Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় আধিপত্যবাদের গ্রাসে বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দেশের সব নদ-নদীতে পানিপ্রবাহ উদ্বেগজনক হারে কমে যাওয়ায় শুধু নাব্য সঙ্কট নয়, ছোট-বড় সব সেচ প্রকল্প এখন অচলাবস্থায় উপনীত হয়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় তিস্তা সেচ প্রকল্পে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকে, গত কয়েক বছরে তা অস্বাভাবিক হারে কমতে কমতে এখন সিঙ্গেল ডিজিটে পৌঁছেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রমতে, তিস্তা সেচ প্রকল্পে ২০১৩ সালে ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে পানি সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও পানির অভাবে সেচ সুবিধা দেয়া সম্ভব হয়েছে ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে। আর ২০১৪ সালে সেচের লক্ষ্যমাত্রা আগের বছরের চেয়ে অর্ধেকের বেশি কমিয়ে ২৮ হাজার হেক্টরে নামিয়ে আনা হলেও সেচ সুবিধা দেয়া সম্ভব হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৩২০ হেক্টরে। চলতি বছর যেখানে লক্ষ্যমাত্রাই ধরা হয়েছে মাত্র ৮ হাজার হেক্টর, সেখানে বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে দু-চার হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। একসময়ের উন্মত্ত তিস্তার বুকে এখন আদিগন্ত জুড়ে ধু-ধু বালুচর, কোথাও কোথাও কাদাপানি, হাঁটুপানি ক্ষীণরেখা নদীর অস্তিত্বের চিহ্ন বহন করছে। উজানের বাঁধ চুইয়ে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টের কাছাকাছি এখন মাত্র ২৪০ কিউসেক পানির প্রবাহ আছে বলে গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গেছে।
গঙ্গার পানিচুক্তির হিস্যা অনুসারে জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের সর্বনি¤œ ৩৫ হাজার কিউসেক পানি প্রাপ্য হলেও এ সময় সর্বনি¤œ হারের চেয়েও ১০ হাজার কিউসেক পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে চুক্তির ইন্ডিকেটিভ শিডিউল অনুসারে বাংলাদেশ পানি কম পেয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার কিউসেক। এভাবেই বছরের পর বছর অপ্রতুল পানিপ্রবাহের কারণে পলি জমে পদ্মার বেশিরভাগ এলাকা ভরাট ও পানিশূন্য হয়ে গেছে। অবশিষ্ট নৌপথটুকু কোনোমতে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। যৌথ নদীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন, নদী আইন এবং স্বাক্ষরিত চুক্তির শর্তসমূহ লঙ্ঘন করে দশকের পর দশক ধরে ভারত বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত রাখছে। ভারতীয় পানি আগ্রাসন, বাণিজ্য আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদী নীতির কারণে বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তা এখন চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের ২২ হাজার কিলোমিটার নৌপথ বিলীন হয়ে গেছে। পদ্মা, তিস্তা ও যমুনা অববাহিকার লাখ লাখ কৃষক পরিবার একটি অনিশ্চিত দুর্বিষহ জীবনের মুখোমুখি হলেও আমাদের সরকার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় অথবা তিস্তার জন্য একটি গ্রহণযোগ্য পানিচুক্তিতে পৌঁছতেই ব্যর্থ হচ্ছে। এমনকি ভারতের অনীহায় বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশকে যৌথ নদীর পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ বা ব্যাখ্যা ছাড়াই। একের পর এক নানা অজুহাত দেখিয়ে ৬ বছর ধরে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক থেকে বিরত থাকছে ভারত।
ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো ঘাটতি নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সর্বোচ্চ নিদর্শন পেয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশের সাথে ভারতের বর্তমান সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো এবং অনন্য উচ্চতায় রয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে ভারতের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার জয়েন্ট রিভার কমিশনের বৈঠকের জন্য আহ্বান, অনুরোধ জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে একদিকে গঙ্গার পানিচুক্তি মোতাবেক প্রাপ্য হিস্যা এবং বহু প্রত্যাশিত তিস্তার পানিচুক্তি কোনোটিরই সুষ্ঠু সমাধানের পথ খুলছে না। ভারতের এই সময়ক্ষেপণ ও টালবাহানার কারণে বাংলাদেশের নৌপথ, কৃষিব্যবস্থা ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। বাণিজ্য ও বৈদেশিক রেমিট্যান্স আয়ের ক্ষেত্রে যেখানে বাংলাদেশ ভারতের একটি বড় অংশীদার, সেখানে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ অনুকূল ব্যবসায়-বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা প্রত্যাশা করলেও ভারত উল্টোটাই করছে। এমনকি কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যেও নানাবিধ অযাচিত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে ভারত। নদ-নদীর পানির হিস্যা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৈষম্য ও ট্রেড ব্যারিয়ার, সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকা-, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশ ভারতীয় পক্ষের অনুকূল সাড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব বিষয়ে ভারতের শীতল প্রতিক্রিয়া, কথা দিয়ে কথা না রাখা, কিংবা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতার লঙ্ঘনকে ভারতীয়দের পক্ষ থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সমমর্যাদাভিত্তিক সম্পর্কের ব্যত্যয় হিসেবেই গণ্য করছে বাংলাদেশের মানুষ। যৌথ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যাসহ বাণিজ্য ঘাটতি ও সীমান্ত সমস্যা নিরসনে ভারতের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার প্রতিফলন দেখতে চায় বাংলাদেশ। এসব গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যা নিয়ে দেশের সরকার, সকল রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ জোরাল ভূমিকা পালন করতে হবে। এটাই জনগণের প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতীয় আধিপত্যবাদের গ্রাসে বাংলাদেশ
আরও পড়ুন