পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের একটি মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না বলে গত বছরের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাঁর এই মহান ও মানবিক ঘোষণা বাস্তবায়নে মুজিববর্ষে প্রত্যেক গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে দুর্যোগ সহনীয় সেমিপাকা ঘর এবং দুই শতাংশ জমির মালিকানা দেয়ার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নেয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০ জন গৃহহীন ও ভূমিহীনকে দুই কক্ষের ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এসব ঘরের অনেকগুলোতে নির্মাণ ত্রুটি ধরা পড়েছে। ঘরের দেয়াল ও বারান্দার পিলারে ফাটল ধরেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি পড়ছে। টিনের ছাউনিতে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের কাঠ ও উপকরণ। এরকম ৩০০ ঘর চিহ্নিত হয়েছে। অনেকে বিনামূল্যে ঘর পায়নি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের টাকা দিয়ে ঘর পেতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে নানা ধরনের দুর্নীতি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ত্রুটিপূর্ণ ঘর চিহ্নিত করে তা সরকারি খরচে মেরামত বা পুনর্নিনির্মাণ করে দেয়া হবে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বৈঠকে বসেন প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সভায় ৫টি তদন্ত দল গঠন করে অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে পরিদর্শনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ত্রুটিপূর্ণ ঘরের জন্য দায়ী এবং দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের কাউকে ছাড়া দেয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
মুজিববর্ষে গৃহ ও ভূমিহীনদের প্রত্যেককে ঘর ও জমি দেয়ার উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মহৎ ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। অথচ দেশের মানুষের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ কিছু অসৎ ও দুর্নীতিবাজের জন্য প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে দিন-রাত নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, সেখানে একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে তার সেই পরিশ্রম ব্যর্থ করে দিচ্ছে। তাদের এই অপকর্ম প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ, চিন্তা-চেতনা প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। শুধু এই আশ্রয়ণ প্রকল্পই নয়, সরকারের চলমান নানা উন্নয়ন প্রকল্পেও অনিয়ম-দুর্নীতির খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারের সকল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ জনগণের অর্থে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে সরকারকে দায়িত্ব ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে প্রতিটি অর্থ খরচ করতে হয়। জনগণের প্রতিটি অর্থের মূল্য কত প্রধানমন্ত্রী তা জানেন। এ জন্য তিনি বরাবরই জনগণের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সচেতন ও সতর্ক থাকেন। কোনো প্রকল্পে যাতে কোনো ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম না হয়, এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে চলেছেন। সরকার প্রকল্প গ্রহণ, বাস্তবায়ন এবং অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা করে দেয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের। সরকার আশা করে, দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রতিটি প্রকল্প নিষ্ঠা, সততা ও দক্ষতার সাথে নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করবে। দেখা যাচ্ছে, এমন কোনো প্রকল্প নেই যাতে অনিয়ম ও ত্রুটি-বিচ্যুতি হচ্ছে না। সময় বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয় করতে হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও তাতে ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যাচ্ছে। নিম্নমানের হওয়ায় তা টেকসই হচ্ছে না। অল্প সময়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক সময় অপরিকল্পিতভাবে প্রকল্পের কাজ শুরু করার পর তা সংশোধনের মাধ্যমে নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। এতে প্রচুর অর্থের অপচয় হয়। প্রকল্পের এই অর্থের জোগান আসে জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে। দেখা যাচ্ছে, জনগণের অর্থ ব্যয়ে সরকারের দায়বদ্ধতা থাকলেও একশ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারি তা আমলে নিচ্ছে না। তারা তাদের স্বার্থে অর্থের অপচয়, অনিয়ম ও দুর্নীতি করে বেড়াচ্ছে। তাদের মধ্যে ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ প্রবণতা বিদ্যমান। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো প্রধানমন্ত্রীর একটি আন্তরিক ও অতি প্রয়োজনীয় উদ্যোগকেও তারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে ছাড়ছে না। যে প্রকল্পের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা ও প্রতিশ্রুতির বিষয়টি জড়িয়ে আছে, সেই প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি করতে কিভাবে সাহস পায়, সেটাই প্রশ্ন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে বেশ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বলা বাহুল্য, আমাদের দেশে তদন্ত কমিটি গঠন মানেই বিষয়টিকে ডিপ ফ্রিজে নিয়ে যাওয়া। শুরুতে তৎপরতা দেখা গেলেও দিন যাওয়ার সাথে সাথে তা থিতিয়ে পড়ে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়ম হওয়ার দায়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েক জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ওএসডি কোনো যথাযথ শাস্তি নয়। এ ধরনের পদক্ষেপ নামকাওয়াস্তে নেয়া হয়। এতে ক্ষতিপূরণ হয় না। বরং দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করা উচিৎ। যাদের কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জমি-জমা বিক্রি করে ক্ষতি পূরণ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর সরকারি অর্থে পুনরায় নির্মাণ করে দেয়া হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ অর্থ সরকার কোথা থেকে দেবে? সরকার যে অর্থ দেবে তা জনগণের। তাদের অর্থে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পুনরায় তাদেরই অর্থে মেরামত বা পুন:নির্মাণ করা হবে। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত তাদের অবশ্যই কঠোর ও উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। করোনাকালে যেখানে সরকার অসহায় দরিদ্রদের খাদ্যসহায়তার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে একশ্রেণীর অসৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারির অনিয়ম-দুর্নীতি এতটুকু বরদাশত করা যায় না। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত এবং অসততার মাধ্যমে মহতী প্রকল্প ব্যর্থ করে দেয়ার চক্রান্তে জড়িত, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।