আলভারো মোরাতাই দলকে বাঁচালেন, আবার ডোবালেন তিনিই। তার গোলে ইতালির বিপক্ষে নির্ধারিত সময়ে হার এড়ায় স্পেন। তিনিই কি না টাইব্রেকারে করলেন গোল মিস! তাতে ইউরো থেকে টানা দ্বিতীয়বার ইতালির কাছে হেরে বিদায় নিতে হলো স্পেনকে। মঙ্গলবার লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে জিতে ফাইনালে জায়গা করে নিলো ইতালি।
টানা ৩৩ ম্যাচ অজেয় থেকে আগামী ১১ জুলাই এই মাঠেই ফাইনাল খেলবে ইতালি। ১৯৬৮ সালে প্রথম ইউরো জেতার পর ২০০০ ও ২০১২ সালে ফাইনালে উঠেও স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। এবার দ্বিতীয় শিরোপা জেতার অপেক্ষায় আজ্জুরিরা, তাদের প্রতিপক্ষ চূড়ান্ত হবে বুধবারের ইংল্যান্ড-ডেনমার্ক সেমিফাইনালের পর।
২০০৮ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল ও ২০১২ সালে ফাইনালে এই স্পেনের কাছে হেরেছিল ইতালি। তারাই ২০১৬ সালে শেষ ষোলোতে স্প্যানিশদের বিদায়ের পথ দেখায়। এবারও সেই ধারা ধরে রাখলো রবার্তো মানচিনির দল। ইউরোর ইতিহাসে টানা দুই ম্যাচে পাঁচ গোল করা স্পেন থামলো সেমিফাইনালে।
ইতালি শুরু থেকে যায় আক্রমণে। ৪ মিনিটে এমারসনের থ্রু বল ধরে নিকোলো বারেল্লার শট। তা আঘাত করে গোলপোস্টে। বল জালে জড়ালেও লাভ হতো না, কারণ অফসাইড ছিল।
স্পেনের প্রথম সুযোগ আসে ১৩ মিনিটে। পেদ্রির পাস থেকে ওয়ারজাবালের শট ওই যাত্রায় বিপদমুক্ত করেন বোনুচ্চি। দুই মিনিট পর ফেরানের লম্বা শট গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।
২১ মিনিটে গোলপোস্ট অরক্ষিত রেখে বলের দখল হারান স্পেন গোলকিপার উনাই সিমন। গোলমুখে শট নিতে যাওয়া বারেল্লাকে রুখে দেন সার্জিও বুশকেটস। চার মিনিট পর ওয়ারজাবালের বাড়ানো বল থেকে ওলমো স্পেনকে এগিয়ে নেওয়ার মুহূর্ত তৈরি করেন। প্রথমে তার শট বোনুচ্চি ব্লক করে দেন। পরে ফিরতি শট নেন ওলমো, তা ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকান ইতালি গোলকিপার দোনারুমা।
প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে ইনসিগনে ড্রিবল করে দুই স্প্যানিশ খেলোয়াড়কে কাটিয়ে পাস দেন এমারসনকে। ভালোই সুযোগ ছিল গোলের। কিন্তু এমারসনের আড়াআড়ি শট গোলবারে আঘাত করে। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য স্কোরে।
বিরতি থেকে ফিরে এসে ৫২ মিনিটে বুশকেটসের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। ম্যাচঘড়ির কাটা ঘণ্টাতে পড়তেই চমৎকার কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল করে ইতালি। ওয়ারজাবালের শট সেভ করেই বল মাঝমাঠে পাঠান দোনারুমা। লাপোর্তের ট্যাকলেও বল ধরে রাখে ইতালি, ইম্মোবিলের পাস থেকে বল নিয়ে বাঁকানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন চিয়েসা। ৬০ মিনিটে লিড নেয় আজ্জুরিরা।
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে দ্বিতীয় দল হিসেবে ইতালির পাঁচ জন (চিয়েসা, ইনসিগনে, ইম্মোবিল, লোকাতেল্লি ও পেসিনা) ভিন্ন খেলোয়াড় ২ বা তার বেশি গোল করলেন, যা সবশেষ ঘটেছিল ২০০০ সালে ফ্রান্সে।
৬৫ মিনিটে কোকের ভাসানো ক্রস দূরের পোস্টে পৌঁছায়। ওয়ারজাবাল সময়মতো পায়ে বল ছোঁয়াতে পারলে স্পেন সমতায় ফিরতো। তিন মিনিট পর বক্সের ডান দিক থেকে বেরার্দির নিচু শট পা দিয়ে আটকে দেন সিমন।
৮০ মিনিটে আজপিলিকুয়েতার ভুল পাসে গোল খেতে বসেছিল স্পেন। ইনসিগনে বল পায়ে পেয়েই বক্সের প্রান্তে পেসিনাকে বল পাঠান, কিন্তু তার শট সোজা চলে যায় সিমনের হাতে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে লাপোর্তের কাছ থেকে বল পেয়ে ওলমোর সঙ্গে ওয়ান-টু পাসে জায়গা খুঁজে বের করেন মোরাতা, তারপর বাঁ পায়ের নিচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। সমতায় ফেরে স্পেন। ৯০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে শেষ হলে ম্যাচের সময় আরও ৩০ মিনিট বাড়ানো হয়।
অতিরিক্ত সময়ে ইতালি গোলের দেখা পেয়েছিল বেরার্দির সৌজন্যে। কিন্তু গোল করার আগে বল পায়ে নেওয়ার সময় অফসাইডে ছিলেন তিনি। তাতে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে, যেখানে ছিল টান টান উত্তেজনা।
ইতালি ও স্পেন প্রথম শটে গোল করতে ব্যর্থ হয়। লোকাতেল্লি ও ওলমো জাল খুঁজে পাননি। পরের দুটি শট থেকে দুই দল গোল করে। বেলোত্তি ও বোনুচ্চি ইতালির পক্ষে আর মোরেনো ও থিয়াগো আলকান্তারা স্পেনের হয়ে জাল কাঁপান। ছন্দপতন হয় চতুর্থ শটে। বের্নার্দেশচি ইতালির স্কোর ৪-২ করেন, কিন্তু মোরাতার দুর্বল শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে ফেরান দোনারুমা। পঞ্চম শটে জর্জিনহো লক্ষ্যভেদ করে ইতালিকে ফাইনালের তোলেন।