ম্যাচ শুরুর আগে লেজার শো হয় রিও ডি জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে। পোড়ানো হয় আতশবাজি। মাঠে ছিল কিছু দর্শক। অসংখ্য ফাউলে বারবার খেই হারানো ম্যাচে প্রথম ভালো সুযোগটা পান নেইমার। ত্রয়োদশ মিনিটে রিশার্লিসনের পাস পেনাল্টি স্পটের কাছে পেয়ে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি তিনি। প্রতিপক্ষের পায়ে প্রতিহত হয়।
২১তম মিনিটে নিজেদের প্রথম ভালো সুযোগেই স্বাগতিকদের স্তব্ধ করে দেয় আর্জেন্টিনা। নিজেদের অর্ধ থেকে রদ্রিগো দে পলের পাস পেয়ে যান ডি মারিয়া। মাঝ পথে বল থামানোর সুযোগ ছিল রেনান লোদির, পারেননি তিনি। পিএসজি মিডফিল্ডার বল রিসিভ করে আগুয়ান গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে পাঠান জালে।
গত বিশ্বকাপের পর এই প্রথম আর্জেন্টিনার হয়ে গোল পেলেন ডি মারিয়া। শুধু তাই নয়, ২০০৫ কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালের পর এই প্রথম কোনো ফাইনালে গোল পেল দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
২৯তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বাঁকানো শট নেন ডি মারিয়া। এবার ব্লক করেন ব্রাজিল অধিনায়ক চিয়াগো সিলভা। চার মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মেসি। ৪৩তম মিনিটে রিশার্লিসনের ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি লুকাস পাকেতা। পরের মিনিটে নেইমারের কর্নারে রিশার্লিসনের হেডে দূরের পোস্টে পা ছোঁয়াতে পারেননি কেউ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আর্জেন্টিনাকে চেপে ধরে ব্রাজিল। ৫২তম মিনিটে বল জালে পাঠিয়েছিলেন রিশার্লিসন। কিন্তু তিনিই অফসাইডে থাকায় গোল পায়নি স্বাগতিকরা। দুই মিনিট পর প্রায় একই জায়গায় বল পান রিশার্লিসন। এবার তার শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস।
একের পর এক আক্রমণে আর্জেন্টিনার রক্ষণের পরীক্ষা নেয় ব্রাজিল। কিন্তু গোলরক্ষককে সেভাবে ভাবাতে পারেনি তারা। প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলে স্কালোনির দল। তারাও পারেনি এদেরসনের তেমন কোনো পরীক্ষা নিতে।
মেসি নিজের মতো করে আলো ছড়াতে পারেননি। শেষ দিকে সহজ একটা সুযোগও হারিয়েছেন সময়ের সেরা তারকা। আর্জেন্টিনার কৌশল মেনে বারবার রক্ষণেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু ভালো খেলতে না পারার আক্ষেপ মনে হয় না মেসিকে খুব একটা পোড়াবে। ক্যারিয়ারজুড়ে বয়ে চলা আক্ষেপ ঘোচার দিনে আর এসব কেন মনে রাখতে যাবেন মেসি!
আক্ষেপ তো একটাই ছিল মেসির - আর্জেন্টিনার জার্সিতে কিছু জিততে না পারা। এবারের কোপার আগে আলোকিত ক্যারিয়ারে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় চারবার ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু সবক’টিই তিক্ততায় ভরা। নেই কোনও আনন্দ-উচ্ছ্বাস।
২০১৪ সালে বিশ্বকাপে এই ব্রাজিলের মাঠে প্রথম ট্রফি ছোঁয়া দূরত্বে থেকে শূন্য হাতে বিদায় নিতে হয়েছিল মেসিকে, আর্জেন্টিনাকে। জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে মেসিরা পারেননি কোটি সমর্থকের মুখে হাসি ফোটাতে।
এই কোপা আমেরিকাতেই তিন তিনবার ফাইনালে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে মেসির। ২০০৭ সালে ভেনেজুয়েলার মাঠে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কাছে ৩-০ গোলে হারে সেই স্বপ্নে বড় ধাক্কা খেতে হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে টানা দুটি কোপার ফাইনালে উঠে আবারও সমর্থকদের চরম হতাশ করেন। দুইবারই চিলির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ।
সেই আক্ষেপ আজ ঘুচেছে। তা-ও ব্রাজিলের মাটিতে, ব্রাজিলের ফুটবলতীর্থ মারাকানায় নেইমারের ব্রাজিলকে হারিয়েই সেই আক্ষেপ ঘুচেছে আর্জেন্টিনার, মেসিরও।