প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় মাধ্যম বলে পরিচিত চলচ্চিত্র শিল্প ভালোমানের সিনেমার অভাবে দর্শকশূন্যতায় ভুগছে। গত এক দশকে ১৩শ’ সিনেমা হল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে, এরমধ্যে ১৩৫টি হল অস্থিত্ব নিয়ে টিকে আছে কেবল হল মালিকদের পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে। সর্বশেষ অন্তত ২০টি হল স্থায়ীভাবে বন্ধ হবার আশংকা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে পুরোপুরি প্রস্তুত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অন্তত ১০টি মাল্টিপ্লেক্স মানসম্মত সিনেমার অভাবে চালু করা যাচ্ছে না। সরকার ঘোষিত ঋণ তহবিলে দেখা দিয়েছে পারস্পরিক আস্থার সংকট। সবদিক বিবেচনায় দ্রুত সহজ শর্তে ঋণ তহবিলের ছাড়, অন্তত ১২টি বিদেশি বাণিজ্যিক ক্যাটাগরির সিনেমা আমদানি এবং যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা সহজকরণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, সিনেমা হলের সংকট কাটাতে গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক হাজার কোটি টাকা স্বল্পসুদে ঋণের বন্দোবস্ত করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। এ নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে তোরজোরও শুরু হয়। তিনি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে প্রদর্শক সমিতির সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেন। এর পাশাপাশি তথ্যমন্ত্রী সিনেমা আমদানির ব্যাপারে প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পী সমিতির সঙ্গে বসে যৌথ উদ্যোগের ওপর তাগিদ দেন। এ অবস্থায় প্রদর্শক সমিতি প্রযোজক ও পরিচালকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে সিনেমা আমদানির বিষয় নীতিগতভাবে একমত হন। তবে গত ছয় মাসেও আমদানি নীতির সুফল পায়নি হল মালিকরা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ঋণ এবং আমদানী সিনেমার ব্যাপারে হল মালিকদের হতাশা নিয়ে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, সব সময় বলে আসছি কেবল টাকা দিয়ে হল নতুন করে বানালেও হবে না। বাড়ি বানালে তার ভাড়ার বন্দোবস্তও করতে হবে। তা নাহলে সে বাড়ির মূল্য নেই। অর্থাৎ ভালোমানের কিছু বাণিজ্যিক সিনেমাও আমদানি করতে হবে। আমাদেরকে মাসের পর মাস ভর্তুকি দিয়ে হল চালাতে হচ্ছে। এই করোনাকালেও বিদ্যুৎ বিল মওকুফ নেই। এখন দুটো চ্যালেঞ্জ এক সঙ্গে দেখা দিয়েছে প্রথমত দর্শক ধরে রাখা, দ্বিতীয়ত হল বাঁচানো। এ অবস্থায় ঋণ ছাড়ে উদার না হলে হল মালিকরা আগ্রহ দেখাবে না। পাশাপাশি ভালো মানের সিনেমা আমদানি করা প্রয়োজন। জরুরিভিত্তিতে আমদানিকৃত সিনেমা হল বাঁচানোর উপায় হতে পারে। তিনি বলেন, আমরা সবসময়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর আন্তরিকতায় কৃতজ্ঞ। তাদের আশ^াসে অনেক বন্ধ সিনেমা হল মালিকরাও নতুন করে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ঘোষিত ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোর এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। তাই সরকারকে অনুরোধ করব ব্যাংক এবং সিনেমা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ডেকে তাদের কষ্টের কথাগুলো শুনতে। লায়ন সিনেমাসের কর্ণধার (অধুনালুপ্ত লায়ন সিনেমা হল) মির্জা আব্দুল খালেক এবং বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্সের কর্ণধার রোকুনজ্জামান ইউনূস রুবেলের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, বহু টাকা খরচ করে প্রায় দুই বছর হলো অত্যাধুনিক মাল্টিপ্লেক্স করেছি, দেশী মানসম্পন্ন এবং বিদেশী উচ্চ মানসম্পন্ন সিনেমা প্রদর্শনের জন্য। মাঝে আমদানির মাধ্যমে কিছু সিনেমা আসছে বলে শুনেছি, কিন্তু অগ্রগতি দেখছি না। এ অবস্থায় সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্স বাঁচবে না। আমরা মনে করি, সুষ্ঠু নীতিমালার মধ্য দিয়ে বিদেশি সিনেমা উন্মুক্ত করে প্রতিযোগিতায় আসতে হবে। পাশাপাশি ঋণের তহবিলে ব্যাপারে জুড়ে দেওয়া শর্তগুলো আরও সহনীয় করা ছাড়া কেউ ঋণ নিতে আগ্রহী হবে না বলে আমরা মনে করি। তাদের এমন মন্তব্যে একমত পোষণ করে মুন্সীগঞ্জের ‘পান্না’ হলের কর্ণধার আজগর জানিয়েছেন, যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা সহজ থাকলেও বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনার সিনেমা এখন কঠিন নিয়মের বেড়াজালে আটকে বন্ধ হয়ে রয়েছে। ভাবছি হল ভেঙে মার্কেট তৈরি করব। সমসাময়িক নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম ব্যস্ত নির্মাতা অপূর্ব রানা, মুস্তাফিজুর রহমান মানিক, শাহ আলম মন্ডল, শফিক হাসান, শামীমুল ইসলাম শামীম। তারা বলছেন, সময় হয়েছে বিশ্বায়নকে স্বীকার করে চলচ্চিত্র এগিয়ে নেওয়ার। দর্শক চাইলেই যেকোনো প্ল্যাটফর্মে গিয়ে বিদেশি ভালোমানের সিনেমা দেখতে পারছে, তা আমরা ঠেকাতে পারছি না। তাই ভারতীয় কেন সবদেশের সিনেমা আমদানি হোক। আমাদের সিনেমাগুলো বাইরে যাক। বিদেশি সিনেমা আসলে আমাদের মধ্যেও এক ধরনের প্রতিযোগিতার মানসিকতা গড়ে উঠবে। এদের মধ্যে যারা মেধাবী তারাই টিকবে। এতে আমাদের ভিত্তি আরও মজবুত হবে বলে মনে করি। বিদেশি সিনেমা আমদানি প্রশ্নে তরুন প্রজন্মের ভাবনাকে সাহসী এবং ইতিবাচক উল্লখ করেছেন বিশিষ্ট পরিচালক এফ আই মানিক। দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রবীন এবং ব্যবসাসফল সিনেমার পরিচালক আজিজুর রহমান বিরক্তি নিয়ে বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই সিনেমা আদান-প্রদান হচ্ছে। ভারত বা পাকিস্তানের মধ্যে আমদানি হচ্ছে। বাংলাদেশেই কেবল ব্যতিক্রম। এরমধ্যে দেখছি স্বল্প বাজেটে যাচ্ছেতাই সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে হলে গিয়ে কি দর্শক এসব সিনেমা দেখবে? তাই সরকারের হল বাঁচানোর যে প্রচেষ্টা সেটার পাশাপাশি বিদেশি সিনেমা আমদানি এবং যৌথ প্রযোজনার সিনেমার ব্যাপারে উদারনীতির বিকল্প দেখছি না। পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, মৌখিকভাবে সিনেমা আমদানির ব্যাপারে আমাদের আগের কমিটি ইতিবাচক ছিল। একইভাবে আমরাও চাই এই মুহুর্তে সিনেমা হল বাঁচাতে কিছু ভালো মানের বিদেশি সিনেমা আসুক। এজন্য আমরা প্রধান চারটি সংগঠনের সঙ্গে আবারও বসব। আশা করছি, শিগগিরই যৌথভাবে ইতিবাচক একটা সংবাদ সবাইকে জানাতে পারব। চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য অভিনেত্রী-নির্মাতা অরুণা বিশ্বাস বলেন, ‘বিদেশি সিনেমা আসলে সব শেষ হয়ে যাবে, এ কথা যারা বলেন তারা দুর্বল। আত্মবিশ^াসের অভাবেই তারা বিদেশি সিনেমার বিরোধিতা করছেন। আমি বলি সিমো হল বাঁচাতে এ মুহুর্তে বিদেশি সিনেমা অক্সিজেনের মতো কাজ করবে। পাশাপাশি আমাদের এ প্রজন্মের মেধাকে শানিত করবে। অপরদিকে শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, আমি শিল্পী। আমার কাজ অভিনয় করা। কোন সিনেমা আসবে, কোন সিনেমা যাবে এ ভাবনা আমার নয়। তারপরও যদি সকল সমিতি শিল্পী সমিতিকে ডাকে তাহলে আমরা একসঙ্গে বসব। আনুষ্ঠানিকভাবে শিল্পী সমিতির অবস্থান ব্যাখ্যা করব। বিদেশি সিনেমা আমদানি প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় চেয়ারম্যান তামান্না হক নিপা বলেন, ‘বিশ্বায়নের যুগে বিশ্ব চলচ্চিত্র স্বীকার না করে আমরা পলায়নপর নীতি গ্রহণ করে বসে আছি। এটা হাস্যকর। আমাদের ভালো টেকনিশিয়ানসের অভাব, শিল্পী নেই বললেই চলে। তাহলে কার ছবি দেখতে আমি টিকিট কেটে হলে ঢুকবো? এ অবস্থা উত্তরণে সিনেমা আমদানি করে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি করা যায়। এতে সরকার বরং রাজস্ব পাবে, কর্মস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত বা পাকিস্তান কিন্তু সে পথে অনেক আগেই। কেন আমরা সে পথে যাই না কার স্বার্থ রক্ষায় সময় নষ্ট করছি তা বোধগম্য নয়। এতে করে দর্শকরুচি নষ্ট হচ্ছে, এটা কী আমাদের নীতিনির্ধারকেরা ভেবে দেখেছেন?’ এদিকে সিনেমা হলের ঋণ পাওয়ার জটিলতা নিয়ে প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, মালিকরা ঋণ নিতে গেলে তাদের প্রথম বক্তব্য ‘আপনাদের হল কী আগের মতো চলে। ঋণ শোধ করবেন কিভাবে?’ সত্যি বলতে ব্যাংকের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারতাম যদি সিনেমা আমদানির ব্যাপারে সরকার ছাড় দিত। এতে সিনেমা হল চলত, ব্যাংকও আস্থাশীল হতো। প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘সরকার সবসময় সিনেমার প্রতি ইতিবাচক আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। আশা করছি, ঋণ তহবিল ঘিরে প্রশ্ন এবং বিদেশি সিনেমা আমদানি দুটো বিষয় সমান গুরুত্ব দিয়ে তারা দেখবে। আমরা আর টিকে থাকতে পারছি না, এ সত্যটা মেনে দ্রুত কিছু করা উচিৎ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।