পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টানা আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে গোপালগঞ্জের মধুপুরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের (আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর প্রথম পর্যায়) দু’টি ঘর ভেঙে পড়েছে। গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার মধুপুর গ্রামের মধুপুর প্রকল্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। একই ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার শেরপুরেও। আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভ‚মিহীনদের নামে বরাদ্দ দেয়া বাড়ির একপাশের মাটি খালে ধসে গেছে। ফলে বেশ কয়েকটি ঘর ভেঙে পড়েছে। এতে সুবিধাভোগীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক।
গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদাতা জানান : সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামের মধুপুর প্রকল্প এলাকায় ভেঙে পড়া একটি ঘরের মালিক মো. ইব্রাহীম জানান, পেশাগত কাজে বাইরে থাকায় ঘটনার সময় তার স্ত্রী-সন্তানরা ঘরে ছিল না। কাজ থেকে ফিরে এসে দেখেন বারান্দাসহ ঘরের অনেকটা অংশ ভেঙে পড়েছে। ভুক্তভোগী আরেক বাসিন্দা মাহফুজা বলেন, ওইদিন বিকেলের বৃষ্টিতে বালু সরে গিয়ে আমার ঘরেরও অনেকটা অংশ ভেঙে পড়েছে।
প্রকল্পের অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেছেন, অন্য ঘরগুলোও নানা ঝুঁকিতে রয়েছে। ৫ মাস আগে তারা ঘরগুলো পেয়েছেন। এরইমধ্যে অনেক ঘরেরই দেয়াল ও মেঝে থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই টিনের চালার বিভিন্ন স্থান দিয়ে পানি পড়ে বিছানাপত্র সব ভিজে যাচ্ছে। ঘরের ভেতরে পানি জমে, জানালা-দরজাও নড়বড়ে। তাই ঝড়-বাদলের এমন দিনে নানা শঙ্কা নিয়ে তারা সেখানে বসবাস করছেন।
তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে সেখানে দু’টি ঘরে সমস্যা হয়েছে, আর কোন সমস্যা নেই। টুকিটাকি কোন সমস্যা থাকলে এক সপ্তাহ সময় দেন, সব ঠিক করে দেবো। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাশেদুর রহমান বলেন, ঘর দু’টি ভেঙে পড়ার বিষয়টি দুর্ঘটনা মাত্র। তাছাড়া পাশের একটি আশ্রয়ণের বৃষ্টির পানি ওই প্রকল্পের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ কারণেই ঘর দু’টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনার পরপরই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং সেগুলো দ্রæত মেরামতেরও ব্যবস্থা করেছি।
বগুড়া ব্যুরো জানায় : শেরপুরে বেশ কয়েকটি ঘর ভেঙে পড়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তড়িঘড়ি করে খালের কিনারায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। আবার ওই খাল থেকেই মাটি কেটে বাড়ির চারপাশে মাটি ভরাট করা হয়। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি খালে ধসে যাওয়ায় ঘরগুলোর এই হাল হয়েছে। মূলত আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা নির্ধারণে সংশ্লিষ্টদের অদূরদর্শীতার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় অতিদরিদ্র ভ‚মিহীনদের জন্য সরকারিভাবে আধা পাকা বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে মোতাবেক এই উপজেলায় ২ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পরবর্তীতে দুই শতক করে খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে অতিদরিদ্র ১৬৩টি ভ‚মিহীন পরিবারকে একটি করে আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়।
দুই কক্ষ, রান্না ঘর ও টয়লেটসহ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের প্রত্যেকটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এরই ধারাবাহিকতায় খানপুর ইউনিয়নের খানপুর বুড়িগাড়ি নামক স্থানে খালের কিনারায় আটত্রিশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যয়ে বাইশটি ভ‚মিহীন পরিবান পুনর্বাসনের জন্য বাইশটি আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে সুফলভোগীদের হাতে এসব বাড়ির জমির দলিল ও বাড়ির চাবি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু এসব নতুন বাড়িতে ওঠার আগেই ঘটছে নানা বিপত্তি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার খানপুর বুড়িগাড়ি এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত বাড়ির পেছন পাশের মাটি খালে ধসে পড়েছে। এতে করে সুবিধাভোগী হায়দার আলী, আব্দুল কাদের, বাদশা মিয়া, শেফালী বেগম, নদীয়ার চাঁদ, মোকছেদ আলী, সোনা উদ্দিন ও গোলাপী বেগমের ঘরগুলো ভেঙে পড়েছে। খালটিতে বাঁশের পাইলিং করে প্রকল্পের বাড়িগুলো রক্ষার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু বারবার মাটি ধসে খালে পড়ায় ভেঙে পড়া ঘরগুলো পুননির্মাণ কাজ করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় সুবিধাভোগী অতি দরিদ্র ভ‚মিহীনদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে কোনো সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ভেঙে পড়তে পারে। কারণ খালের ক‚ল ঘেষে এসব ঘর বানানো হয়েছে। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই একপাশের মাটি ধসে ঘরগুলো ভেঙে যাচ্ছে। তাছাড়া বাড়ি গুলোতে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। সেইসঙ্গে রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট। পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাইশটি পরিবারের জন্য মাত্র একটি নলক‚প চালু রয়েছে।
দুঃখ প্রকাশ করে একজন সুফলভোগি বলেন, আমাদের মতো ভ‚মিহীনদের একটি করে বাড়ি উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু নতুন বাড়িতে উঠতে পারছি না। বসবাস শুরুর আগেই তার বাড়ির একটি ঘর ছাড়া সবই ভেঙে পড়েছে। বাকি ঘরটির দেওয়ালেও ফাটল ধরেছে। এটিও যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। তাই এখন কী-করব তা ভেবে পাচ্ছি না।
স্থানীয় খানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম রাঞ্জু বলেন, খালের ধারে বাঁশের পাইলিং দেয়া হচ্ছে। যাতে করে মাটি ধসে যেতে না পারে। তাছাড়া ভেঙে পড়া কয়েকটি টয়লেট ও রান্না ঘর পুননির্মাণও করা হচ্ছে। তাই তেমন কোনো সমস্যা নেই। এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামছুন্নাহার শিউলী বেগম করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের দু’পাশের ঘরগুলো ঠিকই আছে। কিন্তু মাঝখানে মাটি ধসে যাওয়ায় চার-পাঁচটি ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এটা জানার পরপরই ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালককে জানানো হয়েছে এবং খালের ধারে গাইড ওয়াল ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো মেরামত করে দেয়ার কাজও চলছে ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।