Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেগাপ্রকল্পের অর্থে টিকা কেনার পরামর্শ বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন করোনা প্রতিরোধে মেগা প্রকল্পসমূহের বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে অতিদ্রুত সরকারকে টিকা কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ সংকটকে জাতীয় পর্যায় এক নাম্বার সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। টিকা কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ অন্যখাত থেকে বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোর বরাদ্ধকৃত অর্থ ডাইভার্ট করে টিকা কেনা অতি জরুরী। পৃথিবীর বিভিন্ন যে সোর্স আছে সেগুলো থেকে অতিশিগগরিই এক লাখ, দুই লাখ, পাঁচ লাখ নয়, কোটি কোটি টিকা আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে করোনা ৪/৬ মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

গতকাল সোমবার করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরতে গিয়ে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ‘করোনার ভাকসিন সংগ্রহ-বিতরণ-পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কমিটি’র আহবায়ক সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারের প্রতি এই দাবি জানান।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, টিকা ক্রয় আমরা বিরোধী দল করতে পারবো না, এটা সরকারকেই করতে হবে। যদি সরকার না পারে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। সেই দায়-দায়িত্ব গ্রহন করে সরকারকে প্রয়োজনে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা পারবে তারা এদেশের জনগণকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসবে।
সাবেক মন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, করোনা নিয়ে সরকারের খামখেয়ালী, দুর্নীতি ও যে ব্যর্থতার কারণে প্রত্যেকদিন মানুষ জীবন দিচ্ছে। প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। টিকা নিয়ে সরকারের লুকোচুরি ও ব্যর্থতা জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে।

টিকা কূটনীতিতে সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে অভিযোগ করে ড. মোশাররফ বলেন, বিশ্বের যেসব দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ হয়েছে সেখানে প্রায় ৭০/৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে সরকারের টিকা কূটনীতিতে চরম ব্যর্থতা, টিকা ক্রয়ে অনিয়ম, লোভ ও হঠকারিতার কারণে দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন মাত্র ৪২ লাখ ৮১ হাজার ৭৭৬ জন। গত ৬ মাসে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের জন্য চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু সেরাম ২ দফায় ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবারহের পর বন্ধ করে দেয়ায় অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকারের দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তা পড়েছেন ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। ফাইজার ও সিনোফার্মের টিকার প্রসঙ্গ টেনে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, সিনোফার্মের ২০ লাখ ও মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকাসহ এই পর্যন্ত সব মিলিয়ে দেশে টিকা এসেছে ১ কোটি ৫৯ লাখ ডোজের বেশি। বর্তমানে দেশে মাত্র ৫৯ লাখ ডোজের বেশি টিকা মজুদ আছে। অদুর ভবিষ্যতে টিকা সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। ১৮ কোটি মানুষের দেশে এসব টিকা কত অপ্রতুল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যত টিকা লাগে কেনা হবে। কিন্তু কোথা থেকে ক্রয় করা হবে, কবে নাগাদ ক্রয় করা হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখেন নাই।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ডব্লিউএইচও ডিজির রিকমন্ডেশন মিনিমাম শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করতে হবে। এটা করলে ইউমুনিটি অর্জন, অর্থনীতিকে সচল রাখা সম্ভব হবে। ৭০ ভাগ অর্থ্যাৎ সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে যদি ভ্যাকসিনেটেড করতে হয় তাহলে মিনিমাম ২৫ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ দরকার।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য প্রফেসর ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, আজকে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো কি দুরাবস্থা? ৩৬টা জেলায় আইসিইউ বেড নাই। সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বলেন, রাজশাহীসহ প্রত্যেক জায়গায় হাসপাতালের চরম দুরাবস্থা। বগুড়ায় ১২ ঘন্টায় ৭ জন রোগী মারা গেছেন অক্সিজেনের অভাবে, ঠিক একই ভাবে মারা গেছে সাতক্ষীরায়। এটাই হচ্ছে প্রকৃত চিত্র। এরজন্য সম্পূর্ণ দায়ী সরকারি অব্যবস্থাপনা।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর হারুন আল রশিদ বলেন, বাংলাদেশে চীনের কোম্পানি সিনোভ্যাক টিকার ট্রায়াল করার জন্য অনুমতি চেয়েছিলো। আইসিডিডিআরবির সাথে সমস্ত কিছু সম্পন্ন হয়েও গিয়েছিলো। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশ সরে গিয়েছে। সেই টিকা ট্রায়াল করলে বিনামূল্যে অথবা কমমূল্যে পেতাম। এখন সেটা কিনছি ১৫ ডলারে। যা অক্সেফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার চেয়ে ১০ ডলার বেশি। যদি ৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনেন ৫০ কোটি ডলার এক্সট্রা টাকা লাগছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যত টাকা লাগে দেবো। এটা কার টাকা? এটা তো জনগণের টাকা। এভাবে জনগণের টাকার যে অপচয় তার জন্য কে জবাবদিহি করবে?
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম এবং ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক আবদুস সালামও বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ