Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢামেকেও হৃদয়বিদারক দৃশ্য

রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি ডিএনএ নমুনা দিতে হবে স্বজনদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ছয়দিন আগে তিনি যোগ দেন কম্পা রানী বর্মণ। গত বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ আগুনের পর তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মেয়েকে খুঁজতে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ছুটে এসেছেন বাবা পরভা চন্দ্র বর্মণ। ঘটনার দিন একই কারখানার দ্বিতীয় তলায় কাজ করছিলেন চম্পা খাতুন। তার মা মিনা খাতুন কাজ করছিলেন চতুর্থ তলায়। অগ্নিকান্ডের আগে চম্পা তার কাজে নিচে নেমে যান। মা তখন ছিলেন চতুর্থ তলায়। আগুন লাগার পর আর মায়ের দেখা পাননি চম্পা। তাই মায়ের খোঁজে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ছুটে এসেছেন তিনিও। অসুস্থ স্বামী কাজ করতে পারেন না এ কারণে সংসারের হাল ধরতে তিন মাস আগে এই কারখানাটিতে কাজ নেন ফিরোজা বেগম। কারখানাটিতে আগুন লাগার পর তিনিও নিখোঁজ। তাই স্ত্রীর সন্ধানে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ছুটে এসেছেন স্বামী মো. জাহিদ। পরভা চন্দ্র বর্মণ, চম্পা খাতুন, মো. জাহিদের মতো অনেকেই স্বজনদের খোঁজে ছুটে এসেছেন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। তাদের কারও মেয়ে, কারও মা, কারও ভাগ্নে, কারও আবার দূরসম্পর্কের আত্মীয় অগ্নিকান্ডের পর নিখোঁজ রয়েছেন। বর্তমানে স্বজনদের আহাজারিতে ঢাকা মেডিকেল মর্গ এলাকায় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। মেয়ে কম্পা রানীকে খুঁজতে আসা বাবা পরভা চন্দ্র বর্মণ বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জ। তার মেয়ে কয়েকদিন আগে নানির বাড়ি বেড়াতে নারায়ণগঞ্জ আসে। স্কুল বন্ধ তাই কিছু আয়ের আশায় ছয়দিন আগে কারখানাটিতে যোগ দেয় কম্পা রানী।

এখন কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর মেয়েকে আর খুঁজে পাচ্ছেন না পরভা চন্দ্র বর্মণ। মেয়ের কাজে যোগ দেয়া এবং নিখোঁজ হওয়ার বর্ণনা দিতে দিতেই হাউমাউ করে কান্নাকাটি জুরে দেন এই বাবা। এ সময় ঢাকা মেডিকেল মোড় এলাকায় এক হৃদয়বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। মায়ের খোঁজে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আশা চম্পা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রাত ৮টায় কারখানার কাজ শেষে মায়ের সঙ্গে বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিকেলে আগুনের পর আর মাকে খুঁজে পাচ্ছি না। পরে শুনলাম ঢাকা মেডিকেলে অনেকের লাশ এসেছে। ঢাকা মেডিকেলে এসেও মায়ের দেখা পাইনি। আমার মা কোথায় আছে, কেমন আছে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। চম্পার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের সদরে। স্ত্রীর খোঁজে আসা মো. জাহিদ বলেন, আমি আগে গার্মেন্টসে কাজ করতাম। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ছয় মাস ধরে বেকার আছি। আমি বেকার হয়ে যাওয়ায় তিনমাস আগে ছয় হাজার টাকা বেতনে আমার স্ত্রী কারখানাটিতে চাকরি নেন। ওভারটাইম দিয়ে মাসে আয় হতো ৯ হাজার টাকার মতো। তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার সকালে। কারখানাটির চারতলায় আমার স্ত্রী কাজ করত। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় দিকে সে অফিসে যায়। এরপর আর ফিরে আসেনি। আমার স্ত্রী এখন কোথায় কী অবস্থায় আছে কিছুই জানি না। আমাদের একটাই মেয়ে। সে ওর মায়ের জন্য কান্নাকাটি করছে।

এদিকে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় পুড়ে যাওয়া ৪৯টি লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নিয়ে আসা হয়েছে। লাশগুলো এমনভাবে পুড়ে গেছে যে পরিচয় শনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম বেপারী।

এদিকে, ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহতদের লাশ শনাক্তের জন্য স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে যেতে হবে। ঢাকা মেডিকেলের মর্গে সামনে অবস্থানকালে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম বেপারী বলেন, রূপগঞ্জের কারখানাটি থেকে ৫২টি লাশ উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। দগ্ধ লাশ দেখে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব নয়। ময়নাতদন্তের মাধ্যমে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ