নতুন করে তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেবে সরকার। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৯৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬ হাজার ৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৯৭, রংপুর বিভাগে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৪, রাজশাহী বিভাগে ৯৬ হাজার ৫০৪, খুলনা বিভাগে ১ লাখ ৪২ হাজার ৪১১, বরিশাল বিভাগে ৮০ হাজার ৫৮৪ এবং সিলেট বিভাগে ৫৫ হাজার ৬২২টি গৃহহীন পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে জমি ও ঘর নেই এমন পরিবারের পাশাপাশি ১০ শতাংশ জমি আছে কিন্তু জরাজীর্ণ বাড়ি এমন পরিবারও রয়েছে। প্রথম ধাপে ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার বঙ্গবন্ধুকন্যা উপহারের ঘর দিয়েছেন। এর মধ্যে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রদান করেন। এছাড়া ২২টি জেলার ৪৬টি উপজেলায় ৪৪টি গ্রামে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হবে। আর চলতি অর্থবছরে মুজিববর্ষেই আরো ৭ লাখ ১৫ হাজার ৭১৮ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে স্বপ্নের নীড়সহ দুই শতক জমির মালিকানা দিয়ে স্থায়ী ঠিকানা গড়ে দেয়া হবে সরকারিভাবে।
এ ছাড়া আরো ২৯টি উপজেলায় ঘর নির্মাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বগুড়ার আদমদীঘি, খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, মাদারীপুরের কালকিনি, লালমনিরহাট সদর, গাজীপুরের শ্রীপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, জামালপুরের ইসলামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, ময়মনসিংহ সদর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, ভোলার লালমোহন, পাবনার সাঁথিয়া, মানিকগঞ্জের ঘিওর, নাটোর সদর, কুড়িগ্রামের রৌমারী, বরিশাল সদর এবং ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর।
পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্বিতীয় দফার ঘর নির্মাণ ব্যয় আরো বাড়ানো হয়। ঘরপ্রতি মোট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৫ টাকা ৪৫ পয়সা। এর মধ্যে ঠিকাদারের লাভ ধরা হয় ৪৬ হাজার ৪৬ টাকা ৪১ পয়সা। এই বরাদ্দ পাওয়ার পরই বেশির ভাগ এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনওরা নিজেরাই লেবার ঠিকাদারদের মাধ্যমে কাজ শুরু করেন। এক্ষেত্রে তারা সরাসরি ঘুষ না পেলেও পুরো টাকা নিজেদের হাতে খরচ করতে গিয়ে ধাপে ধাপে চুরি করেন বলে অভিযোগ আছে। কোন কোন ধাপে টাকা সরিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনওরাÑ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এর হিসাবও পাওয়া গেছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ৬ হাজার ২০০টি এক নম্বর ইট দরকার। কিন্তু কোনো কোনো জায়গায় ঘরের উচ্চতা ও ১০ ইঞ্চি গাঁথুনি কম দিয়ে ১ হাজার ২০০ ইট সাশ্রয় করে এ খাত থেকে পকেটে তুলেছেন অন্তত ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া কোথাও কোথাও ঘর ধসে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ভুল জায়গা নির্ধারণ ও কাঁচা ভরাটে তড়িঘড়ি নির্মাণ কাজ শেষ করার বিষয়টিকেও দায়ী করেছেন তদন্ত দলের এক সদস্য। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু জানান, তৈলকুপি গ্রামে ১৪টি ঘর নির্মাণ করা হয় পুকুরের পাড়ে। দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সদ্য বদলিকৃত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমি জেরিন ঘরগুলো নির্মাণ করেন। অল্প দিনের মধ্যেই ঘরগুলো ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। পুকুর ভরাটের জন্য আরো ৬ লাখ টাকা খরচ করেন উপজেলা অফিস থেকে। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সময়ে এ ঘর নির্মাণ করা হয়। উপকারভোগীদের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ঘর ভাঙা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।